Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রথমবারের মতো কোনো মামলায় চার্জশিট দিচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা


৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ২১:০১

ঢাকা: মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন। ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই সকাল ৭টায় ভারত থেকে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেক পোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এসময় তাকে ৮১ লাখ ৩৬ হাজার ৮৯৩ টাকা এক পয়সার বৈদেশিক মুদ্রাসহ আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা। এরপর ওই মাসের ২২ জুলাই বেনাপোল বন্দর থানায় শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করা হয়। আর সেই মামলার তিন বছর পরে অর্থাৎ প্রথমবারের মতো কোনো মামলার চার্জশিট দিচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। তবে মামলার আসামি এখনো পলাতক।

বিজ্ঞাপন

এদিকে শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মামলা হওয়ার দীর্ঘ তিন বছর পার হলেও আসামিকে এখনো আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে আসামিকে গ্রেফতার করতে না পারলেও তাকে দোষী সাবস্ত করে আদালতে চার্জশিট দিতে যাচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। সেজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের কাছে আদালতে চার্জশিটটি দাখিল করার জন্য অনুমতিও চেয়েছে সংস্থাটি।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্রে আরও জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মানিলন্ডারিং মামলায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর চার্জশিট দিতে পারার সক্ষমতা অর্জন করে। সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়। এদিকে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ সালের ২২ জুলাই মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে আসামি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করে তৎকালীন শুল্ক গোয়েন্দার সহকারী রজস্ব কর্মকর্তা উম্মে ছালমা সুলতানা। এরপর তিনিসহ আরও পাঁচ জন কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত করেছেন। ওই তদন্তে উঠে এসেছে নানা তথ্য।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই সকাল ৭টায় ভারত থেকে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এসময় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত বৈদেশিক মুদ্রা ঘোষণা ফরম এফএমজিতে ঘোষণা ছাড়াই অবৈধভাবে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। এসময় তার কাছে ১০০ ইউএস ডলার মূল্যের ৯৪৬টি, ২০ ডলার মূল্যের একটি, ১০ ডলার মূল্যের একটি, পাঁচ ডলার মূল্যের নোট একটি, এক ডলার মূল্যের ১৪টি নোট, কানাডিয়ান ১০০ ডলার মূল্যের নোট ৫০টি ও ভারতীয় ১ হাজার রুপির নোট ৩৫৩টি, ১০ রুপির নোট পাঁচটি এবং মালয়েশিয়ান এক রিঙ্গিত মুল্যের দুটি নোট পাওয়া যায়।

বিজ্ঞাপন

এরপর তদন্তে আরও পাওয়া গেছে, আসামি ফরিদ হোসেন ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০১৬ সালের ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে ৩২ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। প্রতিবার বিদেশ ভ্রমণের সময় এক থেকে তিন দিনের বেশি সময় তিনি অবস্থান করেননি। আর ২০১৬ সালের ১৪ জুলাই তিনি ট্যুরিস্ট ভিসায় ভারতে যান। তখন ভারতে প্রবেশের সময় তার ভিসায় বৈদেশিক মুদ্রার কোনো এনডোর্সমেন্ট ছিল না। অর্থাৎ বৈধভাবে তিনি দেশি বা বিদেশি কোনো মুদ্রাই বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাননি। আর ভারতে মাত্র একদিন অবস্থানকালে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সেটা বৈধ হতে পারে না। ফলে যা মানিল্ডারিং অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।

আরও বলা হয়েছে তদন্ত রিপোর্টে, একই সঙ্গে আসামি ফরিদ হোসেনের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আটক করা হলেও তাকে আটক না করার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে তদন্ত দল জানতে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে। এরপর ফুটেজে দেখা যায়, বেনাপোল কাস্টম হাউসের তৎকালীন রাজস্ব কর্মকর্তা উত্তম কুমার সমাদ্দর আসামির সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে আসামিসহ গেটের বাইরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর আসামিকে ছাড়াই ফেরত আসেন কাস্টম কর্মকর্তা। আর তখন থেকেই আসামি পলাতক। আর রাজস্ব কর্মকর্তা উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. সহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘২০১৫ সালে মানি লন্ডারিং আইন সংশোধনের মাধ্যমে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরকে তদন্ত কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আমরা ২০১৭ সাল থেকে মামলা দায়ের শুরু করি। এখন পযন্ত আমরা ৭৮টি মানি লন্ডারিং মামলা করেছি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের বিধিমালা তৈরি হয়। এই বিধিমালা পাওয়ার পর আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণের আয়োজন করি। এই প্রথম আমরা একটি মামলার চার্জশিট দেওয়ার জন্য এনবিআর চেয়ারম্যানের অনুমতির জন্য পাঠানো হয়েছে। পযায়ক্রমে আরও অনেকগুলো মামলার চার্জশিটের শেষদিকে আমরা চলে এসেছি। এখন থেকে নতুন মামলা দায়েরের পাশাপাশি চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে। যাতে অপরাধী যারা আছে তাদের যেন বিচার হয়।

গোয়েন্দা প্রথম বারের মতো শুল্ক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর