চেয়ারম্যান হতে চান রওশনও, তবে কাউন্সিলে নয়!
২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ২২:৫২
ঢাকা: জোট ও ভোটের রাজনীতিতে বরাবরই ফ্যাক্টর ছিলেন সাবেক সেনাশাসক ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। নব্বই পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে সরকার গঠনে জাপাকে রাজনীতির বাজারে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন নিয়ামক হিসেবে। কিন্তু এরশাদের প্রয়াণে সেই দলটি রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকটাই ‘প্রভাবহীন’। এমনকি এরশাদের মৃত্যুর পর ভাঙনের মুখেও পড়েছিল দলটি। সেই ভাঙন শেষ পর্যন্ত ঠেকানো গেলেও গা ঝাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি জাপা। এবার ২৮ ডিসেম্বর দলের আসন্ন সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় দলটি।
এরশাদের মৃত্যুর পর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়া তারই ভাই জি এম কাদের আসন্ন সম্মেলনে নিজের পদটি ধরে রাখতে মরিয়া। এদিকে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীর নেতা রওশন এরশাদও দলটির চেয়ারম্যান হতে চাচ্ছেন। তবে তা কাউন্সিলের মাধ্যমে নয়, ‘অন্যভাবে’। দলটির দায়িত্বশীল একটি সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। তবে এ সর্ম্পকে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতাই মুখ খুলতে রাজি নন।
আরও পড়ুন- চেয়ারম্যান থাকছেন কাদেরই, জাপা মহাসচিব পদে আসছে নতুন মুখ!
যদিও এর আগে দলের দায়িত্বশীল অনেক সূত্রই জানিয়েছিল, আসছে কাউন্সিলে চেয়ারম্যান পদে লড়বেন না রওশন এরশাদ। বর্তমান পদে থেকেই বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করতে চান তিনি। কিন্তু তিনি সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার প্রভাবশালী এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, “রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হতে চান। এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে তিনি দলটির হাল ধরার জন্য চেষ্টা করেছেন। এ নিয়ে দলটির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সঙ্গে অনেক তর্কবিতর্ক হয়েছে। সর্বশেষ জিএম কাদেরের চেয়ারম্যান হওয়ারর বৈধতা নিয়ে আদলত থেকে রুল জারি করা হয়েছে। এ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, রওশন এরশাদ দলটির হাল ধরতে ইচ্ছুক। তবে সেটি কাউন্সিলের মাধ্যমে নয়, ‘অন্যভাবে’।”
তিনি আরও বলেন, “কাউন্সিলে ডেলিগেটদের ভোটে বেগম রওশন এরশাদ চেয়ারম্যান হতে পারবেন না- এটি বেগম রওশন এরশাদ ভালো করেই জানেন। সেজন্যই ‘তৃতীয়’ কোনো শক্তির মাধ্যমে চেয়ারম্যান পদে আসার ইচ্ছে রয়েছে তার।”
এদিকে দলটির ফান্ডের অভাবে জাতীয় পার্টির সম্মেলন ছোট পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের ভেন্যু ঠিক করা হয়েছে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনিস্টিটিউশন। সেখানে ২০ হাজার ডেলিগেট ও কাউন্সিলরের উপস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে সম্মেলনে পাঁচ হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট উপস্থিত হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বলে জানান ওই প্রেসিডিয়াম সদস্য।
তিনি বলেন, ‘অর্থের অভাবে আমাদের রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে। সম্মেলনে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের আসা-যাওয়া এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা এখনও সম্পন্ন হয়নি। তবে শিগগিরই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
জাপার একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, সম্মেলনে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের কাউকেই দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি দল আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল ও বামজোটের নেতাদের এবং ঢাকাস্থ ৬৮টি দূতাবাসের প্রতিনিধিদের সম্মেলনে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।
এসব নিয়ে দলটির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, ‘সম্মেলনে কাদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে তা আমার জানা নেই। দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-কমিটিগুলো তাদের কাজ ঠিকঠাক মতো করছে বলে জেনেছি। তাদের কাজের ওপরই সম্মেলনের সফলতা নির্ভর করছে। আশা করছি, তারা অবশ্যই সফল হবেন।’
সম্মেলনের প্রচার উপকমিটির সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের কোনো নেতাকে সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতাদের ও ঢাকাস্থ ৬৮ দূতাবাসের প্রতিনিধিদের দাওয়াত কার্ড দেওয়া হয়েছে। এসব কার্ড আমি নিজে বিতরণ করেছি।’
দলের নেতারা বলছেন, জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য থেকে একে অন্যকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছাড় দিয়েছেন। কিন্তু নিজ নিজ টার্গেট থেকে কেউই সরে আসেননি। দুপক্ষই সীমারেখা টেনেছেন কাউন্সিল ঘিরে। কাউন্সিলের পরই হয়তো এদের আসল রূপ বেরিয়ে আসবে এবং বোঝা যাবে দলের প্রকৃত অবস্থা।
আরও পড়ুন-
অর্থ সংকটে জাতীয় পার্টি, ধার-দেনায় চলছে কর্মসূচি
সম্মেলন ঘিরে ১০১ জনের প্রস্তুতি কমিটি জাতীয় পার্টির
জাতীয় পার্টি জাপা জাপা কাউন্সিল জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের রওশন এরশাদ