মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিচার করতে সুপারিশ করব: ইয়াংহি লি
২৩ জানুয়ারি ২০২০ ১৪:৫৪
ঢাকা: মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ করবেন জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত অধ্যাপক ইয়াংহি লি।
জাতিসংঘের বিশেষ দূত এমন সময়ে এই তথ্য জানালেন যখন কিছুক্ষণ পরেই আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে অন্তর্বর্তী আদেশ দেওয়ার কথা।
জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন তাদের প্রতিবেদনে জানায়, মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনী এবং সরকারের সহযোগিতায় গণহত্যা চালানো হয়েছে।
জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত অধ্যাপক ইয়াংহি লি বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে বলেন, আজকের দিনটি ঐতিহাসিক কেননা আজ জাতিসংঘের ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা অভিযোগের বিষয়ে বিচারকরা আদেশ দিবেন। আমি আমার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সব সত্য তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করব। আমি কোনো পক্ষপাতিত্ব করব না। আমার প্রতিবেদনে সুপারিশ করব যে সিয়েরালিওন, রুয়ান্ডা এবং বসনিয়া হার্জেগোভিনায় যেভাবে গণহত্যার বিচার হয়েছে, মিয়ানমারের ক্ষেত্রেও তা হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, গত ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আমি উত্তর রাখাইন সফরে দেখতে পাই, ওখানকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অমানবিক অত্যাচার হয় এবং চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। এরপর ফেব্রুয়ারিতে আমি বাংলাদেশ সফর করি। যেখানে জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার থেকে ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এরপর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আমি মানবাধিকার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য মিয়ানমার সফরের আবেদন জানালে মিয়ানমার সরকার ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে আমার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে। তখন আমি বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ সফর করি। বাংলাদেশের একাধিক আশ্রয় শিবির আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলাপ করে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি জানার চেষ্টা চালাই। এরপর আমি একাধিক সময়ে রাখাইন সফরের আবেদন করলেও মিয়ানমার সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে দেয়।
বিশেষ দূত অধ্যাপক ইয়াংহি লি বলেন , জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে আমি অবশ্যই সত্য বলব এবং সবাইকে তা জানাব। আমার ৬ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে মিয়ানমারে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, ধর্ষণ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার মতো মানবাধিকার পরিস্থিতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় ভোগান্তির শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ করে জেনেছি যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যরা এবং দেশটির নিরাপত্তা কর্মীরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর ধর্ষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন এবং হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। এসব মানবাধিকার লঙ্গনের ঘটনায় এখনও মিয়ানমারে বিচার পাওয়ার কোনো পরিবেশ নাই। মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন মেনে চলা উচিত, এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্যোগী হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস মিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সে প্রতিবেদন বাস্তবায়নের বিষয়ে আমি আমার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে শক্তভাবে সুপারিশ করব। কেননা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস মিশনের প্রতিবেদনে সত্য তথ্য উঠে এসেছে। আজকের দিনটি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য ঐতিহাসিক দিন। কেননা জাতিসংঘের ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার দায়ের করা অভিযোগ ঘিরে বিচারকরা আদেশ দিবেন। আজকের দিনে বিচারকরা যে আদেশ দিবেন তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
বিশেষ দূত অধ্যাপক ইয়াংহি লি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন থাকবে যে, মিয়ানমারে ঘটমান মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার দলিলগুলো সংরক্ষণ করে নির্যাতিত, নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর বিচার পাওয়ার পথ সুগম করতে উদ্যোগ নিন।
তিনি আরও বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় মিয়ানমারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে উদ্যোগ নিতে চাপ দিব। নিরাপত্তা পরিষদে চীন এবং রাশিয়া মিয়ানমারকে যেভাবে সমর্থন জানাচ্ছে তা লজ্জাজনক। বিশেষ করে চীনের ক্ষেত্রে আমার আশা থাকবে যে চীন বিশ্বের টপ লিডার হওয়ার দিকে আগুয়ান হচ্ছে, কিন্তু মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে না পারলে বিশ্বনেতা হওয়া সম্ভব না। তাই আমার আশা থাকবে যে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্ব যে লড়াই চালাচ্ছে যেখানে চীনও ইতিবাচক হিসেবে যোগ দিবে।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প বিশেষ দূত ইয়াংহি লি মিয়ানমার রাখাইন রোহিঙ্গা ইস্যু