Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বন্দর বন্ধ করার দায়িত্ব থাকত মহিউদ্দিনের ওপর: আমু


১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৭:৩০

চট্টগ্রাম ব্যুরো: আমরা যখন আন্দোলন-সংগ্রাম করতাম, এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিতাম চট্টগ্রাম বন্দর এবং ল্যান্ডপোর্ট বন্ধ করতে হবে। না হলে আন্দোলনের কথা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেওয়া যাবে না। মহিউদ্দিনকে নেত্রী (শেখ হাসিনা) চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করে দেওয়ার দায়িত্ব দিতেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এ কথা বলেন।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ এই সভার আয়োজন করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমির হোসেন আমু বলেন, একবার নেত্রী আমাকে বললেন— আপনার মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ডাকেন। তাকে জিজ্ঞেস করেন, বন্দর বন্ধ করতে পারবে কি না? আমি বললাম আপনি দায়িত্ব দিলে মহিউদ্দিন চৌধুরী অবশ্যই পারবেন। আমি তাকে ডাকলাম, তিনি এলেন এবং ফিরে আন্দোলন শুরু করলেন। আস্তে আস্তে বন্দর বন্ধ করে দিলেন। একবার তখন বন্দর দিয়ে কাফকোর (কর্ণফুলী ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড) যন্ত্রপাতি আনা হচ্ছিল। জাপানের রাষ্ট্রদূত একদিন নেত্রীর কাছে গেলেন, বললেন আমাদের পাঁচ ঘণ্ট সময় দেন মালামালগুলো খালাস করে নিয়ে যাই। নেত্রী রাষ্ট্রদূতকে আমার কাছে পাঠালেন। আমি পাঠালাম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কাছে। তিনি আন্দোলন শিথিল করলেন এবং মালামাল খালাস হলো।

মহিউদ্দিন চৌধুরী ব্যতিক্রমধর্মী রাজনীতি করতেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, তার রাজনীতি ছিল সেবাধর্মী রাজনীতি। তিনি রাজনীতিটাকে রাজনীতির ভেতরে আবদ্ধ করে রাখেননি। যে কোনো জায়গায়, কেউ মারা গেছেন খবর পেলেই তিনি ছুটে যেতেন। দাফন-কাফন শেষ করে ফিরতেন। চাল্লিশায় সহায়তা করতেন। মানুষের সেবার মাধ্যমে সৃষ্টিশীল রাজনীতির জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

সিটি মেয়র হিসেবে মহিউদ্দিনের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে আমির হোসেন আমু বলেন, আমরা যখন ৯৬ সালে পাওয়ারে আসলাম, নেত্রী একবার একনেকের মিটিংয়ে বললেন— মহিউদ্দিন চৌধুরী কখনো কোনদিন কোনো প্রজেক্ট একনেকে আনেননি। তিনি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চট্টগ্রাম মহানগরের উন্নয়ন করেছেন। আসলেই মহিউদ্দিন চৌধুরী কোনো প্রজেক্ট দিতেন না। মেয়র থাকার সময় শহরের ছোট ছোট সাইনবোর্ড থেকে তিনি পয়সা নিতেন না। রিকশার লাইসেন্স নবায়নের সময় পয়সা নিতেন না। এই কাজগুলোর মাধ্যমে দলের বাইরেও উনি ভোটব্যাংক গড়ে তুলেছিলেন।

মহিউদ্দিন বলতেন, চট্টগ্রামের যে ইনকাম, সেটার রিয়েল শেয়ার যদি চট্টগ্রামের উন্নয়নে না দেন, আমি আবার পোর্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবো। আমার পাওনা আমাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। এমনভাবে তিনি এই চট্টগ্রামকে ভালোবাসতেন। এজন্য চট্টগ্রামের মানুষ তিনবার তাকে মেয়র করেছিলেন। এর মধ্যে দুইবার আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় মেয়র হয়েছিলেন, বলেন আমির হোসেন আমু।

তিনি আরও বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি নেননি। তিনি বলেছিলেন, আমি চট্টগ্রামে রাজনীতি করব। চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকার রাজনীতি করব না। প্রেসিডিয়াম সদস্য হবো না। মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো একজন আদর্শবাদী, ত্যাগী নেতাকে আমরা হারিয়েছি। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য এমন নেতার আমাদের আরও অনেকদিন প্রয়োজন ছিল।

নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যদি মনে করি, শেখ হাসিনা পরপর তিনবার ক্ষমতায় এসেছেন। আরও একবার ক্ষমতায় আসবেন। বারবার ক্ষমতায় আসবেন, তাহলে ভুল করব। বঙ্গবন্ধুর সময় আমরা যখন ভাবলাম যে, আমরা ৩০ বছর ক্ষমতায় থাকব, তখনই আঘাতটা আসলো। ষড়যন্ত্র চলছে, ষড়যন্ত্র চলবে। আমাদের মধ্যে যদি অনৈক্য দেখা দেয়, তাহলে শত্রুপক্ষ সুযোগ বুঝে কোপ মারবে। ঐক্যবদ্ধভাবে থেকে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে, যেন শত্রুপক্ষ কোনো আঘাত হানতে না পারে।

বিজ্ঞাপন

সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, জাতীয় নেতৃত্বের প্রতি আমার বাবার কখনোই কোনো আগ্রহ ছিল না। এই চট্টগ্রামকে নিয়েই তিনি রাজনীতি করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। আমাদের অনেকের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। অতীতেও ছিল। দলীয় নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু সব পর্যায়ে এটা সুশৃঙ্খল হতে হবে।

নওফেল আরও বলেন, আমরা যেন এমন প্রতিযোগিতা না করি, যাতে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা যদি নিজেরা নেতৃত্ব পাওয়ার জন্য সন্তানদের ব্যবহার করি, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে।

নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যখন কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি, ঘর থেকে বের হতে পারেনি তখন মহিউদ্দিন ভাই চট্টগ্রাম থেকে প্রথম প্রতিবাদ করেছেন। মহিউদ্দিন ভাইয়ের আদর্শকে ধারণ করতে হবে। তার দেখানো পথে চলতে হবে।

নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, মহিউদ্দিন ভাই আমাদের শিখিয়ে গেছেন, চুরি-বাটপারির বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে রুখে দাঁড়াতে। অত্যাচার, অবিচার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিভাবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হয়, সেই শিক্ষা আমাদের দিয়ে গিয়েছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।

নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম ও সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম।

এদিকে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুবার্ষিকীতে তার বাসভবন নগরীর চশমাহিল এলাকা ঘিরে শনিবার রাত থেকে লোকজনের সমাগম শুরু হয়। তার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে নেতাকর্মীরা ছুটে যান বাসায়।

রোববার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগসহ আরও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন মহিউদ্দিনের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

রাতেই ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’সহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। রোববার সকালে তার বাসায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর একটি ক্লিনিকে মৃত্যুবরণ করেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।

এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর