Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জাফরাবাদে সাংবাদিকের ওপর হামলা


১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১১:৩৮

ঢাকা: রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জাফরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে সাদেক খান রোডে এক সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি হামলার শিকার হন। আহত সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান সুমন অনলাইন নিউজ পোর্টাল আগামী নিউজে কর্মরত। তার বাড়ি সাতক্ষীরা। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য তিনি।

বিজ্ঞাপন

ঢামেক হাসপাতাল থেকে সারাবাংলার করেসপন্ডেন্ট জানিয়েছেন, দুপুর ১২টা নাগাদ আহত সুমনকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। জরুরি বিভাগে তাকে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে সিটি স্ক্যান করাতে বলেছেন।

ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, মোহাম্মদপুরের জাফরাবাদে হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান সুমন। তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছে। জরুরি বিভাগে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

জাফরাবাদের এই কেন্দ্রটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন খোকন। অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন সংসদ সদস্য সাদেক খানের ভাতিজা রাজেশ খান।

ঘটনার সময় ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্র্যাব) সাবেক সভাপতি সালেহ আকন্দ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আহত সাংবাদিক সুমনের সঙ্গেও রয়েছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থী খোকনের (টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক) সমর্থকরা অস্ত্র নিয়ে ঘুরছিল। সেই ছবি তুলছিল মোস্তাফিজ। এটি দেখামাত্র ওই অস্ত্র দিয়েই তার মাথায় আঘাত করা হয়। এরপর সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

আলোকিত সময়ের সাংবাদিক আজমী আনোয়ার জানান, সাদেক খান রোডের একটি ভোটকেন্দ্রে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হচ্ছিল। খবর পেয়ে সুমন সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে যায়। ওই সময় জাফরাবাদ এলাকার সাদেক খান রোডে ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী খোকনের সমর্থকরা ২০-৩০ জনের একটি দল নিয়ে শোডাউন করছিলেন। সুমন সেই ছবি তুললে তারা সুমনকে আক্রমণ করে। পরে স্টাম্প দিয়ে সুমনের মাথায় আঘাত করে। সে পড়ে গেলে তাকে কিল-ঘুষি দেয় ও লাঠিপেটা করতে থাকে। পরে সহকর্মীরা এগিয়ে এসে সুমনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

দুপুর ২টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মো. আলাইদ্দিন জানান, সুমনের মাথার আঘাত রয়েছে, সেখানে ছয়টি সেলাই দিতে হয়েছে। তবে তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কামুক্ত। তাকে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ড্রেসিং করার জন্য আসতে বলা হয়েছে।

বাধার মুখে সংবাদর্মীরা

এদিকে, নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অনেক সংবাদকর্মীই নানা ধরনের বাধার মুখে পড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটের খবর সংগ্রহে মাঠে থাকা সারাবাংলার কর্মী রাজনীন ফারজানা তার অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আমরা কয়েকজন সংবাদকর্মী দাঁড়িয়ে তথ্য আদান-প্রদান করছিলাম। এসময় ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা (এএসআই দেলোয়ার) আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন। তিনি বললেন, আপনরা এখানে দাঁড়িয়ে কী করেন? ১০ মিনিটের বেশি এখানে থাকা যাবে না। এর জবাবে  আমি ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে জানতে চাই, এ ধরনের কোনো নিয়ম আছে কি না। উত্তরে এএসআই দেলোয়ার বলেন, আপনি মহিলা মানুষ, আপনি কেন কথা বলেন?’

রাজনীন জানান, পরে ভোটারদের অসুবিধা হচ্ছে জানিয়ে এএসআই দেলোয়ার আমাদের চলে যেতে বলেন।  অথচ ওই সময় সেখানে কোনো ভোটারই ছিল না। পরে বাইরে বের করে দেওয়া হয় । এসময়  আমাদের ছবিও তুলে রাখেন। তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে  আমরা ভোটকেন্দ্র থেকে বের হয়ে আসতে বাধ্য হই।

পরিবর্তন ডটকমের ফটো সাংবাদিক ওসমান গনি সকাল সোয়া ১১টা নাগাদ মারধরের শিকার হন বলে অভিযোগ করেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, টিকাটুলী কামরুন নেছা ‍ উচ্চ বিদ্যালয়ে বিএনপির এজেন্টদের  বের করে দেওয়া হচ্ছিল। এসময় আমি ছবি নিচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ ২০/২৫ জন মানুষ আমার ওপর চড়াও হন। তারা আমাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। তারা আমার মোবাইল ফোন ও ক্যামেরা কেড়ে নেন। পরে সেখানে উপস্থিত অন্য সংবাদকর্মীরা আমাকে তাদের হাত থেকে বাঁচান। এ সময় তাদের অনুরোধে আমার মোবাইল ও ভিডিও ফেরত দেওয়া হলেও তারা আমার সব ছবি আর ভিডিও ডিলিট করে দেন।

এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায়  খবর সংগ্রহের সময় মারাত্মকভাবে আহত হন সাংবাদিক জিসাদ ইকবাল। তিনি বার্তাসংস্থা প্রেস বাংলা এজেন্সি পিবিএ’র বিশেষ প্রতিনিধি ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের স্থায়ী সদস্য। জিসাদ জানান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরশন ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে নিকুঞ্জের জান-ই-আলম সরকার উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। অওয়ামী লীগ প্রার্থী ইসহাক মিয়ার সমর্থকদের হাতে তিনি মারধরের শিকার বলে অভিযোগ করেন।

জিসাদের এক সহকর্মী  বলেন, ওই কেন্দ্রে ভোটারদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার পর ভোটারদের বের করে দিয়ে শিশুদের দিয়ে ভোট দেওয়া হচ্ছিল। এ ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করতে গেলে জিসানকে বাধা দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে  তার ওপর হামলা করে। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন ও তার ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়। পরে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ।

বাধার মুখে সাংবাদিকরা সাংবাদিক আহত সাংবাদিকের ওপর হামলা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর