নাসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৩৩২ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব
১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:৪১
ঢাকা: নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এজন্য ৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এ লক্ষ্যে ‘নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কদমফুল অঞ্চলে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ নামের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৩৩২ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৯৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ও নাসিক’র তহবিল থেকে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ২১ নভেম্বর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বেশকিছু সুপারিশ দিয়ে গত ৩ ডিসেম্বর ওই সভায় কার্যবিবরণী জারি করা হয়। প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুন সময়ের মধ্যে বাস্তবয়ন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রধান উদ্দেশ্য হলো- নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কদমরসুল অঞ্চলে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন। প্রকল্প বাস্তবায়নের বিশেষ উদ্দেশ্যগুলো হলো- জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণ, পরিবেশবান্ধব কঠিন বর্জ্য অপসারণ ও প্রক্রিয়াকরণ এবং দূষণ কমিয়ে পরিবেশের উন্নয়ন।
ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য শামিমা নার্গিস স্বাক্ষরিত কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশরন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রকল্পটির সার্বিক প্রস্তাব সভায় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের একটি অতি পুরাতন ঐতিহ্যবাহী বন্দর নগরী। শীতলক্ষ্যা নদী এই নগরীকে দুভাগে বিভক্ত করেছে। এ নদী নগরীকে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ করেছে। শিল্পঘন এই নগরী এক সময় পাট ও পাটজাত পণ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। ঔপনিবেশিক শাসন আমলে শীতলক্ষ্যা নদীর উভয় পারে নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এ নগরী পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যবসার জন্য প্রাচ্যর ডান্ডি হিসাবে খ্যাতি অর্জন করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের জন্য একটি গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা। নারায়ণগঞ্জ শহর মূলত একটি শিল্প এলাকা। প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে শিল্প বর্জ্য যেমন- পলিথিন, কাপড় ও কাগজপত্র তৈরি হয়। সিটির কঠিন বর্জ্যরে প্রধান উপাদানগুলোতে খাদ্য, শাকসবজি, ফল, পলিথিন, কাগজ এবং ঝুট কাপড় রয়েছে। সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে প্রায় শূন্য দশমিক ৪৯ কেজি হারে একজন ব্যক্তির প্রতিদিন কঠিন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। সেই হিসাবে নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রায় ৩৫০ টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হয়। সিটি করপোরেশন প্রতিদিন প্রায় ২৯০ টন কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম। প্রতিদিন বর্জ্য সংগ্রহের হার প্রায় ৮৩ শতাংশ। এছাড়া অবশিষ্ট বর্জ্য স্থানীয় নদীর পার বা খালের উপর ডাম্প করা হয়; যা পরিবেশ দূষণ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ।’
সভায় নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি জানান, এই প্রকল্পের আওতায় শুধুমাত্র ভূমি অধিগ্রহণ করে এর উন্নয়ন করা হবে। উন্নয়নকৃত ভূমিতে পরবর্তী সময়ে অন্য প্রকল্পের মাধ্যমে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হবে। এ জাতীয় প্রকল্প করার জন্য এরই মধ্যে আটটি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। প্রস্তাবগুলো স্থানীয় সরকার বিভাগে জমা দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রতিনিধি মতামত দিয়ে বলেন, যে সব সংস্থার কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়া গেছে তাদের সাথে যৌথ সহযোগিতার ভিত্তিতে কি ধরণের কাজ করা হবে তা নির্ধারণ করার পর প্রকল্পটি নেওয়া উচিত।’
প্রকল্প সমাপ্তির পর উন্নয়নকৃত ভূমিতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থা থেকে যে প্রস্তাবগুলো পাওয়া গেছে তা নিয়ে সংস্থাগুলোর সঙ্গে নাসিকের যেসব বৈঠক হয়েছে তার প্রমাণ ডিপিপিতে সংযোজনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয় সভায়। এছাড়া প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবে চলতি বছরের সর্বশেষ দর জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে সংগ্রহ করে ডিপিপিতে সংযুক্ত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।