ধর্ষক গ্রেফতারে স্বস্তি ফেরেনি, সর্বোচ্চ শাস্তি চান শিক্ষার্থীরা
৮ জানুয়ারি ২০২০ ১৬:৫৬
রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় মজনু (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। তবে এতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বস্তি ফেরেনি, বরং ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে সামাজিক আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সেশন, ব্যাচ ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা আলাদা আলাদা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন। এছাড়া সকাল ১১টায় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
এসব কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা দেশের সকল ধর্ষণের বিচার ও শিক্ষা- প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র নারীর জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
ধর্ষক গ্রেফতার হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত বলেন, আমরা জেনেছি ধর্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার এমন দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই, যাতে আর কোনো বোনকে ধর্ষণের শিকার হতে না হয়। এই ধর্ষণই যাতে শেষ ধর্ষণের ঘটনা হয়। মুজিববর্ষের প্রতিপাদ্য যাতে হয় ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে প্রত্যেকটি ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ধর্ষককে জনসম্মুখে ফাঁসি দিতে হবে বলে দাবি করেন তিনি।
রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ধর্ষণের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে রোকেয়া হলের ছাত্রী সানজিদা বলেন, আমরা নারীরা আজ কোথায়ও নিরাপদ নই। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষার্থী হয়েও ধর্ষণের শিকার হতে হয়। বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান নারীর জন্য অনিরাপদ। আমরা একটি সামাজিক বিপ্লব চাই। যেই সমাজে ধর্ষকের ঠাই হবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক বলেন, ধর্ষক গ্রেফতার হওয়ায় আমি আনন্দিত নই। হালকা একটুখানি স্বস্তি কাজ করছে। কিন্তু পুলকিত হবার মত কিছু ঘটেনি। চাপে পড়লে দুইদিনে গ্রেফতার, কয়েক মাসে বিচার হয়। ঢাবির ওই ছাত্রীই শুধু আমার বোন নয়। এই দেশের প্রতিটা নারীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের বিচার চাই আমি।
অন্যদিকে শরিফুল ইসলাম তানজিল নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখেন, ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির নাম মজনু, পেশায় হকার, থাকে রেল স্টেশনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এমন অনেক ড্রাগ এ্যাডিক্টেড হকার ও টোকাইয়ের অভয়ারণ্য, যারা প্রকাশ্যে গাঁজা সেবনসহ নানান অপকর্মে জড়িত। মাঝেমধ্যে উলঙ্গ মাতালও ক্যাম্পাসে দেখা যায়। আমাদের ক্যাম্পাসেও কি নিরাপদ আমাদের বোনেরা?
ধর্ষণের প্রতিবাদে টানা ৪৮ ঘণ্টা অনশনকারী সিফাতুল ইসলাম মুঠোফোনে সারাবাংলাকে বলেন, আমরা মনে করি ধর্ষকের গ্রেফতারের মাধ্যমে আমাদের চার দফা দাবির প্রথম দুটি পূরণ হয়েছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই। একটি সামাজিক পরিবর্তনের জন্য আমরা বাকি দুই দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
ধর্ষক গ্রেফতারের প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস মুঠোফোনে সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের স্বস্তি এখনও ফিরেনি। শুধুমাত্র ধর্ষক গ্রেফতার হলেই চলবে না। তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। বাংলাদেশে এ ধরনের বিকৃত মন-মানসিকতা পোষণকারী যারা রয়েছে, এ শাস্তি দেখে তারা যেন ভয়ে ভীত থাকে এবং এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে ভয় পায়।
গত ৫ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয়বর্ষের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঘটনার পর থেকে টানা তিনদিন ধরে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।