ব্রিটেনের ‘বিচ্ছেদে’ নতুন সম্ভাবনা দেখছে ঢাকা
২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২১:৫০
ঢাকা: তিন বছরের অনিশ্চয়তা, বহুপাক্ষিক রাজনৈতিক ‘কলহ’ ও নানা মতভেদ পেছনে ফেলে অবশেষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদ ঘটলো যুক্তরাজ্যের। লন্ডন স্থানীয় সময় শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হয় এই ব্রেক্সিট। তবে আগামী একবছর নতুন সম্পর্ক বাস্তবায়নে ইইউ ও যুক্তরাজ্য একে অন্যকে সাহায্য করে যাবে।
এদিকে, ইউরোপের সঙ্গে লন্ডনের এই ‘বিচ্ছেদ’কে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে ঢাকা। ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রভাবই ফেলবে। তবে ইতিবাচক প্রভাবই থাকবে বেশি। এই বিচ্ছেদে ইউরোপের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। এমনকি ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এক্ষেত্রে লন্ডনের সঙ্গে একাধিক ক্ষেত্রে দরকষাকষির সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে ঢাকা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা-লন্ডন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অনেক পুরোনো। বিচ্ছেদের আগে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্রিটেন থেকে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেত ঢাকা, বিচ্ছেদের পরও তা অব্যাহত থাকবে। বরং একাধিক ক্ষেত্রে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।
ব্রেক্সিটের ফলে বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনও। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ব্রিটেনের বিচ্ছেদে (ব্রেক্সিট) বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হবে না। এই বিচ্ছেদ দুই দেশের জন্যই ভালো কিছু নিয়ে আসবে।
এরই মধ্যে ব্রিটেন জানিয়েছে, বিচ্ছেদের পরও ইউরোপের এই দেশটিতে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাঠামোয় কোটামুক্ত এবং শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা পাবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আরও কয়েকটি নতুন দ্বার উন্মোচনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিচ্ছেদের ফলে ইউরোপের সঙ্গে ব্রিটেনের বাণিজ্য ও সেবা খাতে নতুন সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হবে। ইউরোপের দেশগুলো আগের মতো বিট্রেনে বাণিজ্য সুবিধা পাবে না। সেক্ষেত্রে ঢাকা লন্ডনের বাজার ধরার চেষ্টা করবে। শিক্ষা, সবজি বাজার, কারুশিল্প, শ্রম বাজারসহ একাধিক ক্ষেত্রে বাণিজ্যের পরিধি বাড়াতে ঢাকা এই চেষ্টা চালাবে।
অন্যদিকে বিচ্ছেদের ফলে পাউন্ডের দর কমতে পারে। নেতিবাচক এই দিকটি সামলাতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটেনের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ’নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য ব্রিটেনের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিচ্ছেদ ঘটবে। এই বিচ্ছেদে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কের কোনো হেরফের হবে না। বরং সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। এই বিচ্ছেদে বাংলাদেশের মতো বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাত্রা আরও শক্তিশালী হবে। বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রতিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রগুলো বিচ্ছেদের পর নতুন মাত্রা পাবে।’
ব্রিটিশ হাইকমিশনার আরও বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে। বন্ধু দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এবং ব্রিটেন আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করবে।’