Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তৃতীয় শ্রেণিতেও মাতৃভাষায় বই পাচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা


১ জানুয়ারি ২০২০ ০৮:০১

রাঙ্গামাটি: প্রতিবছরের মতো এবারও বছরের প্রথমদিন (১ জানুয়ারি) পালিত হবে বই উৎসব। এদিন সারাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ করবে সরকার। প্রতিবছরের মতো এবারও রাঙ্গামাটির চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাঝে তাদের মাতৃভাষায় লেখা বই দেওয়া হবে। তবে এবার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও মাতৃভাষায় লেখা বই পাবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে তৃতীয় শ্রেণিতে মাতৃভাষায় লেখা বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলেও গেল বছরের তুলনায় নতুন শিক্ষাবর্ষে বই বিতরণের সংখ্যা কমেছে। ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে জেলায় মোট ৮৩ হাজার ৫০৯টি বই বিতরণ করা হলেও এবার বিতরণ করা হবে ৬৭ হাজার ৭০৮টি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে রাঙ্গামাটির দশ উপজেলায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিকে ২৯ হাজার ২৫২টি, প্রথম শ্রেণিতে ২০ হাজার ৭৭৪টি ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৩ হাজার ৩৮৩টি মাতৃ ভাষার বই দেওয়া হয়। ২০২০ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিকে ১৭ হাজার ৯৪০টি বই বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে চাকমা ভাষায় ১৪ হাজার ৭৪, মারমা ভাষায় ২ হাজার ৭৫৬ ও ত্রিপুরা ভাষায় ১ হাজার ১৫০টি বই দেওয়া হবে। প্রথম শ্রেণিতে ১৯ হাজার ৩৫০টি বই বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে চাকমা ভাষায় ১৫ হাজার ১৭৮, মারমা ভাষায় ৩ হাজার ২৭৯ ও ত্রিপুরা ভাষায় ৮৯৭টি বই বিতরণ করা হবে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে বই বিতরণ করা হবে ২২ হাজার ৬৪১টি। এর মধ্যে চাকমা ভাষায় ১৮ হাজার ৫২৫, মারমা ভাষায় ৩ হাজার ২৬৭ ও ত্রিপুরা ভাষায় ৮৪৯টি। এবছর নতুন করে শুধুমাত্র মাতৃভাষায় একটি বিষয়ে বই দেওয়া হবে ৭ হাজার ৭৭৭টি। এর মধ্যে চাকমা ভাষায় ৬ হাজার ২৯৭; মারমা ভাষায় ১ হাজার ১৩৭ ও ত্রিপুরা ভাষায় ৩৪৩টি।

শিক্ষা অফিস সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০২০ শিক্ষাবর্ষে সাধারণ শিক্ষায় রাঙ্গামাটির দশ উপজেলায় প্রাক-প্রাথমিকের ২০ হাজার ৭৮ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোট ৪০ হাজার ১৫৬টি বই বিতরণ করা হবে। প্রথম শ্রেণিতে ১৭ হাজার ৪০ শিক্ষার্থীর মাঝে ৫১ হাজার ১২০টি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৬ হাজার ৭০৪ শিক্ষার্থীর মাঝে ৫০ হাজার ১১২টি, তৃতীয় শ্রেণির ১৬ হাজার ৫৫০ শিক্ষার্থীর মাঝে ৯৯ হাজার ৩০০টি, চতুর্থ শ্রেণির ১৬ হাজার ৫০ শিক্ষার্থীর মাঝে ৯৬ হাজার ৩০০টি ও পঞ্চম শ্রেণির ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে ৯২ হাজার ১৯০টি বই বিতরণ করা হবে। সর্বমোট ১ লাখ ১ হাজার ৭৮৭ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৪ লাখ ২৯ হাজার ১৭৮টি বিতরণ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মঙ্গল বাহাদুর ছেত্রী বলেন, ‘মাতৃভাষায় বই দেওয়া সরকারের অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। আগে শিশুরা মাতৃভাষার অক্ষরও চিনতো না। এখন তারা মাতৃভাষার অক্ষর চিনতে পারছে, পড়তে ও লিখতে পারছে। এতে করে পার্বত্য চট্টগ্রামের চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিশুরা নিজেদের ভাষাকে রক্ষা করতে পারবে।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম জানান, সরকারের উদ্যোগে ২০১৭ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর শিশুরা মাতৃভাষায় পড়তে পারছে। প্রথমে প্রাক-প্রাথমিকে দেওয়া হলেও পর্যায়ক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি মাতৃভাষায় বই দেওয়া হয়। এবছর নতুন করে তৃতীয় শ্রেণিতে শুধুমাত্র বাংলা বিষয়ে মাতৃভাষায় বই দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে জেলার দশ উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণ পাঠক্রম ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষার বই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ১ জানুয়ারি বই উৎসবের মধ্য দিয়ে বই হাতে পাবে শিশুরা।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সাল থেকে দেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার জনগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় পড়াশোনার জন্য বই বিতরণ করে সরকার। তখন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, গারো, এবং সাদ্রি এই পাঁচ ভাষায় বই বিতরণ করা হতো। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাভাষি শিশুরা প্রাক-প্রাথমিক বই পায়। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণি, ২০১৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণি ও ২০২০ সালে তৃতীয় শ্রেণিতেও মাতৃভাষায় বই বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে সরকার। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষায় পড়তে পারবে দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তৃতীয় শ্রেণি বই উৎসব মাতৃভাষায় বই রাঙ্গামাটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর