নেতৃত্বের অপেক্ষায় আওয়ামী লীগ
২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:০১
ঢাকা: জাতীয় নির্বাচনের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সংগঠনকে আরও সুসংহগত করার লক্ষ্যে তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব উপহার পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট চত্বরে দলের কাউন্সিল অধিবেশনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব উপহার দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে রানিংমেট হিসেব কে হচ্ছেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং কারা আসছেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে; এখন সেই অপেক্ষার অবসানের পালা।
ছোট হয়ে এসেছে তালিকা, আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক কে!
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দলটির ২১তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। শান্তির বার্তা সাদা কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে দশটা থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশন চত্বরে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। ২য় অধিবেশনের ১ম পর্বে দলের তৃণমূল নেতাদের মধ্যে অনেকে বক্তব্য রাখবেন। ওই পর্বে গঠনতন্ত্র সংশোধনী গ্রহণ, ঘোষণাপত্রসহ বিভিন্ন সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যক্রম মূলতবি ঘোষণা করবেন শেখ হাসিনা। এরপর মধ্যাহ্ন বিরতির কাউন্সিল অধিবেশনে তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতা আহ্বান করবেন এবং কাউন্সিলরদের ভোটে নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করবেন। বরাবরের মতো এবারও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে সভাপতি পদে অপরিহার্য রেখে তার নেতৃত্বেই আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, নেতৃত্ব নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ সম্পাদক পদে কে আসছেন? না, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের’ই বহাল থাকবেন, তা নিয়ে গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নীরবতা; পদপ্রত্যাশী নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। শুক্রবার থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সম্মেলনস্থল থেকে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় নেতাকর্মীদের ভিড়ে ভারী হয়ে উঠছে।
শুক্রবার সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের সামনে জাতির পিতার বিভিন্ন আদর্শ লড়াই সংগ্রামের কথা তুলে তার কয়েকটি উক্তির কথা স্মরণ করেন এবং তিনি বলেন, জাতির পিতা ১৯৭২ সালে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি এই কথাগুলো বলেছিলেন। তিনি তার জীবনে এভাবেই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তিনি এই দেশকে স্বাধীন করে যান এবং সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তিনি অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হন। এছাড়াও তিনি দলের বর্তমান ও আগামী দিনের নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের জন্য এটা একান্তভাবে দরকার। সেটি হলো নীতিবিহীন নেতা দিয়ে অগ্রসর হলে সাময়িকভাবে কিছু ফল পাওয়া যায় কিন্তু সংগ্রামের সময় তাদের খুঁজে পাওয়া যায় না।’ এটিই হচ্ছে সব থেকে বাস্তবতা। যে কোনো রাজনৈতিক নেতার জীবনে নীতি আদর্শ সব থেকে বড় কথা। আর সেই আদর্শের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে সবার প্রস্তুত থাকার কথা। যিনি প্রস্তুত থাকতে পারেন, ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন তিনিই সফল হতে পারেন, দেশকে কিছু দিতে পারেন। জাতিকে কিছু দিতে পারেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতীয় সম্মেলনে নতুন নেতৃত্ব উপহার দিয়ে আগামী দিনে দলকে সারাদেশে আরও সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এ জন্য জাতীয় কাউন্সিল শেষেই সারাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটির কাউন্সিল করে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এরইমধ্যে সারাদেশে প্রায় ২৯টি জেলার কাউন্সিল হয়ে গেছে। বাকিগুলোও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ডিসেম্বর মাস আমাদের অত্যন্ত ব্যস্ততার মাস। এ কারণে আমরা আর করতে পারিনি। যেহেতু আমাদের জাতীয় কাউন্সিল; তাই এরপর পরেই আমরা বাকি সমস্ত জেলার কাউন্সিলগুলো করব। একেবারে তৃণমূল থেকে প্রত্যেক ইউনিয়ন উপজেলা, জেলার কাউন্সিল হবে। এই সংগঠনের তৃণূমূল পর্যায় থেকে আরও শক্তিশালী করা, এটিই আমাদের লক্ষ্য।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে এটা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে আমাদের কাউন্সিল অধিবেশন বসবে, সেখানে কেবলমাত্র আমাদের কাউন্সিলর যারা তারাই থাকবে। কারণ মূল সম্মেলনের নেতা নির্বাচন থেকে শুরু করে আমাদের সংগঠন, গঠনতন্ত্র এবং আমাদের ঘোষণাপত্রে যেগুলো গ্রহণ করা হবে, সব আমাদের কাউন্সিল অধিবেশনেই করা হবে।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদার বৈঠক হয়। বৈঠকেও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নীরবতা ধাঁধায় ফেলেছে দিয়েছে পদপ্রত্যাশী নেতাদের। তাই কে হচ্ছে পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক? না, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক’ই বহাল থাকছেন তা নিয়ে গুঞ্জনের ডালপালা ভারী হয়ে উঠেছে। এছাড়াও ১৯ ডিসেম্বর রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কয়েকজন নেতা। কিন্তু আওয়ামী লী সভাপতি কাউকেই সাক্ষাৎ দেননি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনি ইশতেহারে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদ বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি জাতির কাছে অঙ্গীকার করে দলটি। সে ধারাবাহিকতায় তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। সরকার গঠনের পর মন্ত্রিসভায় পুরনো ও ব্যর্থদের বাদ দিয়ে এক ঝাঁক নতুন মুখও উপহার দেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। এ ধারাবাহিকতায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি হিসাবে নিজ দলের নেতাদের বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার শুরু করে। এতে সহযোগী সংগঠনের কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও প্রভাবশালী কয়েকজন নেতাকেও সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়ার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি নভেম্বর মাসে সহযোগী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিতেও বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব উপহার দেন। নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জনগণের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য একঝাঁক মেধাবী, তরুণ নেতৃত্ব উপহার দিতে চান আওয়ামী লীগ প্রধান। তাই এবারের সম্মেলনেও নতুন-পুরাতনের মিশেলে দলকে নতুন প্রত্যয়ে এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব উপহার দেবেন শেখ হাসিনা।
নেতারা আরও জানান, সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী অনেকেই এরইমধ্যে নিজেদের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে গত জাতীয় নির্বাচনে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা মনোনয়নবঞ্চিত হন। পরবর্তীতে মনোনয়নবঞ্চিত এই নেতাদেরই জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব দিয়ে দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন শেখ হাসিনা। দলীয় ঘরানায় ওই চার নেতা এরইমধ্যে দলীয় ঘরানায় ‘চার খলিফা’ খ্যাত হয়ে উঠেছেন।