‘বাবা বিচারটা দেখে যেতে পারলেন না’
১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৪:৫৮
ঢাকা: দাদার হত্যাকাণ্ডের (অভিজিৎ রায়) রায় যদি বাবা দেখে যেতে পারতেন তবে হয়তো বা কিছুটা সান্ত্বনা নিয়ে মারা যেতেন বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক অজয় রায়ের ছোট ছেলে অনুজিৎ রায়। তিনি বলেন, ‘মামলাটি চলছে প্রায় চার বছর হতে চললো। এই সময়ে বাবার শারীরিক অসুস্থতা আরও বেড়েছিল।’
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বাবা অধ্যাপক অজয় রায়ের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষ তিনি সারাবাংলাকে এসব কথা বলেন।
অনুজিৎ বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করবো না, তবে যেকোনো মামলার তো নিজস্ব একটা গতি থাকে। হয়তো বা সেজন্য ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে। এগুলো নিয়ে বাবা তেমনটা আক্ষেপ যদিও করতেন না। সব কিছু মিলিয়ে বলতেই হয় যে, বাবা বিচারটা দেখে যেতে পারলেন না। এক অপূর্ণতা নিয়েই তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন।’
‘বাবা চাইতেন বাংলাদেশ যেনো হয়ে ওঠে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল রাষ্ট্র। মুক্তচিন্তার লেখকদের জন্য গণতান্ত্রিক একটি দেশ হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। এই দেশের স্বাধীনতার জন্যেই বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। দেশকে স্বাধীন করেছিলেন যাতে সব ধরনের ধর্মান্ধতা, অন্ধবিশ্বাস দূর করে এ দেশের মানুষ প্রগতিশীল একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা পায়। তিনি সেই স্বপ্নই দেখতেন’, যোগ করেন অনুজিৎ।
অজয় রায়ের শেষ দিনগুলির বিষয়ে ছোট ছেলে বলেন, ‘বাবা শেষ দিনগুলো তো হাসপাতালেই কাটিয়েছেন। তার আগে তিনি বাসায় ছিলেন। লেখালেখি করতেন মা যতদিন বেঁচে ছিলেন। মা অনেক অসুস্থ ছিল। মাকে নিয়েই বেশি চিন্তা করতেন বাবা। মা মারা যাওয়ার পরে তিনি নিঃসঙ্গ হয়ে গিয়েছিলেন। বলতেন বেঁচে থাকার কোনো উদ্দেশ্য না পাওয়ার কথা। সেই সময় থেকে নিঃসঙ্গতা বাবাকে চরমভাবে গ্রাস করেছিল। বলতেন একে একে তো আমরা সবাইকেই হারাচ্ছি।”
অনুজিৎ আরও বলেন, ‘প্রকৃতির নিয়মে আমাদের সবাইকেই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হবে। তাও আসলে বাবা নেই এটা আমি মানতেই পারছি না। একই বছর বাবা ও মাকে হারালাম। বড় দাদাকেও হারিয়েছি। এই কষ্ট তো আসলে বলে বোঝানো যাবে না। বাবা খুব ধৈর্য্যশীল এবং সবসময়েই সবকিছুকে পজেটিভ ভাবেই দেখতেন। তিনি সবসময়েই বলতেন আমি যেন কখনও ভেঙে পড়ি না। দাদার হত্যাকাণ্ডের পরেও তিনি ছিলেন আদর্শের প্রতি অবিচল। ওনার নাম যে অজয়, এই ভেঙে না পড়াই ওনার নামের অর্থের যথার্থতা প্রমাণ করে।’
‘অধ্যাপক অজয় রায়ের মতো ভালো মানুষ ও শিক্ষক পাওয়া দুরূহ’
নাতনিদের জন্মদিন পালনের ইচ্ছে ছিল বাবার- এ কথা জানিয়ে অনুজিত বলেন, ‘বাবার ইচ্ছে ছিল নাতনিদের তৃতীয় জন্মবার্ষিকী পালন করবেন। কারণ ২০১৮ এর জানুয়ারিতে ওদের দ্বিতীয় জন্মদিন পালন করা হয়নি আমার মায়ের মৃত্যুর কারণে। প্রকৃতি বাবার সেই ইচ্ছে পূরণ করলো না। আমার সন্তানরাও তাদের দাদুর বাসায় ফিরে আসা দেখতে পেলো না।’
‘বাবা তার কর্মের মধ্য দিয়ে আমাদের সবার মাঝে বেঁচে থাকবেন। মৃত্যুর আগে তার ইচ্ছে ছিল হাসপাতালে মরণোত্তর দেহদান করবেন। ওনার সেই ইচ্ছে পূরণ করা হবে বলেও জানান অনুজিৎ।
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে মারা যান অজয় রায়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে জড়িত মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়ের বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। ২৫ নভেম্বর জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।