Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চীন থেকে ফেরা পদ্মাসেতু প্রকল্পের ৩৫ কর্মকর্তা ঘরে বন্দি


৩১ জানুয়ারি ২০২০ ১০:৫৮

ঢাকা: পদ্মাসেতুসহ দেশের যেসব উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের প্রকৌশলী শ্রমিক ও কর্মকর্তারা কাজ করছেন, সেসব প্রকল্প এলাকায় সতর্ক অবস্থা নেওয়া হয়েছে। পদ্মাসেতু এলাকায় মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে প্রকৌশলী ও শ্রমিকদের। এর মধ্যে চীনে ছুটি কাটিয়ে পদ্মাসেতু প্রকল্পের কাজে ফেরা ৩৫ চীনা কর্মকর্তা ঘরে বন্দি অবস্থায় সময় কাটাচ্ছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, সেই আশঙ্কা থেকেই ঘরের ভেতর সময় কাটাচ্ছেন চীন থেকে ফেরা এসব কর্মকর্তা। কারও সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎও করছেন না তারা। সেতু নির্মাণকারী কোম্পানির দেশীয় প্রধান লিও জিমিংও রয়েছেন এসব কর্মকর্তার মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ করছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। এই কোম্পানির প্রধান অফিস চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে। ওই শহর থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আর শহরটিকে এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে।

তবে হুবেই ছাড়াও চীনের প্রায় সব প্রদেশেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। ফলে চীন থেকে যারা আসছেন, তাদের বিশেষ সতর্কতার মধ্যে থাকার নির্দেশনা রয়েছে। তাছাড়া, করোনাভাইরাস ১৪ দিন পর্যন্ত সুপ্ত থাকতে পারে শরীরে। ফলে ভাইরাসের লক্ষণ না থাকলেও চীন থেকে আসা ব্যক্তিদের অন্তত ১৪ দিন বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। সে নির্দেশনা অনুযায়ীই পদ্মাসেতু প্রকল্পের এসব কর্মকর্তা ঘরবন্দি অবস্থায় আছেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, পদ্মাসেতুকে কর্মরত বেশ কয়েকজন চীনা কর্মকর্তা তাদের নববর্ষের ছুটিতে দেশে গিয়েছিলেন। গত সপ্তাহের বিভিন্ন সময় তারা দেশে ফিরেছেন। তাদের কারও মধ্যেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ নেই। তারপরও যেহেতু ১৪ দিন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই তাদের সবার কাছ থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের একজন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, পদ্মাসেতু প্রকল্পের মূল কাজের সঙ্গে উহানের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কারণ সেখানেই পদ্মাসেতু প্রকল্প নির্মাণকারী কোম্পানির প্রধান কার্যালয় এবং সেই সেখানেই যাতায়াত সবচেয়ে বেশি হয়।

পদ্মাসেতুর চারটি স্প্যান এখনো চীনে নির্মাণ বাকি রয়েছে। চীনা নববর্ষের ছুটি শেষে সেই নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেই নির্মাণ কাজে বাধা পড়তে পারে।

এদিকে, পদ্মাসেতুর প্রকল্প এলাকা থেকে নতুন করে কেউ চীনে ছুটি কাটাতে বা সফরে যাচ্ছেন না। তবে অনেকেই চীনা নববর্ষের ছুটিতে চীনে গিয়েছিলেন এবং এখনো ফেরেননি। তাদের বাংলাদেশে ফিরতে দেরি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অবশ্য সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের কারণে পদ্মাসেতুর কাজ বাধাগ্রস্ত হবে না। তিনি বলেন, পদ্মাসেতুতে এক হাজারের মতো চীনা শ্রমিক বা কর্মী কাজ করে। এর মধ্যে দেড়শ জন শিফটিং ছুটিতে থাকে। এতে আমাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বা পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজে অসুবিধা তৈরি হবে না। আমাদের কর্মকাণ্ড কোনোভাবে বিঘ্নিতও হচ্ছে না। কারণ এর আগেও অনেকবারই এক থেকে দেড়শ জন শিফটিং ছুটিতে গিয়েছে। তাতে সেতুর নির্মাণ কাজে কোনো সমস্যা হয়নি।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ মূল সেতু নির্মাণের কাজ করছে। আর প্রকল্পের নদী শাসনের কাজ করছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। এর মধ্যে সিনোহাইড্রোর প্রধান কার্যালয় চীনের বেইজিংয়ে হলেও মেজর ব্রিজের প্রধান কার্যালয় হুবেইয়ের উহানে।

এর আগে, গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়। এরপর ধীরে ধীরে গোটা চীনে ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। চীনের বাইরেও অন্তত ১৮টি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে চীনে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

এদিকে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর খবর এখনো পাওয়া যায়নি। তবে প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতালে স্থাপন করা হয়েছে আইসোলেশন ইউনিট। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে চীন ফেরত যাত্রীদের দেশে ঢোকানো হচ্ছে।

করোনাভাইরাস ঘরে বন্দি চীন থেকে ফেরা চীনা কর্মকর্তা নববর্ষের ছুটি পদ্মাসেতু পদ্মাসেতু প্রকল্প

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর