চার যুবকের স্নেহে বড় হচ্ছে মেছো বাঘের ৬ বাচ্চা
১৮ জানুয়ারি ২০২০ ১২:৩৯
মৌলভীবাজার: মা হারা ছয়টি মেছো বাঘের বাচ্চা বড় হচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমী চার যুবকের মমতা ও ভালোবাসায়। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের উপজেলার সবুজবাগ এলাকায় সোহেল শ্যাম এর বাসায় মেছো বাঘের বাচ্চাগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করে এরইমধ্যে সুস্থ সবল করে তুলেছেন চার যুবক।
এরা হলেন সোহেল শ্যাম, খোকন থৌনাজাম, হৃদয় দেবনাথ এবং বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য্য বাপন। গত ২৩ নভেম্বর মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রাম থেকে বন বিভাগের লোকজনের সহায়তা নিয়ে এই মেছো বাঘের বাচ্চাগুলো উদ্ধার করেন ওই চার যুবক।
উদ্ধারের সময় এদের আনুমানিক বয়স ছিল ২০ দিন। এ বয়সটা অন্যান্য প্রাণীদের বেলায় তেমন সমস্যা না হলেও মেছো বাঘের বাচ্চাদের বেলায় শুধু চোখ ফুটতেই আরও বেশ কিছুদিনের প্রয়োজন হয়। মেছো বাঘের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রকৃতিগতভাবেই এদের জন্মের পর স্বাবলম্বী হতে ৪/৫ মাস সময় লাগে।
সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া ছোট ছোট ৬টি মেছো বাঘকে উদ্ধার করে চার জন বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের তত্ত্বাবধানে বড় করে তোলার জন্য দায়িত্ব দেন মৌলভীবাজার বন বিভাগ। সেই থেকে এখন পর্যন্ত সোহেল শ্যামের বাসায় এ চার যুবক পরম মাতৃস্নেহে এদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং বড় করে তুলতে সেবা করে যাচ্ছেন।
উদ্ধার হওয়ার পর ক্যাট মিল্ক খাওয়ানো হতো। তবে এখন তারা সুঠাম হওয়ায় বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে হালকা সেদ্ধ মাংস এবং মাছ খাওয়ানোর অভ্যাস করা হচ্ছে।
এই চার যুবকের একজন হৃদয় দেবনাথ জানান, মেছো বাঘগুলো নিজে নিজে যেন শিকার ধরতে পারে সেই অভ্যাস তৈরির চেষ্টা চলছে। আরেকটু বড় হলে বন বিভাগকে জানিয়ে মেছো বাঘের বাচ্চাগুলোকে নিরাপদ স্থানে অবমুক্ত করা হবে।
সরেজমিনে শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের সবুজবাগ এলাকায় সোহেল শ্যামের বাসার গিয়ে দেখা যায়, বাচ্চাগুলোকে ফিডার দিয়ে দুধ খাওয়াচ্ছেন চার যুবক। এই দুধ অর্থাৎ ক্যাট মিল্ক সাধারণতভাবে শুধু বিড়াল জাতীয় প্রাণীর জন্য, যাকে ক্যাট মিল্ক বলা হয়|। এগুলো বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে ঢাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়। এক প্যাকেট দুধে মাত্র ৩ দিন যায়। যদিও বর্তমানে বাচ্চাদের খাবারের সময় এবং পরিমাণ বেড়েছে ফলে এক প্যাকেটে দুই দিন যাচ্ছে।
একেকটি প্যাকেটের মূল্য ৬৫০ টাকা, যা তারা আপাতত নিজেরাই বহন করছেন। তবে বন বিভাগ জানিয়েছে, সমস্ত খরচ তারা দেবেন। এরইমধ্যে কিছু খরচ তারা দিয়েছেন।
হৃদয় দেবনাথ জানান, প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ এই বন্যপ্রাণী। হয়তো এই ছয়টি বাচ্চার মাকে আমাদের মতো কোনো এক মানুষ মেরে ফেলেছে বা ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য বন্যপ্রাণী রক্ষা করা কতটা যে প্রয়োজন তা যদি মানুষ উপলদ্ধি করতে পারতো হয়তো এমন করত না।
অপর যুবক খোকন সিংহ বলেন, ‘এত ছোট বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখাই সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ । আমরা আমাদের সাধ্যমতো সেবা করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চারজন মিলে যতটা পারছি খরচ মেটাচ্ছি। এত ছোট বাচ্চাদের খাওয়ানোর মতো কিছুই নেই। গরুর দুধ বা প্যাকেট দুধ খাওয়ালে হয়ত পেট খারাপ করে এরা মারা যেত। তাই তাদের জন্য ঢাকা থেকে দুধ এনে খাওয়াচ্ছি।’
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. মনিরুল এইচ খান বলেন, ‘বন্যপ্রাণী নিয়ে এই চার যুবকের কাজগুলো আমি সংবাদপত্রে দেখি। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখছি, এটি নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয় কাজ।’
ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ইউনিট পরিচালক মিহির কুমার দো বলেন, ‘নিরীহ বন্যপ্রাণীদের ভালোবেসে যেভাবে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি রক্ষার্থে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এই চার যুবকের মতো প্রত্যেককেই বন্যপ্রাণী রক্ষার্থে এগিয়ে আসার জন্য আমার অনুরোধ রইলো। প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’