আমরা এই মুহূর্তে সংঘাতে জড়াতে চাই না: মির্জা ফখরুল
১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:১৬
ঢাকা: ‘অনুমতিহীন অবস্থায় র্যালির চেষ্টা করলেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’— পুলিশের এমন বক্তব্যের পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে কোনো সংঘাতে জড়াতে চাই না।’
যদিও সম্প্রতি নয়াপল্টনে আয়োজিত এক সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব বলেছিলেন- ‘এরপর আমরা আর অনুমতির অপেক্ষায় থাকব না। আমরা আমাদের মতো করে কর্মূসূচি পালন করব।’ এই বক্তব্যের রেশ না কাটতেই মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে র্যালি করতে চেয়েও অনুমতি পায়নি বিএনপি। এদিন সকাল ১০টায় র্যালি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এর আগেই কয়েক শ’ পুলিশ সদস্য নয়াপল্টন কারযালয়ের সামনে অবস্থান নেন।
পুলিশের এই বিপুল উপস্থিতি সম্পর্কে মতিঝিল জোনের এডিসি এনামুল হক মিঠু সাংবাদিকদের বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে তারা (বিএনপি) র্যালির জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু তাদের অনুমতি দেওয়া হয়নি। কারণ, ওয়ার্কিং ডে-তে এমনি ঢাকা শহরে তীব্র যানজট থাকে। তারপর আবার মেট্টোরেলসহ বিভিন্ন করাণে অলরেডি যানজট লেগেই আছে। আমরা খবর নিয়ে দেখেছি আজ যানজটের মাত্রা অত্যধিক বেশি। এই প্রেক্ষিতে আগে থেকেই তাদের জানানো হয়েছে আজ কোনো অনুমতি দেওয়া হবে না।’
‘এরপরও যদি তারা র্যালি করতে চায়, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’— বলেন এনামুল হক মিঠু। তার এই বক্তব্যের পর পরই নয়াপল্টন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ফখরুল বলেন, ‘আপনারা নিজেরাই দেখেছেন যে, বিএনপির অফিসের সামনে কী রকম একটা যুদ্ধাবস্থা করে রেখেছে পুলিশ। আমরা জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে এখান থেকে একটি র্যালি করার ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমরা সেইভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। আমাদের বলা হয়েছে- নিচে নামলেই আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
বিএনপি অফিসের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ
‘আমরা এই মুহূর্তে কোনো সংঘাতে জড়াতে চাই না’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের অধিকারগুলোর কথা বলছি। আপনারা দেখেছেন যে, বিভিন্ন জায়গায় সভা করতে গেলে আমাদের অনুমতি নিতে হয়, সভা করতে দেওয়া হয় না। এমনকি আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম করতে গেলেও বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু আজকের বিষয়টি তো দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি বিষয়। সেই মানবাধিকারকে রক্ষা করবার জন্য, সোচ্চার হওয়ার জন্য আজকের এই দিনটি পালন করা হয়।’
বাংলাদেশে প্রতি মুহূর্তে মানবাধিকার লংঘন হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘গত দশ বছরে প্রায় দেড় হাজারের ওপরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। এটা ওরা নাম দিয়েছে বন্দুক যুদ্ধে। আমাদের হিসাবমতে এটা প্রায় ২ হাজারের ওপরে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শুধু রাজনৈতিক ভিন্নমত থাকার কারণে ৩৫ লাখ লোকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। গুম হয়ে গেছে প্রায় ১ হাজার লোক। আজকে সমগ্র বাংলাদেশে মানবাধিকার বিষয়টি সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাাঁড়িয়েছে। এখানে ভিন্ন মত যিনিই পোষণ করবেন, তারই অধিকার ক্ষুন্ন করা হয়, গ্রেফতার করা হয়, গুম করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের মানবাধিকার লংঘন-গণহত্যা নিয়ে বাংলাদেশের সরকার স্বোচ্চার হয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বসংস্থায় বা আন্তর্জাতিক আদালতে কোনো তৎপরতা দেখাতে পারে নি। জাম্বিয়া সেখানে মামলা করেছে, বাংলাদেশ সরকারের কোনো ভূমিকা নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।