Sunday 13 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘মিয়ানমার আদেশ বাস্তবায়ন করে কি না দেখার দায়িত্ব জাতিসংঘের’


২৪ জানুয়ারি ২০২০ ০১:২৩ | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৪০
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সু চি: ফাইল ছবি

ঢাকা: আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (আইসিজে) আদেশ যেন মিয়ানমার বাস্তবায়ন করে তা নিশ্চিত করা এখন জাতিসংঘের দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) ঢাকার একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন।

আইসিজে রুলিং অন দ্য প্রফেশনাল মেজারস অন রোহিঙ্গা জেনোসাইড শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ।

এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, ঢাকায় কানাডা মিশনের আন্তর্জাতিক সহায়তা বিষয়ক বিভাগের প্রধান ফেডরা মুন মরিচ, সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাহফুজুর রহমান এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতিসংঘ অনুবিভাগের মহাপরিচালক নাহিদা সোবাহান অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন এবং একাধিক প্রশ্নের জবাব দেন।

বিজ্ঞাপন

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে) মিয়ানমারকে চারটি অন্তর্বর্তী আদেশ দিয়েছেন। এগুলো হলো— মিয়ানমার হত্যাযজ্ঞের সাক্ষ্য-প্রমাণ নষ্ট করতে পারবে না, মিয়ানমারকে জোনোসাইড কনভেনশন মেনে চলতে হবে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা তৎপরতা চালানো যাবে না এবং ৪ মাসের মধ্যে আদেশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি জানাতে হবে।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমরা এখনো বিশ্বাস করি রোহিঙ্গা সংকট কেটে যাবে। আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশ যেন মিয়ানমার পালন করে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ওপর বর্তায়। এই দায়িত্ব পালনে জাতিসংঘের পাশাপাশি বাংলাদেশও কাজ করবে।

তিনি আরও বলেন, আইসিজের এ মামলা করার অনেক আগে থেকে বাংলাদেশ প্রস্তুতি প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিল। জেনেভা কনভেনশন মেনে বিচার চাওয়ায় আমরা আইসিজে ও এর সদস্যদের শুভেচ্ছা জানাই। এটি বিশ্বের সব গণহত্যার ভুক্তভোগীর জন্য একটি জয়। বাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, যারা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান দেখায়।

আমরা বিশ্বাস করি, আইসিজের এই রায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপদে ফেরা নিশ্চিত করবে। আমরা মিয়ানমার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাই তারা আইসিজের নির্দেশ যথাযথ পালন করবে— বলেন মাসুদ বিন মোমেন।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, গাম্বিয়া কথায় অনেক কিছুই উঠে এসেছে যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তথা জাতি সংঘ ও কফি আনান কমিশনে আগেই বলা হয়েছে। আমরা গাম্বিয়ার এ পদক্ষেপের প্রশংসা করি। আমরা বিশ্বাস করি, গাম্বিয়ার এ পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গাদের আস্থা ফিরে আসবে এবং তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে। এই রায়ের পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন ও রাখাইনে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে এ ইস্যুতে সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছি। তবে এই সংকট সমাধানে আমরা আন্তর্জাতিকভাবেও চেষ্টা চালিয়ে যাব।

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশ পুরো বিশ্বের জন্য একটি বড় উপহার। কেননা, এই আদেশের মাধ্যমে একটি জাতি তাদের পরিচয় ফিরে পাবে। চীন, জাপান, ভারতসহ যেসব বন্ধুদেশগুলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে সমর্থন জানিয়ে যাচ্ছে। তাদের উচিত এই রায়ের পর রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা নেওয়া।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশ মূলত মানবতার জয়, মানবাধিকারের জন্য বড় উপহার। এই রায়ের ফলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের জাতি পরিচয় ফিরে পাবে। পাশাপাশি এই রায়ের মাধ্যমে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার হলো যে, বিশ্বের কোনো রাষ্ট্র কোনো জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালালে আইনের মুখোমুখি হতে হবে। স্বেচ্ছাচার শাসকদের জন্য এই রায় একটি বড় শিক্ষা।

ঢাকায় কানাডা মিশনের আন্তর্জাতিক সহায়তা বিষয়ক বিভাগের প্রধান ফেডরা মুন মরিচ বলেন, আজকের দিনটি বড়ই আনন্দের। আশা করব, আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সব পদক্ষেপ নেবে।

সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল মাহফুজুর রহমান বলেন, এই সংকটের সমাধানে তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ আমরা করব। আমরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখব, যেন সহজে সমাধান আসে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আইসিজের অন্তর্বর্তী আদেশ আনন্দের কিন্তু নেপিডো তা ভালোভাবে নেয়নি। রাখাইন এখনো অস্থিতিশীল। আরাকান আর্মি প্রতিদিনই সেখানে চার-পাঁচটি হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। আরাকান আর্মিকে কারা সমর্থন দিচ্ছে তা প্রকাশ্য নয়। ওই দিক দিয়ে সমুদ্র বিষয়ে চীন মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করছে। তাই সার্বিক বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের এখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কেমন হবে তা আরেকবার ভেবে ঠিক করতে হবে।

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ফারুক সোবহান বলেন, আজকের দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইসিজে রায়ের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাড়ি-ঘর ফিরে পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলো। সংকট সমাধানে এখন মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ আরও বাড়বে।

ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগ মিয়ানমার রোহিঙ্গা ইস্যু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর