৩২ বছর পর ‘দায়মুক্তি’ নিয়ে চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস পালন
২৪ জানুয়ারি ২০২০ ১৯:০৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো : ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ দিবসে সামরিক শাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আত্মাহুতি দেওয়া রাজনৈতিক কর্মীদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সহ বিভিন্ন সংগঠন। ৩২ বছর পর এবার দায়মুক্ত হওয়ার স্বস্তি নিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। ৩১ বছর ধরে গণহত্যার বিচার না পাওয়ার আক্ষেপ থাকলেও এবার দিবসটি এসেছে মাত্র চারদিন আগে রায় হওয়ার এক ভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের প্রবেশপথে গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে নির্মিত বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সভা-সমাবেশের মাধ্যমে দ্রুত গণহত্যার বিচারের রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সামরিক শাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম লালদিঘীর ময়দানে যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে নিহত হন ২৪ জন। আহত হন কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ। শেখ হাসিনার প্রাণনাশের চেষ্টা হিসেবে আলোচিত ঘটনাটি ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা’ হিসেবে পরিচিতি পায়।
এরশাদের পতনের পর ১৯৯২ সালে এই ঘটনায় মামলা দায়ের হয়। ঘটনার ৩২ বছর পর গত ২০ জানুয়ারি আদালত মামলার রায় ঘোষণা করে। তবে ঘটনার নির্দেশদাতা হিসেবে আলোচিত তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা মৃত্যুবরণ করায় মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। ‘হুকুমদাতা’ কোতোয়ালী থানার তৎকালীন পেট্রল ইন্সপেক্টর পলাতক গোবিন্দ চন্দ্র মণ্ডলের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়েছে। একইসঙ্গে কারাগারে থাকা আরও চারজন তৎকালীন পুলিশ কনস্টেবলের প্রাণদণ্ডের আদেশ হয়েছে। এরা হলেন- মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, শাহ মো. আব্দুলাহ এবং মমতাজ উদ্দিন।
শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শহীদ বেদিতে ফুল দেন। এ সময় এক সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে পুলিশ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে ২৪ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করে। এ গণহত্যা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত যা আদালতের রায়ে প্রমাণ হয়েছে। আজ ৩২ বছর পর এই রায়ে শহীদদের আত্মা শান্তি পেয়েছে, তাদের পরিবারদের মাঝে স্বস্তি এসেছে। আমরা জানি সামরিক স্বৈরাচার ও বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে এদেশে কলঙ্কিত গণত্যাগুলো সংগঠিত হয়। তাদের প্ররোচনায় এদেশে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটে। তাদের ব্যবহার করে ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট তারেক জিয়ার হাওয়া ভবন থেকে গাইডলাইন অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করা হয়। সেদিন শেখ হাসিনা অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও ২৬ জন নেতাকর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। কয়েকশ নেতাকর্মী গ্রেনেডের স্পিন্টারবিদ্ধ হয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করছে।’
মেয়র বলেন, ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং দেশকে বিপন্ন করে পেছনের দরজার দিয়ে ক্ষমতা দখলের জন্য ষড়যন্ত্র হয়েছে, হচ্ছে এবং হবেই। এই ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় অপশক্তিকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে নির্মূল করতে হবে।’
নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘যারা হত্যা, নাশকতা, সন্ত্রাস ও মৌলবাদ এবং জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় ও ইন্ধন দেয় তারা জাতির দুশমন। এরা আমাদের আশেপাশেই আছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘সামরিক স্বৈরশাসক কত ভয়ঙ্কর ও নিষ্ঠুর ঘাতকে পরিণত হতে পারে তারই প্রমাণ ২৪ জানুয়ারির চট্টগ্রাম গণহত্যা।’
নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন নগর কমিটির সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, সুনীল কুমার সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ ও শফিক আদনান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, বন ও পরিবেশ সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, উপ-দপ্তর সম্পাদক কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী।
এদিকে গণহত্যায় শহীদদের স্মরণ করে বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা শাখার নেতারা। সিপিবির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, মুক্তিযোদ্ধা বালাগাতউল্লাহ ও ফজল আহমদ এবং অমিতাভ সেন এ সময় ছিলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।