পড়াশোনার চাপে শরীরচর্চার সুযোগ পাচ্ছে না শিশুরা
৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:৫৬
ঢাকা: শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনার চাপে শারীরিক অনুশীলন বা শরীরচর্চার সুযোগ পাচ্ছে না শিশুরা। পাশাপাশি স্মার্টফোন, ট্যাব ও বিভিন্ন গেমিং ডিভাইসের দিকে অতিমাত্রায় ঝুঁকে পড়ার কারণেও মাঠের খেলাধূলায় আগ্রহ হারাচ্ছে তারা। এর ফলে শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) একটি প্রতিবেদনে।
১৪৬টি দেশের শিশুদের ওপর করা ওই গবেষণা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশু-কিশোরদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনই যথেষ্ঠ শারীরিক অনুশীলন করে না। এছাড়া মাত্র চারটি দেশ ছাড়া বাকি দেশগুলোর মেয়ে শিশুর চেয়ে ছেলে শিশুরা বেশি সক্রিয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই গবেষণা প্রতিবেদক লিয়ানে রাইলি জানিয়েছেন, ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের প্রচুর পরিমাণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার চাপ থাকে। বছরজুড়ে বিভিন্ন রকমের পরীক্ষা চলাকালীন তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। সেই সময়টাতে দেখা যায় তারা শারীরিক অনুশীলন করার সুযোগই পায় না।
রাইলি আরও জানিয়েছেন, শিশুদের শারীরিক অনুশীলন বিমুখতার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার চাপের পরেই যে কারণটি দেখা যায় তা হলো নিরাপদভাবে খেলা এবং অবসর সময় কাটানোর ভালেঅ ব্যবস্থা না থাকা। এর উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, অনেক দেশে রাস্তাঘাট ভালো ও নিরাপদ না হওয়ায় হেঁটে স্কুলে বা বন্ধু-বান্ধবের বাসায় যেতে পারে না। আবার সাইকেল চালানো সম্ভব হয় না, এমন রাস্তাও আছে।
এছাড়া স্মার্টফোন, ট্যাব ও বিভিন্ন গেমিং ডিভাইসসহ কম্পিউটারের দিকে ঝুঁকে পড়াতে শিশুদের দৌড়ঝাঁপ করে খেলার প্রবণতা কমে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন প্রতিবেদনের লেখক লিয়ানে রাইলি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শরীর চর্চার ক্ষেত্রে সাইকেল চালানো, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, জিমন্যাস্টিক ও ফুটবল খেলাসহ নানা ধরনের আউটডোর গেইমসকে বিবেচনা করা হয়। যার ফলে শরীরে হৃদস্পন্দন দ্রুত হয় এবং দেহ যথেষ্ট অক্সিজেন পেতে পারে। কিন্তু দেখা গেছে প্রতিদিন মাত্র ৬০ মিনিট সময় ধরে ব্যায়ামও করতে পারছে না বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিশুরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. ফিওনা বুল বলেন, দৈনিক ৬০ মিনিট শারীরিক অনুশীলন অসম্ভব কোনো লক্ষ্য বলে মনে করি না। অন্তত এই সময়টুকু যদি অনুশীলন করা যায় তবে শারীর ও মনের উন্নয়ন হয়। মাঝারি ও কঠিন ব্যায়ামের পার্থক্য হচ্ছে, মাঝারি ব্যায়ামের সময় অন্য কাজ কিংবা কথা চালানো যায়, কিন্তু কঠিন ব্যায়ামের সময় তা সম্ভব না।
এছাড়া মাঝারি মানের ব্যায়াম ও কঠিন ব্যায়ামের প্রার্থক্য বোঝাতে গিয়ে তিনি বলেন, অন্য কাজ কিংবা কথা বলার সময় যে অনুশীলন করা যায় তাকে মাঝারি মানের ব্যায়াম বলা হয় যা কঠিন ব্যায়ামের ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।
গবেষকরা বলছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় নিয়ে যদি শারীরিক অনুশীলন না করা হয় তবে শিশুদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে নানা সমস্যায় পড়ার ঝুঁকি থাকে। এর মধ্যে স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন ঝুঁকির পরিমাণও বেড়ে যেতে থাকে। কিশোর বয়সে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকলে তা পরবর্তী জীবনে সুস্বাস্থ্য গঠনে সহায়ক হয়। সক্রিয় বলতে, সুস্থ হৃৎপিণ্ড-ফুসফুস, শক্ত হাড় ও পেশি এবং উন্নত মানসিক স্বাস্থ্যকে বোঝায়। শুধু শারীরিক বিকাশই নয় মস্তিষ্কের বিকাশের ক্ষেত্রেও অনুশীলনের ভূমিকা আছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. রেজিনা গুথোল্ড বলেন, অল্প বয়সে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা শিশুদের শেখার ক্ষমতা, সামাজিক দক্ষতা অর্জন অন্যান্যদের তুলনায় ভাল হয়। কিশোর বয়সে সক্রিয় থাকলে তারা প্রাপ্তবয়সেও সক্রিয় থাকার সম্ভাবনা বেশি। পরবর্তী জীবনে তাদের হৃদরোগ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসসহ বহু রোগের ঝুঁকি কমবে।