সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় মাধ্যম নাটক: সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী
১৬ জানুয়ারি ২০২০ ১০:২৬
চট্টগ্রাম ব্যুরো: নাটককে সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় মাধ্যম উল্লেখ করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘যখন কোনো সংকট সৃষ্টি হয়, তখন নাটক মঞ্চস্থ হয়। সকল নাটকের মধ্য দিয়ে জাতি জাগরিত হয়।’
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৮টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নাট্যকলা বিভাগে আয়োজিত চতুর্থ বার্ষিক নাট্যোৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৮ সালে নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখা হয়েছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের মধ্য দিয়ে। ধর্মের ভিত্তিতে যখন ভারত পাকিস্তান যখন দুটি রাষ্ট্রে দুভাগ হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ঠিকই বুঝেছিলেন, এই দেশ আমাদের না। এই রাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার এক বছরের মাথায় বাংলা ভাষার ওপর যে আক্রমণ তিনি ১৯৪৮ সালে তিনি রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ১৯৬৯ দিকে তাকিয়ে দেখি যে, বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন, যেভাবে ভাষার ওপর আক্রমণ বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোথাও এই বাংলা থাকবে না।
তিনি বলেন, সেই সফল স্ক্রিপ্টে সেই নাটক রচিত হয়েছিল ১৯৪৭, ১৯৪৮ সালে জাতির জনকের হাত দিয়ে। ধাপে ধাপে পৃথিবীর সফল মঞ্চায়ন হয়েছে জাতির জনকের হাত দিয়ে। ১৯৪৭, ৪৮, ৫২, ৫৬, ৫৪, ৫৮, ৬২, ৬৬, ৬৯ ও ৭০-এর ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। বঙ্গবন্ধু তার নাটক লিখেছিলেন সেটি সফল মঞ্চায়ন করলেন ১৯৭০-এর দিকে। ২৬ ডিসেম্বর নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের মধ্য দিয়ে। যখন জাতির সর্বনাশ হতে শুরু করেছে, যখন জাতি তাদের মত হারায় তখন এই নাটক তার ভাষা দিয়ে মুক্তমঞ্চে মঞ্চস্থ হয়। সেখানে কিন্তু জীবনের বাস্তবতায় সফল ছোঁয়া থাকে। সকল আশা ভরসা তৈরি হয় এই মঞ্চ থেকে।
এর আগে ‘মুক্তির চেতনায় শিল্পীত সৃজন’ এই স্লোগানে চতুর্থবারের মতো বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে বিশ্ববিদ্যালয় নাট্যকলা বিভাগের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে প্রক্টর অফিস, প্রসাশিনক ভবন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ প্রদক্ষিণ করে উন্মুক্ত মঞ্চে এসে শেষ হয়। তারপরে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে এই নাট্যোৎসব শুরু হয়। তারপরে সন্ধ্যা ৮টার দিকে এই নাট্যোৎসব আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিন আখতার। মঞ্চে ছিলেন বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন।
আবুল মোমেন বলেন, ১৯৭৫ পরে আমাদের দেশে চবিসহ অনেকগুলো ক্যাম্পাস বাংলাদেশ বিরোধী লোকজনের দখল হয়েছিল। সেকারনে এই ক্যাম্পাসগুলোতে ২১ বছর ধরে কোনরকম সংস্কৃতি চর্চা, বাঙালি চেতনার সংস্কৃতি চর্চা করতে পারেনি।বাংলাদেশ হয়েছে রাজনৈতিক আন্দোলন, শেষের দিকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের। কিন্তু গোড়া থেকে কাজ করেছে ভাষা আন্দোলন এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার আন্দোলনও। ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকে জাগরণের ফলে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু জাদুকরী নেতৃত্বে বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। সেকারণে বাংলাদেশে জাগরণ ঘটেছিল। সকলের সৃজনশীল, সকলের প্রাণের উচ্ছ্বাস আছে। তারুণ্যের উচ্ছ্বাস হতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে।
উদ্বোধকের বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এই পরাধীন জাতিকে ১৯৭১-এর স্বাধীনতার মাধ্যমে মুক্তির নিশ্বাস নিতে দিয়েছিল। তার আদর্শ, অনুপ্রেরণায় আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি। আমরা মানচিত্র, পতাকা, নিজস্ব ভূ-খণ্ড পেয়েছি। ১৯৭৫ সালে নেমে আসে কালো আঁধার। যখন দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রী দেশের নেতৃত্ব হাতে নেন। তখন আবার আলোকবর্তিকা ফিরে আসে। চবি একসময় শিবিরের দাপট ছিল। এখন আর নেই। আমরা এখন মুক্তমঞ্চে নাটক করছি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, জেলা চিল্পকলা একাডেমি চট্টগ্রাম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম, নাট্যদল বিটার পরিচালক শিশির দত্ত, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী, নাট্যকলা বিভাগেন সভাপতি শামীম হাসান ও কুন্তল বড়ুয়া।
এই আয়োজন চলবে আগামী শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত।