Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নগরগ্রাম নন্দীপাড়ায় ভোটের হাওয়া


১৫ জানুয়ারি ২০২০ ১২:৪৩

ঢাকা: রাস্তার পূর্বপাশটায় স্নিগ্ধ-সবুজ কলাই ক্ষেত। বাঁশের মাচায় ঝুলে থাকা কচি লাউয়ের ডগা। পালং আর লাল শাকের ক্ষেতে লাল-সবুজের মিতালী। ক্ষেত জুড়ে মুক্তোদানার মতো দুলছে শ্বেতশুভ্র ধনিয়ার ফুল। পাশেই আপন খেয়ালে ঘাস ছিড়ছে কয়েকটি ছাগলছানা এবং লাল ও ধূসর রংয়ের দুটি গাভি। গেরস্থের বাড়ির উঠোনে পই পই করে দৌড়াচ্ছে হাস-মুরগির পাল। বাড়ির চারপাশের গাছ-গাছালিতে হরেক রকম পাখির কুজন। পাশের খাল দিয়ে কুল কুল শব্দে বয়ে যাচ্ছে পানি। দূষণ আর দখলে কাবু খালটির পাড়ে নানা জাতের জলজ লতাগুল্ম।

বিজ্ঞাপন

উপরে আঁকা চিত্রটি শহর থেকে দূরে কোনো গাঁও-গ্রামের নয়— নগর গ্রামের! পৃথিবীর অন্যতম প্রধান মেগাসিটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তুর্ভুক্ত নন্দীপাড়া গ্রাম এটি। গ্রামের সব উপাদান বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনিক হিসাব-নিকাশের খেরোখাতায় নন্দীপাড়া এখন সিটি করপোরেশনের আওতায়। সম্প্রতি শহরতলীর যে ১৫টা ইউনিয়নকে ঢাকা সিটির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে নন্দীপাড়া একটি।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের হাওয়া খুব ভালোভাবেই লেগেছে নন্দীপাড়ায়। নন্দীপাড়ার পূর্বপাশটা এখনও গ্রামীণ চেহারা ধরে রাখলেও পশ্চিম পাশটায় রীতিমতো কংক্রিট-লৌহ-কাষ্ঠের ছোবল পড়েছে। পরিকল্পনাহীন নগরায়ন, এবড়োথেবড়ো রাস্তাঘাট, এলোমেলো দোকানপাঠ-ঘরবাড়ি— সব কিছু মিলে বেহালদশা।

এই বেহালদশা থেকে নন্দীপাড়াকে মুক্ত করতে দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে ‘ত্রাতা’ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হবু নগরপিতা হিসেবে এরই মধ্যে সেখানে ঢু মেরেছেন বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) নন্দীপাড়া ত্রীমোহনী বাজার থেকে প্রচারণা শুরু করেন ইশরাক। এ সময় সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ওঠে নতুন এ ওয়ার্ডের সমস্যা সমাধানে কতটুকু আন্তরিকতা দেখাবেন হবু মেয়র। জবাবে ইশরাক বলেন, ‘নির্বাচিত হলে অবহেলিত এই নতুন ওয়ার্ডের সার্বিক উন্নয়নে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। এখানকার রাস্তাঘাট, জলাশয়, ব্রিজ-কালভার্ডসহ সবধরনের অবকাঠামো উন্নয়নে আমি শেষবিন্দু দিয়ে চেষ্টা করব।’

শুধু মেয়র প্রার্থী নয়, স্থানীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরামহীন প্রচারণায় মুখর ‘নগরগ্রাম’ নন্দীপাড়া। চায়ের দোকান, মাছের আড়ৎ, সবজির দোকান— সবখানেই ভোটের আলোচনা। নন্দীপাড়ার সড়ক ও পাশের গাছে গাছে প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন শোভা পাচ্ছে। নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে পাটের রশিতে বেঁধে ঝোলানো হয়েছে পোস্টার। বিদ্যুৎের খুঁটি অথবা বিভিন্ন স্থাপনায় রশি বেঁধে সড়কের মাথার ওপর সাঁটানো হয়েছে হাজার হাজার পোস্টার। আর কিছুদূর পর পর মানুষের জটলা। যাদের মূল এজেন্ডা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা।

 

ছিমছাম গ্রামে হঠাৎ ‘শহর’ ঢুকে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হওয়ায় নাগরিক ‍সুযোগ-সুবিধা বাড়বে। কেউ বলছেন, নাগরিক সুযোগ-সুবিধার আশা করে লাভ নেই। বাড়তি করের বোঝা চাপবে। তারপরও ভোটোৎসবে অংশ নিতে কার্পণ্য নেই কারও। পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন সবাই।
স্থানীয় বাসিন্দা আশিকুর রহমান সারাংলাকে বলেন, ‘নন্দীপড়া সিটি করপোরেশনের অন্তুর্ভুক্ত হওয়ার পর এটিই প্রথম নির্বাচন। তাই সবার মধ্যে অন্যরকম আগ্রহ তৈরি হয়েছে। নৌকা-ধানের শীষ যেটাই জিতুক স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রত্যাশা থাকবে, নাগরিক সুবিধাটা যেন ঠিক মতো পাওয়া যায়।’

ষাটোর্ধ্ব বয়সী আবদুস সালাম ব্যাপারি সারাবাংলাকে বলেন, ‘যে গ্রাম এখন দেখছেন, এটা বনশ্রী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আস্তে আস্তে শহরটা গ্রামের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। নতুন করে আবার এটিকে সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আগে আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যানের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। এখন এলাকার সমস্যা সমাধানে মেয়রদের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। সুতরাং নির্বাচনে যিনিই জিতুন, এলাকার উন্নয়ন যেন হয়— এটিই আমাদের প্রত্যাশা।’

আওয়ামী লীগ গ্রামীণ আবহ ঢাকা সিটি করপোরেশন নন্দীগ্রাম বিএনপি ভোট

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর