এবার ট্রাম্পের কী হবে?
১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:৪৯
ডেমোক্রেটিক পার্টি নেতৃত্বাধীন হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভে অভিশংসিত হয়েছেন ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে এমন ‘লজ্জাজনক’ পরিস্থিতির শিকার হলেন তিনি। রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ ও ‘কংগ্রেসের কাজে বাধা দেওয়া’ এই দুই অভিযোগের ওপর ভোট হয়। উভয় ভোটে পরাজিত হন ট্রাম্প। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনকে অপ্রত্যাশিতভাবে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট বনে যাওয়া ট্রাম্প তার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন কি না, তা নির্ভর করছে রিপাবলিকান সিনেটরদের সিদ্ধান্তের ওপর। খবর আল-জাজিরার।
যে দুটি অভিযোগে অভিশংসিত হলেন ট্রাম্প: ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ ও ‘কংগ্রেসের কাজে বাধা দেওয়া’।
২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের। অভিযোগ রয়েছে, বাইডেনকে হয়রানি করতে বা বিপদে ফেলতে ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কির আনুকূল্য চেয়েছেন। তা হচ্ছে ইউক্রেনকে প্রতিশ্রুত ৪ শ’ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সাহায্য পাসের বিনিময়ে, জেলেনেস্কি যাতে জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে।
এ বিষয়ে ফোন কলের কথা ফাঁস হলে ডেমোক্র্যাটরা হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ বা প্রতিনিধি পরিষদে তদন্ত শুরু করে। তবে ট্রাম্প তার অপরাধ কখনোই স্বীকার করেননি। পরবর্তীতে মার্কিন হাউজের জুডিশিয়ারি বা বিচার বিভাগীয় কমিটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগে অভিশংসন প্রস্তাব পাস হয়। অভিযোগ দুটি হলো, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ ও ‘কংগ্রেসের কাজে বাধা দেওয়া’।
৬ ঘণ্টা তর্ক-বিতর্ক ও আলোচনার পর অবশেষে ১৯ ডিসেম্বর দু’টি অভিযোগের ক্ষেত্রেই অভিশংসনের জন্য প্রয়োজনীয় ভোট পড়ে হাউজে। প্রথম অভিযোগের ক্ষেত্রে ২৩০ ভোট দেওয়া হয় অভিশংসনের পক্ষে এবং ১৯৭ ভোট পড়ে বিপক্ষে। দ্বিতীয় অভিযোগের ক্ষেত্রে, অভিশংসনের পক্ষে পড়েছে ২২৯ ভোট ও বিপক্ষে ১৯৮ ভোট।
হাউজে বর্তমান ৪৩৫ কংগ্রেস সদস্যের মধ্যে ডেমোক্র্যাট সমর্থক ২৩৩ জন, রিপাবলিকান ১৯৭ জন। অর্থাৎ ডেমোক্র্যাটরা এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় ট্রাম্পকে অভিশংসিত করা সম্ভব হয়েছে।
বাকি রয়েছে সিনেট ট্রায়াল
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট। হাউজে কারও বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব পাস হওয়া মানেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে হলে সিনেটেও এ প্রস্তাব পাস হতে হবে। ১০০ সদস্য বিশিষ্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে প্রেসিডেন্টকে পদচ্যুত করার প্রস্তাব তত্ত্বাবধান করবেন প্রধান বিচারপতি। সিনেটে প্রেসিডেন্টকে পদচ্যুত করার প্রস্তাব পাস হতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ সিনেটরের তাতে সমর্থন প্রয়োজন হয়।
আগামী বছরের জানুয়ারির ৬ অথবা ৯ তারিখে শুরু হতে পারে ট্রাম্পের সিনেট ট্রায়াল ও পরবর্তীতে ভোট। সিনেটে ৫৩-৪৭ সিটে রিপাবলিকানরা এগিয়ে থাকায় ফুরফুরে মেজাজে আছেন ট্রাম্প। অর্থাৎ অন্তত ৬৭ জন সিনেট সদস্য প্রেসিডেন্টকে বিতারণের পক্ষে থাকতে হবে। অন্তত ২০ জন রিপাবলিকান যদি দলের বিরুদ্ধাচরণ করে ট্রাম্পে বিপক্ষে ভোট দেন তাহলেই হোয়াইট হাউজ থেকে সরানো যাবে ট্রাম্পকে।
ট্রাম্পকে সরালে নতুন প্রেসিডেন্ট কে হবে?
সিনেট প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নিলে মাইক পেন্স ক্ষমতা পাবেন। তিনি বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী ২০ জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন পেন্স। যদিও রিপাবলিকানরা সিনেটররা শুরু থেকে অভিশংসনের বিরোধিতা করছে। তারা ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করবে এমনটা প্রায় অসম্ভব।
এর আগেও অভিশংসনের ঘটনা ঘটেছে, তবে ক্ষমতাচ্যুত হননি কেউ
ট্রাম্পের আগে দুজন প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হয়েছিলেন। তারা দুজনেই ডেমোক্রেটিক পার্টির। ১৭তম প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রিও জনসন ও ৪২তম প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। তাদের দুজনের মধ্যে জনসনের অবস্থাই ছিল সবচেয়ে বাজে। সিনেটে মাত্র এক ভোটের জন্য তাকে পদচ্যুত করা যায়নি। সে সময়ের সিনেটের ৫৪ সদস্যের ৩৫ জন জনসনের বিপক্ষে ভোট দিলেও তার পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন ১৯ জন। যা দুই-তৃতীয়াংশের শর্ত পূরণ করেনি।
অপরদিকে বিল ক্লিনটন তার ওপর আনা দুটি অভিযোগে সিনেটে উতরে যান (৪৫-৫৫) ও (৫০-৫০) ভোটে। নারী কেলেঙ্কারির জন্য তিনি নিন্দিত হয়েছিলেন। এছাড়া ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির কারণে প্রেসিডেন্ট নিক্সন প্রায় নিশ্চিত অভিশংসিত হওয়ার মুখে ১৯৭৪ সালে পদত্যাগ করেন।
ট্রাম্প কি বলছেন
ডেমোক্র্যাটরা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পদক্ষেপ নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি এই ঘটনাকে রিপাবলিকান পার্টি ও আমেরিকার জন্য অপমানজনক বলে উল্লেখ করেছেন। অনেক রিপাবলিকান সিনেটের ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়ে টুইট করেছেন। আশ্বাস জানিয়েছেন, তাকে প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে না। অভিশংসনের প্রস্তাব যখন হাউজে পাস হলো ট্রাম্প তখন মিশিগানে সমাবেশে অবস্থান করছিলেন।
আরও পড়ুন:- প্রতিনিধি পরিষদে ট্রাম্পের অভিশংসন
SUCH ATROCIOUS LIES BY THE RADICAL LEFT, DO NOTHING DEMOCRATS. THIS IS AN ASSAULT ON AMERICA, AND AN ASSAULT ON THE REPUBLICAN PARTY!!!!
— Donald J. Trump (@realDonaldTrump) December 18, 2019