Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজশাহীর আব্দুস সাত্তার টিপুর মৃত্যুদণ্ড


১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:৪৪

ঢাকা: একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজশাহীর বোয়ালিয়ার মো. আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে রাজশাহীতে  ১৯৭১ সালে হত্যা ও গণহত্যায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এই রায় দেন আদালত।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহীনূর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। এর মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনাল ৪১তম রায় ঘোষণা করলেন ট্রাইব্যুনাল।

বিজ্ঞাপন

রায়ের দিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মো. মোখলেসুর রহমান বাদল, সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি, তাপস কান্তি বল। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।

তবে রায় ঘোষণার আগে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের আত্মদানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

২০১৮ সালের ২৭ মার্চ মামলার তদন্ত শেষ করে ৪২০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেন (আইও) তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. হেলালউদ্দিন। একই বছরের ২৯ মে জামায়াতের সাবেক এই নেতার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।

এ মামলায় ছয়জনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, নির্যাতন, আটক, অপহরণ, লুণ্ঠনের অভিযোগ রয়েছে। রাজশাহীর বোয়ালিয়ায় ১০ জনকে হত্যা, দুজনকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে নির্যাতন, ১২-১৩টি বাড়ির মালামাল লুট করে আগুন দেওয়ার অভিযোগ তদন্তে পাওয়া যায়।

তবে, ছয় আসামির মধ্যে রাজাকার মনো, মজিবর রহমান, আব্দুর রশিদ সরকার, মুসা রাজাকার, আবুল হোসেন মারা গেছেন। বেঁচে আছেন কেবল আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু রাজাকার ওরফে টিপু সুলতান। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

বিজ্ঞাপন

মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় রাজাকাররা। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় টিপু সুলতান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’ পরবর্তী সময়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে পড়াশোনা করেন। ১৯৮৪ সালে নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ২০১১ সালে অবসরে যান।

মামলার দুই অভিযোগ

এক নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টা থেকে পরদিন মধ্যরাত পর্যন্ত আসামি মো. আব্দুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতান ওরফে টিপু রাজাকার স্থানীয় অন্যান্য রাজাকার ও পাকসেনারা বোয়ালীয়া থানার সাহেব বাজারের এক নম্বর গদিতে (বর্তমানে জিরো পয়েন্ট) হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বাবর মণ্ডলকে আটক করেন। পরে তাকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত সেনা ক্যাম্পে নিয়ে দিনভর নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়।

দুই নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২ নভেম্বর রাত আনুমানিক ২টায় আসামি ও স্থানীয় রাজাকার এবং ৪০ থেকে ৫০ পাকসেনা বোয়ালিয়া থানার তালাইমারি এলাকায় হামলা চালায়। এ সময় তারা আওয়ামী লীগ নেতা চাঁদ মিয়া, আজহার আলী শেখসহ ১১ জনকে আটক করে নির্যাতন চালায়। পাশাপাশি তারা ওই এলাকার ১২ থেকে ১৩টি বাড়ি লুট করে। পরে আটক ১১ জনকে রাবির শহীদ শামসুজ্জোহা হলে স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্প ও টর্চার সেলে নিয়ে ৪ নভেম্বর মাঝরাতে নয়জনকে গুলি করে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়।

এর আগে  মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল রায়ের জন্য এই দিন ঠিক করেন। আর মামলার বিচারিক কাজ শেষে গত ১৭ অক্টোবর রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ টিপু সুলতান মামলা মৃত্যুদণ্ড রাজশাহী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর