‘বিশ্ববাসী আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি জানুক, এটাই আমরা চাই’
২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:৩৭
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আরও উন্নতমানের করে শুধু আমাদের দেশে না, বিশ্বের দরবারেও পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের সাহিত্য আরও অনুবাদ হোক, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ আমাদের সাহিত্যকে জানুক। আমাদের সংস্কৃতিকে জানুক; সেটাই আমরা চাই।’
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বাংলা একাডেমিতে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মেলার উদ্বোধন ঘোষণা শেষে প্রধানমন্ত্রী মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। তার আগে বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এর পুরো ইতিহাস পাওয়া যায় জাতির পিতা শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার যে রিপোর্ট; সেই রিপোর্টগুলি এখন প্রকাশ করছি। ইতোমধ্যে চারখানা প্রকাশ হয়ে গেছে। বাকি আরও দুইখানা খুব শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। ১৯৪৮ থেকে ৫২ সাল পর্যন্ত সেখানে কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পাওয়া যায়। অর্থাৎ সিক্রেটস ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; এখানে কিন্তু এই ইতিহাসটা পাবেন, তিনি কীভাবে ভাষা আন্দোলনটা গড়ে তুলেছেন।’
২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে বিশ্বে স্বীকৃতি অর্জনের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল ১৯৫৬ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে তখন এবং শহীদ মিনার করার প্রকল্প নেওয়া এবং অর্থ বরাদ্দও দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। তখন যে শাসনতন্ত্র রচনা হয়েছিল, সোহরাওয়ার্দী সাহেব তখন প্রধানমন্ত্রী। সেখানেই বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়।’
ভাষা শহীদদের অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা রক্ত দিয়েছিল, শহীদ হয়েছিল তাদের মধ্যেও কিন্তু সালাম এবং রফিক নামে দুইজন ছিলেন। আর ঠিক সেই সালাম আর রফিক প্রবাসী বাঙালি তারাই উদ্যোগ নিলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে যাতে স্বীকৃতি পায় সেই লক্ষ্য নিয়ে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকার গঠন করার পর থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। আর মুজিববর্ষ উদযাপন করছি।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এই গ্রন্থমেলা জাতির পিতার নামে উৎসর্গ করা হয়েছে, সেজন্য বাংলা একাডেমিকে আন্তরিক ধন্যবাদও জানান তিনি।
পাশাপাশি বাংলা একাডেমির উদ্যোগে জাতির পিতার ওপর লেখা বই প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যিনি জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন এই দেশের মানুষের জন্য। একসময় তার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে তার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। অনেক কিছুই হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে সত্য সত্যই। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে কখনো ঢেকে রাখা যায় না, আজকে তা প্রমাণিত সত্য।’
‘আমি এইটুকুই বলবো, আমরা আজকে এগিয়ে যাচ্ছি। বাঙালি জাতি হিসাবে বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছি। আর এই রাষ্ট্র পেয়েছি অর্থাৎ একটা জাতি রাষ্ট্র, ভাষা রাষ্ট্র; এটা হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের সবকিছু মিলিয়েই। অর্থাৎ আমরা চাচ্ছি বাংলাদেশ মর্যাদাশীল হিসাবে বিশ্বে সম্মান পাবে।’
সরকার প্রধান হিসাবে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, গত দশ বছরে আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ফলে এখন আর বাংলাদেশকে কেউ ছোট চোখে দেখতে পারে না। বাংলাদেশকে এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে দেখে। কাজেই এটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। যে জাতি রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা নিয়ে আসে, সে জাতিকে কেউ হেয়প্রতিপন্ন করবে, সেটা কখনো আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। আমরা বিজয়ী জাতি। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে আমরা চলবো, বিজয়ের বেশে চলবো। সেইভাবে আমরা বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে চাই। আমাদের শিল্প, কলা, সাহিত্য সংস্কৃতিকে আমরা আরও উন্নতমানের করে শুধু আমাদের দেশে না, বিশ্ব দরবারেও আমরা পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের সাহিত্য আরও অনুবাদ হোক, বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ আমাদের সাহিত্যকে জানুক। আমাদের সংস্কৃতিকে জানুক। সেটাই আমরা চাই।’ এব্যাপারে বাংলা একাডেমি যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বভারের কারণে আগের মতো বই মেলায় এসে প্রাণখুলে সময় কাটাতে না পারার আফসোস ঝরে বঙ্গবন্ধু কন্যার কণ্ঠে।
তিনি বলেন, ‘একুশের গ্রন্থমেলা বলেন আর বই মেলা বলেন; বই মেলা বলতেই একটু আপন আপন মনে হয় যেন বেশি। বই মেলা বা গ্রন্থ মেলা এটা আমাদের প্রাণের মেলা। যদিও সত্য কথা বলতে কি? প্রধানমন্ত্রী হয়ে সবসময় এটাই দুঃখ লাগে, এখন আর সেই স্বাধীনতা নেই। আগে যেমন ছাত্রজীবনে এখানে দিনের পর দিন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতাম এবং ঘুরে বেড়াতাম বই মেলায়। পুরো সময়টা পারলেও থাকতাম, সেটা আর এখন হয়ে ওঠে না। এই একটা দুঃখ এখনো থেকে যাচ্ছে। সেই স্বাধীনতা আর পাচ্ছি না। তারপরও আমি বলবো, এই বই মেলা আসলেই ভালো লাগে।’
মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২০-এর সফলতা ও সার্থকতা কামনা করে উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন রামেন্দু মজুমদার।
‘সারাদেশের পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষাই মুজিববর্ষের বড় কর্মসূচি’