ঢাকা: সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জিয়ার চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি ঘিরে সর্বোচ্চ আদালত চত্বরে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কার্যালয়ের সামনের অংশে তাদের মিছিল করতেও দেখা গেছে। এসময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে কথা কাটাকাটিও হতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ১২ নম্বরে ছিল খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি। এর আগে সকাল থেকেই কড়াকড়ি ছিল সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে। এসময় আইনজীবীদের প্রবেশও সীমিত করে দেওয়া হয়। আপিল বিভাগের তালিকাভুক্ত আইনজীবী ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
সকাল ৯টায় আপিল বিভাগের দিনের কার্যক্রম শুরু হলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, তাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টির সমাধান হওয়া প্রয়োজন। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমাদের দুই পক্ষের ৩০ জন করে আইনজীবীকে উপস্থিত থাকার সুযোগ দিন। পরে আপিল বিভাগ সিদ্ধান্ত দেন, বিএনপি ও রাষ্ট্রপক্ষের ৩০ জন করে আইনজীবী জামিন আবেদনের শুনানির সময় আদালতে উপস্থিত থাকতে পারবেন।
পরে সকাল ১০টার দিকে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি শুরু হয়। এসময় খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
এর মধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আইনজীবীদের প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ জানিয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা স্লোগান দিয়ে মিছিলও করেন। ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে দিতে হবে’, ‘জেলের তালা ভাঙব খালেদা জিয়াকে আনব’, ‘বিচারের নামে টালবাহানা চলবে না’— এসব স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপিন্থি আইনজীবীরা।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরাও স্লোগান দিয়ে মিছিল করেছেন। ‘বহিরাগতদের আদালতে ঢুকতে দেওয়া হবে না’, ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আদালতে বিশৃঙ্খলা চলবে না চলবে না’, ‘আদালত চত্বরে বিশৃঙ্খলা মানি না মানব না’— এরকম স্লোগান দিতে থাকেন তারা।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই পক্ষের আইনজীবীরাই সর্বোচ্চ আদালত চত্বরে নিজ নিজ অবস্থান ধরে রেখেছেন।
এর আগে, গত ৫ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের আপিলের রায় ঘোষণার কথা ছিল। তবে এর আগে আদালত খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন চাইলে তা ওই তারিখের আগে দাখিল করতে পারেনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষ। ফলে আদালত জামিন বিষয়ে আদেশ একসপ্তাহ পিছিয়ে দিতে চাইলে আপিল বিভাগে ব্যাপক হট্টগোল করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। হট্টগোলের কারণে বন্ধ ছিল বিচার কাজ। এ ঘটনাকে বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন স্বয়ং প্রধান বিচারপতি।
ওই দিনও সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা বিক্ষোভ ও পাল্টাপাল্টি মিছিল করেন। সেদিনও সর্বোচ্চ আদালত চত্বরে মুখোমুখি ছিলেন দুই পক্ষর আইনজীবীরা।
ছবি: হাবিবুর রহমান
আরও পড়ুন-
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট আদালতে
‘খালেদা জিয়া রাজি না হওয়ায় উন্নত চিকিৎসা দেওয়া যায়নি’
খালেদার জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন দাখিল, শুনানি শুরু
৩০ জন করে আইনজীবী থাকবেন খালেদার জামিন শুনানিতে
আর ছয় মাস গেলে তিনি লাশ হয়ে ফিরবেন: জয়নুল আবেদীন