ডিসেম্বরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না কোনো বীমা কোম্পানি
১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:০১
ঢাকা: অর্থমন্ত্রী নির্দেশনা দিলেও ডিসেম্বর মাসে কোনো বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না। গত আড়াই মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে কোনো বীমা কোম্পানি আবেদনও করেনি।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা ২৭টি বীমা কোম্পানিকে তিন মাসের মধ্যে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২৭টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সদস্য গকুল চাঁদ দাস সোমবার (৯ ডিসেম্বর) তার কার্যালয়ে সারাবাংলাকে বলেন, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা পাওয়ার পরে ১৬ সেপ্টেম্বর আইডিআরএ‘র থেকে ২৭টি বীমা কোম্পানিকে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর ২৮ অক্টোবর কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে আমরা বৈঠকও করেছি। আগামী ১৭ ডিসেম্বর ফের আইডিআরএ’র কার্যালয়ে তাদের বৈঠকের জন্য ডাকা হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ২৭টি বীমা কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বিষয়ে বড় কোনো অগ্রগতি নেই। চলতি মাসের মধ্যে এসব কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করা সম্ভব না। তবে আমরা চেষ্টা করছি অন্তত যেন প্রক্রিয়াটা শুরু করা যায়।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সাইফুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করলেই অনুমোদন পাবে— বিষয়টা এমন নয়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হলে কোম্পানিগুলোকে পাবলিক রুল ইস্যু পরিপালন করে আসতে হবে। তাছাড়া তালিকাভুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে আইডিআরএ‘র একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, অর্থমন্ত্রী ২৭টি বীমা কোম্পানিকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই ২৭টির মধ্যে দু’তিনটি ছাড়া বাকি কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এর মধ্যে একটি বড় কারণ হলো লাভজনক প্রতিষ্ঠান না হলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া যায় না।
সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়া পর কোনো বীমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে (আইপিও) আবেদনই করেনি। যে তিনটি আবেদন বিএসইসি‘র হাতে রয়েছে, সেই কোম্পানিগুলো অর্থমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার আগেই আবেদন করেছিল। এর মধ্য সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ১৯ কোটি টাকার আইপিও’র অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে। অন্যদিকে এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স গত ৮ আগস্ট ও ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স ২৭ আগস্ট আইপিও’র জন্য আবেদন করে।
দেশে মোট বীমা কোম্পানি
রাষ্ট্রায়ত্ব জীবন বীমা করপোরেশন, সাধারণ বীমা করপোরেশন এবং দুটি বিদেশি কোম্পানিসহ দেশে মোট ৭৮টি বীমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি জীবন বীমা, ৪৬টি সাধারণ বীমা এবং দুটি বিদেশি বীমা কোম্পানি। বিদেশি বীমা কোম্পানি দু’টি হলো আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি মেটলাইফ এবং লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন অব বাংলাদেশ।
পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত বীমা কোম্পানি
বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ৪৭টি বীমা কোম্পানি। বাকি ২৭টি কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি জীবন বীমা কোম্পানি এবং ৯টি সাধারণ বীমা কোম্পানি। বাকি চারটি কোম্পানির মধ্যে দুটি রাষ্ট্রায়ত্ব, একটি বিদেশি মেটলাইফ ও বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ কোম্পানি। এই চারটি কোম্পানির পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে আইনি জটিলতা রয়েছে।
পুঁজিবাজারের বাইরের কোম্পানিগুলো হলো— জীবন বীমা কোম্পানি বায়রা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ, বেস্ট লাইফ, চার্টার্ড লাইফ, এনআরবি গ্লোবাল লাইফ, প্রোটেকটিভ ইসলামি লাইফ, সোনালী লাইফ, জেনিথ ইসলামি লাইফ, আলফা ইসলামি লাইফ, ডায়মন্ড লাইফ, গার্ডিয়ান লাইফ, যমুনা লাইফ, মার্কেন্টাইল ইসলামি লাইফ, স্বদেশ লাইফ, ট্রাস্ট ইসলামি লাইফ, এলআইসি বাংলাদেশ।
সাধারণ বীমা কোম্পানি— ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্স, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স, সাউথ এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, ইসলামি কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, দেশ জেনরেল ইন্স্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স, সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স ও সিকদার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
বীমা আইন অনুযায়ী কোনো কোম্পানি নিবন্ধিত হওয়ার তিন বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসতে না পারলে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে আরও দুই বছর সময় নিতে পারে। এরপরেও তালিকাভুক্ত না হলে, প্রতিদিনের জন্য জরিমানা দিতে হবে। ২০১০ সাল পর্যন্ত জরিমানার পরিমাণ ছিল প্রতিদিন এক হাজার টাকা। ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা করা হয়।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মতবিনিময়কালে অর্থমন্ত্রী আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২৭ বীমা কোম্পানিকে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেন।