‘গত ১০০ বছরে এরকম অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়নি’
১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২০:২০
ঢাকা: বাংলাদেশে গত একশ বছরের যেকোনো নির্বাচনকে যদি পর্যবেক্ষণে আনা হয় তাহলে এরকম অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে আর কখনো নির্বাচন হতে দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
হানিফ বলেন, ‘সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা গ্রহণের মাধ্যমে এই দেশের মানুষের ভোটাধিকার বুটের তলায় পিষ্ট করেছিল। বিএনপি কখনোই জনগণের ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে, বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এই অপশক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছেন।‘
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা লক্ষ্য করেছেন, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরই বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিছু অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। এই অভিযোগগুলো দেখে আমার বিশ্বাস সকলের মধ্যে একটা ধারণা হয়েছে, মির্জা ফখরুল এই অভিযোগগুলো আগেই লিখে রেখেছিলেন। উনি কয়েকটি অভিযোগ উত্থাপন করলেন, যেগুলো হাস্যকরের মতো।’
বিএনপির সব অভিযোগগু কেবল মিথ্যাচারে ভরা। এর কোনো ভিত্তি নেই বলেও দাবি করেন আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ।
তিনি বলেন, ‘আজকে যে সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়েছে, আমার মনে হয় বাংলাদেশে গত ১০০ বছরের যদি যেকোনো নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণে আনা হয়, তাহলে এরকম অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন আর কখনো দেখা গেয়েছে কি না এটা আমার সাংবাদিক বন্ধুরা ভাল বলতে পারবেন।’
মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘এত শান্তিপূর্ণ উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন পরিচালনা করে আজকে যখন শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে সেই ভোটের পরে বিএনপি তাদের পরাজয়ের আশঙ্কা করে আগেভাগে কিছু অভিযোগ করার জন্য এই সমস্ত নির্লজ্জ মিথ্যাচার করছে।’
কোথায় বিএনপির পোলিং এজেন্টদের মারধর করা হয়েছে, কোথায় বের করে দেওয়া হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘একটা জায়গায় এমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি যে, কাউকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই।’
বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে কোনো কোনো জায়গায় তাদের এজেন্টরা আসেনি বলে শুনতে পেয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি। এছাড়া বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে হানিফ বলেন, ‘এই যে নির্লজ্জ মিথ্যাচার ফখরুল সাহেব গণমাধ্যমে করেছেন, এই মিথ্যাচারে কান দেবেন না। বিভ্রান্ত হবেন না।’
মোহাম্মদপুরে এক সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটা ঘটনার কথা আমাদের কানে এসেছে। মোহাম্মদপুরে একজন সাংবাদিকের সঙ্গে কিছুটা গোলযোগ হয়েছে। সেটা বিএনপি সমর্থিত একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সঙ্গে। এটার সঙ্গে সরকারদলীয় কোনো ওয়ার্ড কাউন্সিলর বা সরকারদলীয় কোনো মেয়র প্রার্থী নয়। এটা বিএনপি সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর রাজেশ নামের যে প্রার্থী মোহাম্মদপুরের তার সঙ্গে তার কিছু দ্বন্দ্ব বা হাতাহাতি হয়েছে।’
আমরা মনে করি বিএনপি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোচনা করে বলেন, ‘তিনি বলেছেন সরকার তার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে সন্ত্রাস করে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করার চেষ্টা করেছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা ব্যবহার করে।’
‘এটা চরম মিথ্যাচার। চরম নিন্দনীয় উক্তি মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা ফখরুল সাহেবকে আহ্বান জানাব, আপনি এই উক্তি করেছেন উক্তির পেছনে, আপনার অভিযোগের পেছনে যদি কোনো প্রমাণ থাকে সেই প্রমাণ জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে। যদি প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারেন তাহলে আপনাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এই মিথ্যাচারের জন্য।’
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে দাবি করে ভোটার এবং ভোটগ্রহণ সংশ্লিষ্ট সব দায়িত্বপ্রাপ্ত ও কর্তব্যরতদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
বিএনপিকে দুই সিটি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ভোট লড়াইয়ের মাঠে ঠিকে থাকার জন্যও বিশেষভাবে বিএনপিকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দিপু মনি, হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, সাখাওয়াত হোসেন শফিক, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, প্রচার ও প্রকাশনা সমৃপাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজী ও ইকবাল হোসেন অপুসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।