শেখ হাসিনার সঙ্গে বেলুন-পায়রা ওড়াবেন জেলা সভাপতি-সা.সম্পাদকরা
১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ২৩:১২
ঢাকা: রাত পোহালেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২১তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন। এর মধ্য দিয়ে আগামী তিন বছরের জন্য দলকে আরও সুসংহত করার লক্ষ্য নতুন-পুরনো মুখের সমন্বয়ে নেতৃত্ব উপহার পেতে যাচ্ছে দলটি। এবারও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ৮০টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে নিয়ে শান্তির প্রতীক বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ও শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশনে দলটির ২১তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বরাবরের মতো এবারও দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘সভাপতি পদে অপরিহার্য’ ধরে তার নেতৃত্বে পরবর্তী তিন বছরের জন্য নতুন একটি কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সম্মেলনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। মূল মঞ্চের বামপাশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ৮০টি জেলা মর্যাদার সাংগঠনিক ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা নিজ নিজ পতাকা স্টান্ডে দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীতের সুরে সুরে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবেন।
সম্মেলনের প্রস্তুতি শেষের দিকে। বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সম্মেলন অনুষ্ঠিতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ। বিশাল আকৃতির পাল তোলা নৌকার প্রতিকৃতি মঞ্চে ২১তম সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। প্রমত্তা পদ্মার বুকে ৪০টি পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে আছে পদ্মাসেতু, সেটি এখন দৃশ্যমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল মঞ্চের সামনে। পদ্মাসেতুর বিশাল জলরাশিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট নৌকা। একপাশে চরে জেগে আছে কাশবন। এমনই একটি আবহের মধ্যে দাঁড়িয়ে বিশালাকার এক পাল তোলা নৌকা। তাতে আবার জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি। মূল মঞ্চের পেছনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ছবি ছাড়াও ঠাঁই পেয়েছে জাতীয় চার নেতা- তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম এ মনসুর আলী এবং এএইচ এম কামারুজ্জামানের ছবি। এছাড়া আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম চার নেতা- মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শামসুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশের ছবি রাখা হয়েছে সেখানে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানান, ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পালিত হবে মুজিববর্ষ। দেশে-বিদেশে মুজিববর্ষের জাঁকজমক ও বর্ণিল আয়োজন সামনে রেখে গত সম্মেলনের তুলনায় এবার সাদামাটা সাজসজ্জার মধ্য দিয়ে সম্মেলন করা হচ্ছে। কেবলমাত্র সম্মেলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে নজরকাড়া সাজসজ্জা ও আলোর ঝলকানি। সম্মেলনে এবার তাৎপর্যের দ্যুতি ছড়াবে মঞ্চটি। মঞ্চটি করা হয়েছে বিশাল আকৃতির নৌকার আদলে। মঞ্চের সামনে রয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতুর আদল। মূল মঞ্চটি ১০২ ফুট দীর্ঘ, ৪০ ফুট প্রশস্ত। নৌকার পালগুলোতে থাকছে দলীয় প্রতীক ও দলীয় নেতাদের মুখচ্ছবি। সম্মেলনস্থলের ভেতরে চারপাশে থাকেব বাংলাদেশের জন্ম অভ্যুদয় থেকে আওয়ামী লীগের জন্ম ইতিহাসের পরিক্রমা সম্বলিত বিশাল বিশাল ব্যানার-ফেস্টুন। আধুনিক প্রযুক্তি ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই’র বিভিন্ন কর্মব্যঞ্জনা।
সম্মেলনস্থলের চারপাশে দলের ইতিহাস, ঐতিহ্য, আন্দোলন সংগ্রামসহ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জয়গাথার পথচলার চিত্রনামা। পাশাপাশি রয়েছে ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সামরিক স্বৈরশাসক থেকে শুরু করে বিএনপি-জামায়াত জোটের আগুন সন্ত্রাস ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন নেতিবাচক রাজনীতির চিত্রায়ন, দৃশায়ন ও তথ্যনামা। সম্মেলন সফল করতে গঠিত ১১টি উপ-কমিটির নেতারা কাজ করে যাচ্ছেন। এবার ব্যয় ধরা হয়েছে চার কোটি টাকা। সারা দেশ থেকে সাড়ে সাত হাজার কাউন্সিলর ও পনের হাজার ডেলিগেটসসহ ৫০ হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত থাকবেন। এ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
এবার ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’ স্লোগানের অঙ্গীকার নিয়ে সম্মেলন হবে।
প্যান্ডেলের ভেতরে মোট ২৮টি এলইডি পর্দায় দেখানো হবে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পুরো অনুষ্ঠান। দলের নেতা-কর্মীদের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মোট গেট থাকবে ৫টি। একটি গেট ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। মূল মঞ্চে চারজন উপদেষ্টাসহ দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা বসবেন। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৮১ সদস্যের মধ্যে চারটি পদ খালি রয়েছে। প্রথম সারির হেড টেবিলে বসবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। একই সারিতে তাদের পাশে চারজন সিনিয়র উপদেষ্টা পরিষদ এবং সভাপতিমণ্ডলির সদস্যরা বসবেন। এর পেছনে দ্বিতীয় সারিতে সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও চার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকরা বসবেন। তৃতীয় সারিতে সম্পাদকমণ্ডলির ও কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা বসবেন।
এ বিষয়ে মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপ-কমিটির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মির্জা আজম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন। একই সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সকল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নিজ নিজ সাংগঠনিক জেলার পতাকা স্টান্ডে দাঁড়িয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করবেন।’
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে সম্মেলনের শেষ প্রস্তুতি কার্যক্রম পরিদর্শনে দলের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আসনে আওয়ামী লীগ নেতারাসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সামনে বলেন, ‘আগামী কাল ২০ ডিসেম্বর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং ২১ ডিসেম্বর আমাদের দ্বিতীয় অধিবেশন হবে। দ্বিতীয় অধিবেশনে মূলত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরা যোগ দেবেন। কাউন্সিলে বিভিন্ন জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা বক্তব্য দেবেন। এছাড়া কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র ঘোষণাপত্রের আপডেট আছে। কিছু সংশোধনীও আছে। এরপর আমাদের এই কমিটি বিলুপ্ত হবে। বিলুপ্ত হওয়ার পর তিন সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন মঞ্চে আসন গ্রহণ করবে এবং সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীতা আহ্বান করবে। এটাই হচ্ছে ২১ তারিখের আয়োজন।’
‘আগামীকালকে ঘিরে সারাদেশে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা এটি একটি ঐতিহাসিক আয়োজন। শীতের তীব্রতা যত বাড়ছে আমাদের নেতাকর্মীদের ঢলও তত প্রবল হচ্ছে। আমাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সারাদেশের নেতাকর্মীরা যোগদান করবে। যেখানে আমাদের নেত্রী আমাদের অভিভাবক আমাদের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ম শেখ হাসিনা উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন, দিক নির্দেশনামূলক ব্ক্তব্য রাখবেন’ বলেন ওবায়দুল কাদের।