আমি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করি: আতিকুল ইসলাম
৩১ জানুয়ারি ২০২০ ২০:৩৯
ঢাকা: ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে পদপ্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ সময়ে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি ও ইশতেহার নিয়ে প্রার্থীরা চেষ্টা করেছেন ভোটারদের কাছে নিজেদের বার্তা পৌঁছে দিতে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামও কাটিয়েছেন ব্যস্ত সময়।
নির্বাচনি প্রচারের শেষ দিনে সারাবাংলার সঙ্গে কথা হয় ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান নির্বাচনি গণসংযোগে তার অভিজ্ঞতার কথা, তার কাছে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথাগুলো।
সারাবাংলা: এবারের নির্বাচনি প্রচারের সময়ে অনেকেই অভিযোগ করেছে শব্দ দূষণের, এমনকি প্রচারের জন্য ব্যবহার হওয়া পোস্টারে পলিথিন ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে অনেক পরিবেশবিদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এগুলো কীভাবে দেখছেন?
আতিকুল ইসলাম: পোস্টারে শহরে সৌন্দর্য নষ্ট হয়। প্রথমত, নির্বাচন কমিশনের কাছে আমার আহ্বান, তারা এমন নির্দেশনা দিক যেন পোস্টার ব্যবহার করা না যায়। আমি এরইমধ্যে নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছি, ভবিষ্যতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে নির্বাচনি প্রচারণা চালানো যায় কিনা সেই বিষয়ে যেন ভাবা হয়। শহরের কিছু নির্দিষ্ট স্থানে যদি ডিজিটাল ব্যানার বা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রার্থীর প্রচারণা চালানো হয় সেটি ভেবে দেখতে পারে নির্বাচন কমিশন।
দ্বিতীয়ত, নির্বাচনি প্রচারের কারণে যদি নগরবাসীর বিন্দুমাত্র জনদুর্ভোগও হয়ে থাকে তবে সেটির জন্য সবার উদ্দেশ্যে আমি এরইমধ্যে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানিয়েছি। প্লাস্টিকের যে সকল পোস্টার আছে নির্বাচন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সব ধরনের পোস্টার সরিয়ে নেওয়া হবে।
সারাবাংলা: নির্বাচনি প্রচারের সময় নগরবাসীর আকাঙ্ক্ষাকে কীভাবে দেখছেন? সেই আকাঙ্ক্ষাকে কী কোনোভাবে চ্যালেঞ্জিং মনে করছেন?
আতিকুল ইসলাম: ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে নির্বাচনি গণসংযোগ শুরু করেছিলাম। এ সময়ে আমি মানুষের কাছে গিয়েছি, শুনেছি তাদের কথা, বলেছি আমার কিছু কথা। এই সময়ে দেশে শৈত্যপ্রবাহ গেছে, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হয়েছে মাঝে একদিন আর ট্রাফিক জ্যাম ও ধূলো-বালি তো আছেই। সব কিছুর বাধা পার হয়ে সবাইকে দেখলাম একটি উৎসবের আমেজ নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। কেউ প্লেকার্ড নিয়ে, আবার কেউ বা স্লোগান ধরে জয় বাংলা বলে। বাসার ছাদ থেকেও দেখেছি অনেককে ভি চিহ্ন দেখিয়ে আমাদের সঙ্গে সমর্থন জানাতে আবার কাউকে দেখেছি হাত নাড়িয়ে নিজেদের একতা প্রকাশ করেছে। স্কুলের বাচ্চাদের দেখেছি নৌকা, নৌকা বলে স্লোগান দিতে আবার কাউকে দেখেছি রাস্তা থেকেই আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে।
এরই মাঝে আমি চা বানিয়ে খাওয়ালাম একদিন, অবসর সময়ে আমি গান করেছি, সাইকেল চালিয়ে প্রচারণা করেছি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে আমরা নির্বাচনি প্রচার চালিয়েছি। সবকিছু ছাপিয়ে যে বিষয়টি খেয়াল করে দেখলাম তা হলো সবাই খুব গুরুত্ব সহকারে দেখছে এই নির্বাচনকে। অর্থাৎ মানুষের প্রত্যাশা কিন্তু অনেক বেড়ে গেছে।
একটি অপরিকল্পিত শহরকে পরিকল্পিত করা যেমন চ্যালেঞ্জিং ঠিক একইভাবে মানুষের প্রত্যাশা যেভাবে বেড়েছে তা পূরণ করাও অনেক চ্যালেঞ্জিং। তবে সেই চ্যালেঞ্জ পূরণের কাজ কাউকে না কাউকে তো শুরু করতেই হবে। শুরু করলেই এর শেষ হবে নতুবা শুরুই করা হবে না—এটা আমি বিশ্বাস করি। নিজে যেহেতু আমি একজন ব্যবসায়ী যে শূন্য থেকে উঠে এসেছি। তিল তিল করে গড়ে তুলেছি নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেখানে এখন আমার শ্রমিক ভাইবোনদের মুখে আমি হাসি ফোটাতে পারি। সেটা গড়ে তোলা যেমন চ্যালেঞ্জিং ছিল আমি ঢাকাকে পরিকল্পিত ভাবে গড়ে তোলার চ্যালেঞ্জকেও সেভাবে নিতে চাই।
সারাবাংলা: ৯ মাস আপনি মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সময়ে দেখেছেন এই শহরের অনেক সমস্যাই যেগুলো সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন আপনি। আমাদের দেশে অনেকেই বলে নির্বাচনের সময়ে অনেকেই প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু পরে ভুলে যান। সেই বিষয়ে কিছু বলবেন?
আতিকুল ইসলাম: ৯ মাসের অভিজ্ঞতা আসলে আমাকে অনেক কিছুই বুঝতে শিখিয়েছে। আমি এই সময়ে কাজ করে গেছি। চেষ্টা করেছি সমস্যার স্থানগুলো চিহ্নিত করতে আর সেই হিসেবেই আমার নির্বাচনি ইশতেহার দিয়েছি। আর এ জন্যেই আমার যে নির্বাচনি ইশতেহার আছে তা সম্পূর্ণ বাস্তবমুখী।
আমি বলেছি সেবাগুলো অটোমেশন করব। অনেকের ধারণা অটোমেশন করলে কী তবে টাকা বেশি লাগবে বা সিটি ট্যাক্স বেড়ে যাবে? আমি বলছি না, টাকা তো লাগবেই না বরং অটোমেশন পদ্ধতিতে আমাদের অনেক দুর্ভোগ কমে যাবে।
আমরা বলেছি কিছু স্থানে আমরা স্মার্ট নেইবারহুড হিসেবে গড়ে তুলব। এটা আমাদের করতেই হবে। স্মার্ট নেইবারহুডের মানে কী? এর মানে হলো গাড়ির ট্রাফিক সিস্টেম কী হবে, কোন জায়গায় কমিউনিটি সেন্টার হবে, কোন স্থানে স্কুল ও লাইব্রেরি হবে বা পার্কিং হবে এমন পরিকল্পনা সহ স্মার্ট নেইবারহুড বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আছে। আমরা প্রথমে তিনটি ওয়ার্ডে এটা শুরু করতে চাই, ধীরে ধীরে সব ওয়ার্ডেই স্মার্ট নেইবারহুড করতে পারব বলে আমরা বিশ্বাস করি। বিশেষ করে আমার নতুন যে ১৮টি ওয়ার্ড আছে সেগুলোতে। সেগুলোর এখন খুবই খারাপ অবস্থা। সময় এসেছে এখন সুন্দর করে ঢেলে সাজানোর জন্যে। সেখানে রাস্তা, খেলার মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার, ফুটপাথ, ড্রেন কিছুই নেই। সেসব স্থানে যারা বাস করেন তারাও কিন্তু এদেশের নাগরিক। তারাও কিন্তু এ ঢাকার ভোটার।
আমি কথায় নয়, কাজে বিশ্বাস করি আর তাই চেষ্টা করব নির্বাচিত হলে একের পর এক প্রতিশ্রুতি পূরণ করে যেতে। ভোটারদের কাছে শুধু আমি একটিই অনুরোধ করব, যেন আমার ওপরে আস্থা রাখে।
সারাবাংলা: এই শহর এখনও প্রতিবন্ধীবান্ধব না বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। আপনি কী এই অভিযোগের সমাধান দিতে পারবেন বলে মনে করেন?
আতিকুল ইসলাম: আমি যে ৯ মাস দায়িত্ব পালন করেছি সেই সময়ে আমি প্রায় পাঁচ মাস নিজেই হুইল চেয়ারে ঘুরে কাজ করেছি। আমি তখন দেখেছি আমি নিজের অফিসেই যেতে পারি না। আমাকে অন্যান্যরা ধরে উঠাচ্ছে যেটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয়।
যারা আজ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে চোখে দেখতে পারছে না বা স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারছেন না তারাও কিন্তু এই শহরেরই নাগরিক। যেই মেয়র হোক না কেনো তাদের চলাচলের সুবিধা নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব। বিভিন্ন বিপণিবিতান, বাসস্ট্যান্ডসহ নানা স্থানে প্রতিবন্ধীদের গণস্থাপনা ও গণপরিবহন নিশ্চিত করা দরকার। আমি যে ৯ মাস দায়িত্ব পালন করেছি তখন চেষ্টা করেছি বিভিন্ন বিপণি বিতানে র্যাম্প দেওয়ার জন্য। এগুলো আমাদের করে যেতে হবে, কারণ আমি মনে করি রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সমান অধিকার আছে। চ্যালেঞ্জ থাকবেই কিন্তু সেগুলো মোকাবিলা করেই সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে।
এ ছাড়াও পুশ বাটন সার্ভিস কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কার্যকর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বেশ কিছু ফুট ওভারব্রিজে এস্কেলেটর বসানো হয়েছে। ধীরে ধীরে পুশ বাটন সার্ভিস বাংলাদেশে যত বেশি চালু হবে তত বেশি উপকৃত হবে জনগণ। কারণ ফুটওভার ব্রিজ এলে যে কোনো সমস্যার পূর্ণ সমাধান না। পুশ বাটন, জেব্রা ক্রসিং পদ্ধতিগুলো জনপ্রিয় করে তুলতে হবে যে কাজে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।
সারাবাংলা: ৯ মাসে সবচাইতে কোনো কাজটাকে চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেছেন যেটার ধারাবাহিকতা ভবিষ্যত ডিএনসিসি মেয়রের ধরে রাখতে হবে বলে মনে করেন?
আতিকুল ইসলাম: অবশ্যই ডেঙ্গু। ডেঙ্গু বিষয়ে আগে আসলে সচেতনতার বিষয়টি কম ছিল কিছুটা। ফ্রিজের পানিতেও ডেঙ্গু মশার জন্ম হয় বা ব্রাশ রাখার স্ট্যান্ডে এটি অনেকের চোখের সামনে ঘটলেও হয়তবা খেয়াল করেনি অনেকেই। এখন সেই দিকগুলোতে প্রায় সবাই সচেতন। সবাই জানে তিনদিনের জমানো পানিতে এডিস মশার জন্ম হয়। এ সচেতনতা কর্মসূচিগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের মশার প্রজনন ক্ষেত্র চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে হবে। আগে সিটি করপোরেশনে কোনো কীটতত্ত্ববিদ ছিল না।
ডেঙ্গুর কিন্তু এবার ধরনও পাল্টে গেছে। সামনে আবার ডেঙ্গু মৌসুম আসছে। আমি মনে করি, আমার ইশতেহারে আমি যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছি তা সবই আগামীর ঢাকা গড়ে তুলতে যে কোনো মেয়রের চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেগুলো পূরণ করতে হবে। আমি নির্বাচিত হলে আমার বিশ্বাস আমি সেই চ্যালেঞ্জ পূরণ করতে পারব।
সারাবাংলা: নির্বাচনি প্রচার শেষ। এখন ভোটের অপেক্ষা। সেই দিনটিতে ভোটারদের জন্য কোনো বার্তা কী থাকবে?
আতিকুল ইসলাম: অবশ্যই ১ ফেব্রুয়ারি যে নির্বাচন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন প্রার্থী হিসেবে আমি অবশ্যই বলব, ভোট চাই ভোটারের, দোয়া চাই সকলের।’ তবে আমি আহ্বান জানাব, সব ভোটারদের বিশেষ করে তরুণদের যেন ভোটকেন্দ্রে এসে সবাই নিজেদের মতামত জানান। সবাই সেদিন সকালে আসবেন এবং নিজের মূল্যবান ভোটটি দিয়ে যাবেন। এ দিন আমরা সবাই মিলে যেন একটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে পারি। নির্বাচনে কেউ জিতবে কেউ হারবে সেটিকে যেন আমরা খুশি মনে মেনে নেই সেটিই কামনা করি।
সারাবাংলা: আপনাকে ধন্যবাদ।
আতিকুল ইসলাম: সারাবাংলার সব কর্মী ও পাশাপাশি নগরবাসীকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।