নতুন উদ্ভাবনে উৎফুল্ল ডিজিটাল মেলার দর্শনার্থীরা
১৮ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:৪১
ঢাকা: তিনদিনের ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় প্রযুক্তির সর্বশেষ উদ্ভাবন তুলে ধরা হয়েছে। দেখানো হয়েছে জি-ফাইভের ভবিষ্যত ব্যবহার। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের বাহারি সব অফার দর্শনার্থীদের জানিয়ে দিয়েছে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তুলে ধরেছে তাদের নতুন নতুন পণ্য। এছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রচারিত দেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং অন্যান্য প্রযুক্তিও দেখানো হচ্ছে। আর এসব দেখে খুশি ও উৎফুল্ল হওয়ার কথা জানিয়েছেন দর্শনার্থীরা। সব মিলিয়ে মেলায় প্রযুক্তিপ্রেমিদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনব্যাপী চলমান ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার শেষ দিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই মেলার আয়োজন করে। এতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। মেলার স্লোগান ছিল ‘প্রযুক্তির বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় প্রযুক্তির মহাসড়ক।’
মেলায় ফাইভ-জি প্রযুক্তি দেখাচ্ছে হুওয়ায়ে। স্টলে থাকা হুওয়ারের নির্দিষ্ট হ্যান্ডসেট ব্যবহার করে ফাইভ-জির অভিজ্ঞতা পাওয়া যাচ্ছে। ফোনটিতে ফাইভ-জির সাইনও দেখাচ্ছে। ইন্টারনেট ব্যবহারে ১.৬ জিপিএস পর্যন্ত গতি পাওয়া যাচ্ছে। এর মাধ্যমে রোবট গেইমসহ প্রযুক্তির বিভিন্ন ব্যবহার দেখানো হচ্ছে স্টলটিতে। এরিকসন তাদের স্টলে ফাইভ-জি ব্যবহার করে কানেক্ট অ্যাম্বুলেন্স নামের একটি সেবা দেখাচ্ছে। রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় এর মধ্যমে অ্যাম্বুলেন্সেই কিছু টেস্ট ও ডায়াগনসিস করে রাখা যাবে। এছাড়া স্টলটিতে ফিউচার অব মিক্সড রিয়েলিটি নামের একটি প্রযুক্তি দেখানো হচ্ছে। কোনো একটি ভবন নির্মাণের সময় এর নকশা, ভবনের ভেতরের কাঠামো সরাসরি অন্যস্থান থেকে সংশ্লিষ্টরা দেখতে পাবেন। আর ভিআর বক্স দিয়ে ভবনের ভার্চুয়াল রিয়েলিটি দেখা যাচ্ছে। দেখা যাবে ৩৬০ ডিগ্রি ভিউও। এছাড়াও স্টলটিতে ভবনের নিরাপত্তায় রোবটের ব্যবহারও দেখানো হচ্ছে।
মেলা প্রাঙ্গণে নয়টি স্ট্যান্ড নিয়ে বড় পরিসরে নির্মিত ‘জেডটিই বুথ’ প্রাঙ্গণে ব্যবসায় সমাধান, টার্মিনাল অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ‘সিস্টেম সলিউশন’ প্রদর্শনী এলাকায় ‘সহজীকরণের মাধ্যমে বড় কিছু’ তুলে ধরা হচ্ছে। এছাড়াও ফাইভ জি প্রদর্শনীর পাশাপাশি দর্শনার্থীদের কাছে নেটওয়ার্ক একসিলারেশন, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ চাহিদাভিত্তিক পরিবহন নেটওয়ার্ক, স্বয়ংস্ক্রিয় চিপসেটের পাশাপাশি ‘কমন কোর’ নামে সেবা তুলে ধরা হচ্ছে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দিতে। ফলে উন্নত ও ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে দর্শনার্থীরা ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে জেডটিই প্যাভিলিয়নে ভিড় করছে।
মেলায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সর্ভিস প্রোভাইডাররা তাদের বিভিন্ন সেবা তুলে ধরছে। ২০ এমবিপিএস ইন্টারনেট মাত্র ১ হাজার টাকায় দিচ্ছে অপটিম্যাক্স বিডি ডটনেট। ২৫ এমবিপিএস দেড় হাজার টাকা। প্রায় একই দামে সেবা দিচ্ছে কেএস নেটওয়ার্ক লিমিটেড। ব্রডব্যান্ড ৩৬০ ডটকম ৩০০ টাকায় ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। তবে এ সেবা নিতে হলে একই ভবনে ১০ জনের গ্রুপ তৈরি করতে হবে।
মেলায় কমিউনিটি ভিশন সেন্টার তাদের সেবা তুলে ধরছে। চোখ বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিতে এর সেন্টারগুলোতে কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতি থাকে। সঙ্গে ভিশন সেন্টারে থাকে দুজন প্রশিক্ষত নার্স। রোগী গেলে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে রোগীর বিস্তর বিবরণ অনলাইনে আপডেট করে দেয়। বেইস সেন্টারের একজন ডাক্তার রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনস্থ জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসাপাতাল। এখান পর্যন্ত কমিউনিটি ভিশন সেন্টার থেকে চোখ বিষয়ে ১ লাখ ২০ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্দষ্ট কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে চোখের চিকিৎসা দেওয়ার এই তথ্য মেলায় তুলে ধরা হচ্ছে।
এছাড়া মেলায় ওয়ালটন স্মার্ট রেফ্রিজারেটর দেখাচ্ছে। অ্যাপসের মাধ্যমে এই ফ্রিজের ভেতরে থাকা খাবার, ফল, মাছ-মাংস ও ডিসসহ সব কিছুর তথ্য জানা যাবে। এজন্য ফ্রিজে কী খাবার আছে তা জানার জন্য সঙ্গী বা গৃহকর্তীর ধারস্থ হতে হবে না। এছাড়া এই ফ্রিজের সামনে একটি মনিটর রয়েছে। সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো বার্তা লিখে রাখা সম্ভব। এই ফ্রিজটি বাজারে এখনও উন্মোচিত হয়নি। মেলায় তা প্রদর্শন করা হচ্ছে।
মেলায় আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনামিকা দাস বলেন, ‘মেলায় বেশকিছু নতুন সেবা দেখলাম। ফাইভ-জির ব্যবহারও প্রথমবারের মতো দেখলাম। সব মিলিয়ে প্রযুক্তির এগিয়ে যাওয়া দেখে ভালোই লাগছে। সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে।’
মহাখালী থেকে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সজীব বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় বেশকয়েকটি সেমিনারে অংশ নিয়েছি। প্রযুক্তির সর্বশেষ আপডেট সম্পর্কে এখান থেকে নানা তথ্য জানতে পেরেছি। আর বেশিরভাগ স্টলগুলোতে ফাইভ-জিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রযুক্তির নানা সেবা দেখে আমরা খুশি।’
মেলায় ৩৫ থেকে ৪০টি আইএসপি প্রতিষ্ঠান, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল, ট্রিপল প্লে (এক ক্যাবলে ল্যান্ডফোনের লাইন, ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ, মোবাইল অ্যাপস, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা ও প্রযুক্তি) ইত্যাদি প্রদর্শন করছে। এছাড়াও ওয়ালটন, স্যামসাং, সিম্ফনির মতো প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত পণ্য দেখাবে, দেশি সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো তাদের তৈরি সফটওয়্যার ও সেবা উপস্থাপন করছে। টেলিকম অপারেটরগুলো তাদের ভয়েস, ইন্টারনেট ও মূল্য সংযোজিত সেবা (ভ্যাস) দেখাচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলায় ১০০টি স্টল, মিনি প্যাভিলিয়ন ও প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ডিজিটাল অগ্রগতি তুলে ধরা হচ্ছে। মেলায় আছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পৃথক কর্নার। ওই কর্নারে প্রযুক্তির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবনী তুলে ধরা হচ্ছে।