‘এমন উপায় বের করতে হবে, যাতে মশা মরে পরিবেশও বাঁচে’
২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৬:৫১
ঢাকা: স্থানীয় সরকার, পল্লীউন্নয়ন ও সবমায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, আমরা সারাদেশে গিয়ে মশা নিধন করতে পারব না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মশা নিধনে কীটনাশক ব্যবহারে সচেতন হচ্ছে। কারণ, কীটনাশক ব্যবহারে পরিবেশের ক্ষতি হয়। এজন্য মশা মারতে গিয়ে যেন পরিবেশ নষ্ট না হয় সে দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। এমন একটি উপায় বের করতে হবে, যাতে মশা মরে পরিবেশও বাঁচে।
রোববার (২২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে মশা ও ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গেরে বিস্তার রোধে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘রূপকল্প ২০২১, ২০৪১ ও এসডিজি অর্জনে মশা ও অন্যান্য ক্ষতিকর কীটমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। এজন্য ডেঙ্গু নিধনে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, মশাসহ অন্যান্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ (বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোর), কার্যকর ও যথাসম্ভব পরিবেশ বান্ধব কীটনাশক প্রয়োগ, নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বছরজুড়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, আগামী বছর যাতে ডেঙ্গুর প্রভাব না থাকে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া। এজন্য আজকের সভায় ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট করার জন্য একটি কমিটি করতে যাচ্ছি। সে লক্ষ্যে আমাদের স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (নগর উন্নয়ন) আহবায়ক করে এর সঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করা হবে। একটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কীভাবে উন্নত করা যায়, কীভাবে বাংলাদেশকে মশা বা ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ থেকে রক্ষা করা যায় এজন্য একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য পরামর্শ দেবে। এছাড়া তারা এক মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সভায় ডব্লিউএইচও কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ইনট্রিগ্রেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট কর্মকৌশল বাস্তবায়নের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেইসঙ্গে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা, রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ, বায়োলজিক্যাল নিয়ন্ত্রণ, কীটনাশকের যথাযথ ও নিরাপদ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও আবাসস্থল সুরক্ষার কৌশল ও কর্মপন্থা নেওয়া হয়। পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মকৌশলও নির্ধারণ করা হয়েছে।’
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় কতটা পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশ্নটির একেবারেই যথার্থ। আমরা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য দায়বদ্ধতার আওতায় নিয়ে আসব। এছাড়া ওষুধ বা ইনসেক্ট টিকস সাইড অবশ্যই যথা সময়ে আমদানি করার জন্য স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান উদ্যোগ নেবে। আমরা এটা ফলোআপ করবে।
সভায় বক্তারা বলেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঢাকা মশক নিবারণী দফতরকে একটি অধিদফতরে উন্নীত করতে হবে। ডেঙ্গু বা এডিশ মশা নিধনে ব্যাপক প্রচার প্রচারণার ব্যবস্থা করা, ভেক্টোর কন্ট্রোল সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। এজন্য একটি অ্যাডভাইজারি বা কারিগরি কমিটি গঠন করতে হবে। জনবল বাড়ানোসহ প্রতিনিধিদের মাঠে নামাতে হবে। এ কাজগুলো সরাসরি মন্ত্রণালয়কে মনিটরিং করতে হবে। কীটনাশক দেশে উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে।
তারা আরও বলেন, আমাদের দেশে কীটনাশক ব্যবহার হয় বিদেশেও ব্যবহার হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, একই ওষুধ ২০ বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে। মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশেও ডেঙ্গু হয়। সে তুলনায় বাংলাদেশে তুলনামূলক কম। আমাদের ওষুধ লাগবে কিন্তু। স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানকে তাদের নিজস্ব ওষুধ কিনতে হবে। সেজন্য স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিতে হবে এবং আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। সেইসঙ্গে এ খাতে সমন্বিত পদ্ধতি আনতে হবে এবং সবকিছু সহজ করতে হবে। বাসা-বাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ওষুধ সরবরাহ করবে। শুধু সিটি করপোরেশনের জন্য বসে থাকলে হবে না।
সভায় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধি, কুমিল্লার সিটি মেয়র নুরুল হক সাক্কু, সিলেটের সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, করপোরেশন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এ কে এম আজাদ, স্বাস্থ্য অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর ও কীটতত্ত্ববিদরাসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
কীটনাশক তাজুল ইসলাম মশা নিধন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়