মার্চ অথবা জুনে চসিক নির্বাচন, প্রস্তুতি শুরু
২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৪:১৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: রাজধানী ঢাকার দুই সিটিতে ভোটের তফসিল ঘোষণার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। চট্টগ্রামের নির্বাচন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কমিশন থেকে তাদের কাছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা এসেছে। আগামী বছরের মার্চে অথবা জুনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এপ্রিলে শুরু হবে এইচএসসি পরীক্ষা। এছাড়া এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হবে রমজান। সুতরাং এই দুই মাসে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। মার্চে নির্বাচন করার বিষয়টি কর্মকর্তাদের বিবেচনায় থাকলেও ১৭ মার্চ থেকে শুরু হচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বর্ষের অনুষ্ঠান। এ কারণে মার্চেও নির্বাচন করা যাবে কিনা, সেটা নিয়ে সন্দিহান নির্বাচন কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘এপ্রিলে রোজা শুরু হবে। মে মাসের ২৪ বা ২৫ তারিখ ঈদুল ফিতরের সম্ভাবনা আছে। প্রাথমিকভাবে কমিশন থেকে আমাদের যেটা জানানো হয়েছে, ঈদুল ফিতরের পরপরই অর্থাৎ মে মাসের শেষদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। জুনের শেষ সপ্তাহে ভোটগ্রহণ হবে।’
তবে জুন মাসে নির্বাচন করা যাবে কিনা সেটা নিয়েও ভাবছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টদের মতে, জুন মাসে বর্ষাকাল শুরু হবে, বৃষ্টি থাকবে। চট্টগ্রাম নগরীতে গত মৌসুমেও অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল। ২০১০ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনও জুনে হয়েছিল। সেসময় ভোটের আগে কমপক্ষে এক সপ্তাহ ধরে তুমুল বৃষ্টিতে তলিয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রাম। নগরীর বাকলিয়া, চকবাজার, শুলকবহর, বাদুরতলা, মুরাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু ভোটকেন্দ্রও পানিবন্দী হয়ে পড়েছিল। বর্ষা মৌসুমে নির্বাচনের সেই অভিজ্ঞতায় জুনের আগেই ভোটগ্রহণের পক্ষে মত আছে কর্মকর্তাদের অনেকের।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘যদিও জুনে বলা হচ্ছে, কিন্তু আমরা চাই মার্চের মধ্যে নির্বাচনটা হয়ে যাক। পরীক্ষা থাকবে না, বৃষ্টিও থাকবে না, আবহাওয়া ভালো থাকবে। নির্বাচনটা সুন্দরভাবে করা যাবে। মার্চে নির্বাচন করার ব্যাপারে আমরা মত দিয়েছি।’
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা মহানগরের উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়েছিল। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইনে বলা আছে, নির্বাচিত পরিষদের দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম সভার পাঁচ বছর মেয়াদ পূরণের দিন থেকে ১৮০ দিন আগে পর্যন্ত যে কোনোদিন নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে।
ভোটগ্রহণের পর মে মাসেই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরেরা দায়িত্ব নেন। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও ৪১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরেরা দায়িত্ব নিয়ে প্রথম সভা করেছেন ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট। সে হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হতে হবে ২০২০ সালের ৫ আগস্টের মধ্যে।
নির্বাচন কমিশন থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা আসার পর এখন ভোটকেন্দ্র যাচাইবাছাইসহ আনুষাঙ্গিক কাজ শুরু করেছেন চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা। হালনাগাদে ভোটার কি পরিমাণ বাড়বে, সেটা দেখে ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
২০১৫ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার নয় লাখ ৩৭ হাজার ৫৩ জন এবং নারী ভোটার আট লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৬ জন। ২০১০ সালের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৬৮ জন। নির্বাচন কর্মকর্তাদের ধারণা, ১০ শতাংশ হারে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ ভোটার এবার বাড়তে পারে।
২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ছিল ৭১৯টি। ভোটগ্রহণ কক্ষ ছিল ৪ হাজার ৯০৬টি।
আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘জানুয়ারিতে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে। যেহেতু ভোটার বাড়বে, কেন্দ্রও আমাদের কিছু বাড়ানোর প্রয়োজন হতে পারে। সেটা ভোটার তালিকা দেখে আমরা ঠিক করব। এখন আমরা যেটা করছি, পুরনো অর্থাৎ বিদ্যমান ভোটকেন্দ্রগুলো ঠিক আছে কি না, ভোটগ্রহণের উপযোগী আছে কি না সেটা সরেজমিনে দেখছি। অনেক সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ভবন সংস্কারের জন্য ভেঙে ফেলা হয়। আমরা সেগুলো দেখছি।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন নিয়ে একটু ব্যস্ততার মধ্যে আছি। এই নির্বাচন শেষ হলেই আমরা ভোটকেন্দ্রগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কাজ আরও জোরালোভাবে শুরু করতে পারব।’
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন।