ঢাকার আশা, শান্তিপূর্ণভাবে অস্থিরতা ‘ম্যানেজ’ করবে নয়াদিল্লি
১ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:১২
ঢাকা: ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) পাস হওয়ার পর থেকে এখনো নয়াদিল্লিতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ঢাকা চায়, নয়াদিল্লি শান্তিপূর্ণভাবে এই অস্থিরতা ‘ম্যানেজ’ করবে, যেন দু’দেশের সম্পর্কে কোনো ছেদ না পড়ে। তবে, এই বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এখন সরাসরি কথা বলার সময় এসেছে বলে মনে করছেন ঢাকার বিশেষজ্ঞরা।
বুধবার (১ জানুয়ারি) ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিষয়ে সদ্য যোগ দেওয়া পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতির ওপর আমরা নজর রাখছি। ভারত আমাদের অফিসিয়ালি যে আশ্বাস দিয়েছে আমরা তার ওপর আস্থা রাখতে চাই। চলমান ইস্যুটি ভারতের অভ্যন্তরীণ এবং এটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে একটা অস্থিরতা ছিল, আস্তে আস্তে এটা কমে আসছে। আশা করবো পুরো বিষয়টা শান্তিপূর্ণভাবে তারাও ম্যানেজ করবে এবং এর মাধ্যমে দুদেশের যে সম্পর্ক আছে তা কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হবে না।’
বিশ্ব এখন বাংলাদেশ থেকে নেতৃত্ব চায়: পররাষ্ট্র সচিব
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে সবসময়েই চ্যালেঞ্জ থাকে, কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকোর মধ্যে চ্যালেঞ্জ আছে। এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই কাজ করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা-নয়াদিল্লি দুদেশের সম্পর্কের মাত্রা অনেক উচুতে অবস্থান করছে। আজকেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।’
এদিকে, ভারতের সংশোধন হওয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) দেশটির সংসদে পাস হওয়ার পর থেকে নয়াদিল্লির রাজনৈতিক নেতারা প্রতিদিনই বাংলাদেশকে জড়িয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন। সেই সঙ্গে দেশের উত্তর পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তে হঠাৎ করেই অবৈধ অনুপ্রবেশ বেড়েছে। ফলে এই বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের এখন সরাসরি কথা বলার সময় এসেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন উদ্বেগজনক বিষয়, এটা আগেও ছিল এবং অনেকটা সময় ধরেই থাকবে। ফলে এই বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি কথা বলার সময় এসেছে। যেহেতু ভারতের রাজনীতিতে এবং এই নাগরিকত্ব বিলে সংশোধন নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক নেতারা বাংলাদেশকে রেফারেন্স দিয়ে কথা বলছে, তাই বিষয়টিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ ভাবার কিছু নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন ভাবা উচিত যে ভারতের নাগরিকত্ব ইস্যু বাংলাদেশ কীভাবে মোকাবিলা করবে। কারণ কোনো অবস্থাতেই মিয়ানমারের মত রিপিটেশন বাংলাদেশের পক্ষে আর বহন করা সম্ভব না।’
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আ ন ম মুনিরুজ্জামান জানান, আসামে ২০ লাখ নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। পাশাপাশি ভারতের নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করানোর একটা চেষ্টা হয়েছে। এই নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রভাব শুধু ভারতেই নয়, গোটা অঞ্চলে প্রভাব ফেলবে। বিষয়টি কোনোভাবেই বাংলাদেশের হালকাভাবে দেখা উচিত না।
দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনকে কেন্দ্র করে দেশের উত্তর পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩০০ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন। অন্যদিকে, এই ইস্যুতে গোটা ভারতে উত্তেজনা এবং বিক্ষোভ চলছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ২৫ জন মারা গেছেন। শুধু তাই নয়, এই ইস্যুতে ভারতের গোহাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ উপ-মিশন আক্রান্ত হয়েছে।