পুড়ে যাওয়া স্বপ্ন কুড়াতে ব্যস্ত বস্তিবাসী
২৪ জানুয়ারি ২০২০ ১১:০০
ঢাকা: শীতের ভোরের শুরুতেই ভয়াবহ আগুন পুড়িয়ে বস্তিবাসীকে সর্বস্বান্ত করেছে। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বেশিরভাগ অফিস বন্ধ থাকায় পরিবারের সদস্যরা সবাই মিলে যেখানে আনন্দ করার কথা ছিল, সেখানে আগুন যেন যমের মতো হাজির হয়ে সব লণ্ডভণ্ড করে দিল। এখন বস্তিবাসী পুড়িয়ে যাওয়া স্বপ্ন কুড়াতেই ব্যস্ত।
শুক্রবার ভোর ৪টা ১২ মিনিটে রাজধানীর মিরপুরে চলন্তিকা বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নেভানো গেলেও বস্তির বেশিরভাগই পুড়ে গেছে। শুক্রবার সকালে চলন্তিকা পোড়া বস্তিতে গেলে পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র কুড়াতে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় বস্তিবাসীকে।
আরও পড়ুন- চলন্তিকার আগুনে নিঃস্ব তারা
নাজমা বেগম। স্বামী মারা গেছেন কিছুদিন আগে। কাজ করেন একটি গার্মেন্টসে। ছেলেমেয়েসহ রাতে ঘুমিয়েছিলেন। আগুন-আগুন চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সবাই বের হন। পরে দেখলেন নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেছে আগুনে।
নাজমা বেগম আহাজারি করে বলেন, এই শীতে কোথায় থাকবো, কী পরবো আর কি খাব বুঝতে পারছি না। সবই তো পুড়ে গেছে। এখন পোড়া জিনিসই খুঁজছি, দেখি কিছু পাই কিনা। টাকা পয়সা, কাপড়চোপড় সবই তো গেছে।
এ বস্তির আরেক বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, আমার ঘরে কিছুই বাকী নেই। কিছুদিন আগে ঝিলপার বস্তিতে আগুন লাগলে সব পুড়ে যায় আমার। ওই সময় চলন্তিকার কিছু অংশ পুড়লেও বেশিরভাগ অংশই অক্ষত থাকে। কোনোরকমে চলন্তিকা বস্তিতে একটা ঘর ভাড়া নেই। এক ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে থাকি। আজ সেটাও পুড়ে গেলো। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে আবারও আমার সব পুড়ে গেলো। তাই পুড়ে যাওয়া ভাঙ্গাড়ি জড়ো করছি। এগুলো বেচলেও কিছু টাকা তো আসবে।
শাপলা বানু নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, গরীবের কোথায়ও সুখ নেই। আমরা শীতে মরি, পানিতে মরি। আগুনও আমাদের ছাড়ে না। ঘর পুড়ে গেছে। কোথায় থাকবো, কী খাবো এখনও চিন্তা করি নাই।
এ বস্তির বাসিন্দা কাজল মিয়া বলেন, চলন্তিকা বস্তিতে গ্যাসের লাইন অবৈধভাবে প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে সরবরাহ করা হয়েছে। বিদ্যুতের সংযোগ কোনটির বৈধ মিটার থেকে আবার কোনটির অবৈধ লাইন থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। গ্যাস লিকেজ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে ধারণা করছে বস্তিবাসী।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ভোর সোয়া ৪টার দিকে আগুন লাগে চলন্তিকা বস্তিতে। ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিটের দেড় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় সে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে ভোর পৌনে ৬টার দিকে।
চলন্তিকার এই আগুনে আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী অজ্ঞাত এক নারী দগ্ধ হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করেন। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
এর আগে, গত বছরের ১৬ আগস্ট সন্ধ্যা সোয়া ৭টার কিছু পরে মিরপুর ৭ নম্বর সেকশনের রূপনগর ঝিলপাড়ের এই বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস, র্যাব, পুলিশ ও ওয়াসার সম্মিলিত চেষ্টায় রাত ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এর আগেই পুড়িয়ে যায় বস্তির প্রায় তিন হাজার ঘর।
সে ক্ষত কাটতে না কাটতেই ফের আগুনের হলকা বয়ে গেল চলন্তিকায়।