দুটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে, দাবি বস্তিবাসীর
২৪ জানুয়ারি ২০২০ ১৭:১২
ঢাকা: রাজধানীর মিরপুরে রূপনগর এলাকায় চলন্তিকা বস্তিতে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ভোররাতের আগুন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার পেছনে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণকে কারণ হিসেবে দেখছেন বস্তিবাসী অনেকেই। তারা বলেছেন, আগুন লাগার কিছুক্ষণ পর বিকট শব্দে দুটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। এর পরপরই আগুন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ভয়াবহ আগুনে নিমিষেই পুড়ে ছারখার হয় অন্তত ২০০টি বস্তিঘর।
অগ্নিকাণ্ডের পর ভুক্তভোগী বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা হচ্ছিলো এই প্রতিবেদকের। তাদের দাবি, দমকল বাহিনীর কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই বস্তির অধিকাংশ ঘর পুড়ে যায়।
তারা জানান, এর আগে গত আগস্ট মাসে আগুনে যেসব বসতবাড়ি পুড়ে যায় তার বেশিরভাগ ছিল ঝিলপাড়ের। সেবার চলন্তিকা অংশের কিছুটা পুড়েছিল। ওইসময় যে অংশ রক্ষা পেয়েছিলো এবারের আগুনে মূলত সেই অংশটিই পুড়ে গেছে।
বস্তির চলন্তিকা অংশে বেশিরভাগ মানুষই নিজেরা ঘর করে বাস করতেন। কেউ কেউ ঘর ভাড়া করেও থাকতেন।
জোসনা বেগম নামে এক বস্তিবাসী জানান, তারা নিজেরা একটি ঘর বানিয়ে থাকতেন। এছাড়া আরও পাঁচটি ঘর ভাড়া দিতেন। তাদের সবগুলো ঘরই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। জোসনার জন্ম হয় এই বস্তিতেই।
তিনি বলেন, ‘আমার জন্মের আগ থেকে এই বস্তিতে বাবা-মায়ের বাস। আমার মায়েরও এখানে ১০টি ঘর রয়েছে। সেগুলোও ভাড়া দেওয়া ছিলো। যা সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
‘এখন আমরা খোলা জায়গাতেই থাকব, যখন টাকা হবে তখন আবার ঘর উঠাব,’ বলেন জোসনা বেগম।
অগ্নিকাণ্ডের সময়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনে যখন বের হই আমরা তখন আমার এবং মায়ের ঘরগুলো অক্ষত ছিল। এরপর একটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে। দেখি আগুন আরও বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। এরপর চোখের সামনেই ঘরগুলো পুড়ে গেলো। চেয়ে চেয়ে দেখলাম সব ধ্বংস হয়ে গেল।’
‘কিছুদিন পরপরই আমাদের বস্তিতে আগুন লাগে। ভোট নেওয়ার সময় নেতারা আমাদের কাছে আসেন। আর আগুন লাগলে আমাদের খোঁজ খবরও নেয় না ঠিকমতো,’ আক্ষেপ ঝরলো জোসনা বেগমের কণ্ঠে।
বস্তির আরেক বাসিন্দা ইয়ানুর বেগম জানালেন, রাত সাড়ে তিনটার দিকে আগুন লাগে।
তিনিও গ্যাস সিলিন্ডার বিষ্ফোরণের দাবি করে বলেন, প্রথমে ‘রনির মা’র (রহিমা হক) ঘরে আগুন দেখি। এর একটু পর একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। পরপরই আরও একটি গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয় তাতে দ্রুত গোটা বস্তিটা পুড়ে যায়।’
আমাদের দিকটায় ঘরগুলো আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসে। হাতে গোনা অল্প কয়েকটি ঘরের আগুন নেভাতে পারে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা, বলেন ইয়ানুর বেগম।
চলন্তিকা বস্তির বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধা মো. হানিফ বলেন, ‘গত বছর আগুন লাগার পর এই এলাকায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি সাইনবোর্ড লাগানো হয়। এতে বলা হয় নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের পুর্নবাসনের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্পের নির্ধারিত স্থান এটি। আমরা সাইনবোর্ড টানানোর পর হাইকোর্টে একটি রিট করেছি। ৩৬ জন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আরও কিছু লোকজন মিলে মোট ১২৬ জন এ রিটের পক্ষে স্বাক্ষর করেছি। রিটে জানতে চাওয়া হয়েছে এখানে যদি বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করে ভবন করা হয় সেই ভবনে কারা থাকবে? যদি বস্তিবাসীকে উচ্ছেদ করে অন্য কাউকে সেই ভবনে তোলা হয় তাহলে আমরা এই জায়গা ছেড়ে দেব না। আর যদি বস্তিবাসীদের জন্য এখানে ভবন করা হয় সেই ভবনে বস্তিবাসী থাকতে পারে তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
পারভীন নামে এক বস্তিবাসী আগুনে পুড়ে আহত হয়েছেন বলে জানান একজন। তিনি বলেন, মেয়েটি মানসিক প্রতিবন্ধী। আগুন লাগার কথা শুনে সবাই বের হলেও সে বের হয়নি। ফলে সে আগুনে পুড়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে পাঠায়।
আগুনে ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানতে চাইলে রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, চলন্তিকা বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে পারভীন (৪০) নামে এক নারী আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বাড়ি হিসেবে ধরলে পুড়ে গেছে শতাধিক। আর ঘর হিসেবে ধরলে ৪০০ থেকে ৫০০ ঘর পুড়ে গেছে।’
বাড়িগুলোর কোনোটি দুই তলা আবার তিন তলাও ছিল, একেকটি টিনশেড বাড়িতে ৫/৬টি করে ঘর ছিল বলে জানান ওসি আবুল কালাম।
চলন্তিকা বস্তিতে আগুনের ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান ও ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধণ বলেন, ‘আমরা যখন আগুন নেভাচ্ছিলাম তখনই সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। তবে কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে তা জানা যায়নি। তদন্ত চলছে, তদন্তের পর বিস্তারিত কারণ জানা যাবে।’
আরও পড়ুন
চলন্তিকার আগুনে নিঃস্ব তারা
পুড়ে যাওয়া স্বপ্ন কুড়াতে ব্যস্ত বস্তিবাসী
মিরপুরে চলন্তিকা বস্তিতে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ১৫ ইউনিট
দেড় ঘণ্টায় চেষ্টায় চলন্তিকা বস্তির আগুন নিয়ন্ত্রণে, দগ্ধ ১