‘ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগের নেপথ্যে বিশেষ মহল’
১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:২৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বারবার ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার নেপথ্যে বিশেষ মহলের কারসাজির অভিযোগ এনেছে চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এই বিশেষ মহল কারা, সেটি সাংবাদিকদের খতিয়ে দেখতে বলেছেন হাসপাতালটি পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৫ দিনের মধ্যে ভুল চিকিৎসায় দু’টি মৃত্যুর অভিযোগ ওঠার পর মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর জিইসি মোড়ে একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলী খান। তিনি দাবি করেন, ‘ভুল চিকিৎসায়’ মাতৃগর্ভে শিশুর মৃত্যুর বিষয়ে ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে ‘বিভ্রান্তিমূলক ও মিথ্যা সংবাদ’ পরিবেশিত হয়েছে। এর নেপথ্যে বিশেষ মহল আছে বলে দাবি লিয়াকতের।
ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাতৃগর্ভে সন্তানের মৃত্যুর জন্য চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে ৮ ডিসেম্বর আদালতে লিয়াকত আলী খানসহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন আইনজীবী ইউসুফ আলম মাসুদ। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন— চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ম্যাক্স হাসপাতালের কনসালট্যান্ট আফরোজা ফেরদৌস, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের অধীন চমেক হাসপাতালের নিউক্লিয়ার মেডিসিন ও আলট্রাসাউন্ড কেন্দ্রে কর্মরত ডা. এ এইচ এম রকিবুল হক এবং ম্যাক্স হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. লিয়াকত আলী খান।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে লিয়াকত আলী খান দাবি করেন, আইনজীবীর স্ত্রীর গর্ভে সন্তানের মৃত্যুর সঙ্গে ম্যাক্স হাসাপাতালের ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, ‘আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে সবকিছু স্বাভাবিক আছে বলে ডা. আফরোজা ফেরদৌস রোগীকে জানান। এরপর ব্যথা উঠলে যেকোনো হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে রোগী ডা. আফরোজা ফেরদৌসের সঙ্গে যোগাযোগ না করে ৩ ডিসেম্বর দুপুরে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে ডিউটি ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে রোগীর ডেলিভারি সম্পন্ন হয়। সেখানকার ডিউটি ডাক্তার জানান, শারমিন একটি মৃত বাচ্চা প্রসব করেছে। মৃত বাচ্চা প্রসবের পর ডা. আফরোজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মানবিক কারণে তিনি সেখানে যান।‘
লিয়াকত আলী খান বলেন, ‘দুঃখজনক এই ঘটনা জানার পর অমি মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ওই সময় কর্তব্যরত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি জানান, রোগী ছয় ঘণ্টা প্রসব বেদনা অনুভব করেছিল এবং জটিল অবস্থায় ছিল। জরায়ু থেকে বাচ্চাটির মাথা অর্ধেক বের হওয়া ছিল, অসম্ভব চেষ্টায় শিশুটির ডেলিভারি হয়।’ ডা. লিয়াকত আলী খান বলেন, ‘রোগীর জরুরি প্রসূতি সেবা মেট্রোপলিটন হাসপাতালেই দেওয়া হয়। সুতরাং এ ঘটনায় ম্যাক্স হাসপাতালের ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই। রোগী এখানে ভর্তিই হয়নি। অথচ অহেতুক আমাদের অভিযুক্ত করা হলো।’
এর আগে, গত ২১ নভেম্বর লেখিকা ও অগ্রণী ব্যাংকের কর্মকর্তা মোহছেনা আক্তার ঝর্ণার এক বছর ২৪ দিন বয়সী ছেলে জিহান সরোয়ার প্রিয় ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ঝর্ণার অভিযোগ, চিকিৎসায় প্রায় সুস্থ হয়ে তার ছেলে খেলছিল। একটি ইনজেকশন পুশ করার আধাঘণ্টার মধ্যে আকস্মিকভাবে ছেলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ বিষয়ে তিনি ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের কাছে অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে লিয়াকত আলী খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা কোনো ধরনের রোগীকেই ফেরত দিই না, যে অবস্থাতেই আসুক। শিশুটিকে (প্রিয়) শিশু হাসপাতালে অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারছিল না। তাই আমাদের এখানে আসে। ব্যাকটেরিয়াল ম্যানিনজাইটিস হলে উন্নত বিশ্বে ৮০ শতাংশ রোগী মারা যায়। কয়েকদিন চিকিৎসা করে তার অবস্থার উন্নতি হয়েছিল। তারপর শিশুটি মারা গেল। অথচ আমাদের অভিযুক্ত করা হলো।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. মজিবুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী এবং ডা. আবুল কাশেম মাসুদ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন-
ম্যাক্স হাসপাতালকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা
শিশু রাইফার মৃত্যু: ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধের দাবি
ম্যাক্স হাসপাতালে নানা অনিয়ম, র্যাবের অভিযান চলছে
‘ভুল চিকিৎসায়’ মৃত্যু, ম্যাক্স হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা
ম্যাক্স হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ছেলে হারানোর অভিযোগ মায়ের