অবশেষে ১০০ কোটি টাকার চেক পেলেন মুন সিনেমার মালিক
১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:৩১
ঢাকা: অবশেষে পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে মুন সিনেমা হলের জমির মালিক ও ইটালিয়ান মার্বেল কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিক মাকসুদুল আলমকে ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সার চেক বুঝিয়ে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে এই জায়গা বুধবারের (১৮ ডিসেম্বর) মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকুল রেজিস্ট্রি করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর ) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছেন আদালত।
আপিল বিভাগ আদালতে উপস্থিত মাকসুদুল আলমের হাতে চেক হস্তান্তর করে জানতে চান, কত টাকা পেলেন? তখন মাকসুদুল আলম আল আরাফা ব্যাংকের একাউন্টপেয়ী ওই চেক পড়ে বলেন, ৯৯ কোটি ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৪ টাকা ২৭ পয়সা।
এ সময় মাকসুদুল আলমের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি এবং সরকারের পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
জানা যায়, পুরান ঢাকার ওয়াইজঘাটে একসময়ে মুন সিনেমা হলের মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে তুলে দেওয়া হয়। ইটালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম এই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঘোষিত এক সামরিক ফরমানে সরকার কোনো সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলা হয়। ইটালিয়ান মার্বেল ২০০০ সালে হাইকোর্টে ওই ফরমানসহ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করেন। ২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে মোশতাক, সায়েম ও জিয়ার ক্ষমতা গ্রহণের বৈধতা দেওয়া সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ও সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে ইটালিয়ান মার্বেলকে মুন সিনেমা হল ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
কিন্তু সিনেমা হল ফেরত না পেয়ে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন। এক পর্যায়ে জানা যায়, মুন সিনেমা হলের জায়গায় একটি ডেভলপার কোম্পানিকে দিয়ে একটি বিশাল মার্কেট তৈরি করেছে তা সেলামি মূল্যে বিক্রি করেছে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। তাই ওই সিনেমা হলের জায়গা আর ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়।
এ অবস্থায় ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগ ওই সম্পত্তি অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ এক প্রকৌশলীকে দিয়ে জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে এই মূল্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। পরবর্তীতে জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি ঐ সম্পত্তির মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেন। এই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে সরকার। এরপর আপিল বিভাগ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন।