‘গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া প্রার্থী-কর্মীদের গ্রেফতার করা যাবে না’
৭ জানুয়ারি ২০২০ ১৭:৫৯
ঢাকা: আদালত থেকে আগে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কোনো প্রার্থী ও তার কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর। তবে কেউ ফৌজদারি অপরাধ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে নির্বাচন ভবনে নিজ দফতরে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
ইসি সচিব বলেন, কমিশন গতকাল (সোমবার, ৬ জানুয়ারি) যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ (মঙ্গলবার) আমি ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি। তাকে স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে— যারা নির্বাচনের প্রার্থী হয়েছেন, তাদের বা তাদের কোনো সমর্থকদের আগের কোনো মামলায় গ্রেফতার করতে চাইলে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রয়োজন হবে। এই গ্রেফতারি পরোয়ানা না থাকলে তাদের কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, তবে কেউ যদি নতুন কোনো ক্রিমিনাল অফেন্স (ফৌজদারি অপরাধ) করে বা আদালতের আদেশ থাকে, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা জনগণের জান বা সম্পদ রক্ষার জন্য পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। আগামী ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে আরও নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সিটি নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ইভিএম মেশিন নিয়ে কেউ সন্দেহ করলে আমরা ইভিএম মেশিন তাদের দেখাব। কমিশন বলেছে, প্রোগ্রামিং বোঝে— এমন প্রতিনিধি দিলে তারা এসে ইভিএম দেখতে পারবেন।
ব্যালট ইউনিটে ফিঙ্গারপ্রিন্ট না থাকায় ইভিএমে ভোট অরক্ষিত কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, কন্ট্রোল ইউনিটে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার পর ব্যালট ইউনিট ওপেন হবে। এরপর গোপন কক্ষে ভোটার নিজেই উপস্থিত থাকবেন। সেখানে তার সামনে অন্য কারেও ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই। ব্যালটের চেয়ে ইভিএম সুরক্ষিত (প্রটেক্টেড)। কারণ ভয়ভীতি দেখিয়ে ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিলেও একাই গিয়ে ব্যালট নিয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু ইভিএমে সেই সুযোগ নেই।
নির্বাচনে গোপন কক্ষ ছাড়া সব জায়গায় সাংবাদিকদের প্রবেশের অনুমতি থাকবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের এই সিনিয়র সচিব বলেন, মোবাইল ক্যামেরা যার কাছে আছে, তিনিই একজন সাংবাদিক। এবার বলা আছে, সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হবে। সাংবাদিকদের পরিচয়পত্র ও গাড়ির স্টিকার দেওয়া হবে। সাংবাদিকরা আচরণবিধি অনুযায়ী সবকিছু করতে পারবেন। তারা গোপন কক্ষ ছাড়া কেন্দ্রে অবাধে প্রবেশ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া যাবে না। পোলিং অফিসার, প্রার্থীদের এজেন্টসহ সবার বক্তব্যও নিতে পারবেন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইসি সচিব আরও বলেন, পুরো নির্বাচনই প্রচার করা যাবে, কেন্দ্রের সমানে বসে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে। ভোট গণনার সময় তা দেখানো যাবে। এবার তো ব্যালট নেই, ফলে সঙ্গে সঙ্গেই গণনা হয়ে যাবে।
প্রার্থীরা সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালাতে পারবেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আচরণবিধিতে যা আছে, সে অনুযায়ী সবকিছুই করা যাবে। কিন্তু যেগুলো বলা নেই, সে বিষয়ে সরাসরি বলতে পারব না যে এগুলো করতে পারবেন না। যদি এমন কিছু হয় যেগুলো আচরণবিধিতে নেই, তখন যদি কমিশন মনে করে যে এগুলো করা ঠিক হবে না, সে ক্ষেত্রে কমিশন সার্কুলার জারি করে দিতে পারে।
বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের চিঠি প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত কমিশন নেবে। আমার সিদ্ধান্ত হলো এটা কমিশনে উপস্থাপন করতে হবে। তবে ভোটের তারিখ নির্ধারণের আগে পূজার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় এসেছে। কারণ কমিশন যখন কোনো শিডিউল ঘোষণা করে, তখন কমিশনের সামনে সব তথ্য-উপাত্ত দেওয়া হয় এবং অনুমোদিত সরকারি ক্যালেন্ডারও দেওয়া হয়। সেই ক্যালেন্ডারে আমরা দেখেছি, সরস্বতী পূজার তারিখ দেওয়া আছে ২৯ জানুয়ারি। সেটা দেখেই ২৯ তারিখ নির্বাচন না দিয়ে ৩০ তারিখ দেওয়া হয়েছে।