পোশাক খাতে রোল মডেল হতে চায় বাংলাদেশ
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:৫১
ঢাকা: ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত নিয়ে অনেক নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। সেই ধারণা ভেঙে ইতিবাচক মনোভাব গড়তে চায় বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে চায়, এই খাতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করুক ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্ব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পোশাক খাতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে শ্রম আইন বাস্তবায়নসহ অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশ। তারপরও নেতিবাচক খবর পিছু ছাড়ছে না। তাই দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রাখতে এবং পোশাক খাতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দৃঢ় করতে একাধিক কৌশল বাস্তবায়নে সরকার ও ব্যবসায়ীরা সম্মিলিত উদ্যোগ নিয়েছে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ৫ ফেব্রুয়ারি ‘ইউ-বাংলাদেশ অ্যাপারেল ট্রেড: টাইম ফর এ রিয়েলিটি চেক’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। সেমিনারে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী ও রফতানিকারকদের প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক স্পিকার হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও স্পিকার হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেসের পরিচালক অধ্যাপক মাইকেল এইচ পসনার, আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) পরিচালক (বেটার ওয়ার্ক প্রোগাম) ডান রিস এবং শ্রম অধিকার নিয়ে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করা সুইজারল্যান্ডের ওরেট ভ্যান হেরডান।
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওই সেমিনারে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি এই সেমিনারে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা এবং রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত থাকবেন। সেমিনারে ইউরোপীয় কমিশন, ওই অঞ্চলের নীতি নির্ধারক (থিঙ্ক ট্যাংক), ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী, বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সেমিনারের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে- ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিদের কাছে বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে বাস্তবায়িত উদ্যোগগুলোর জানান দেওয়া। পাশাপাশি পোশাক খাতের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে ও শ্রমমূল্য বিষয়ে বাস্তবায়ন করা উদ্যোগগুলোও তাদের জানিয়ে দেওয়া; যাতে বাংলাদেশের পোশাক খাত নিয়ে ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বের নেতিবাচক ধারণা ভেঙে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশ চায় যে, এই খাতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করুক ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা বিশ্ব।
কূটনৈতিক সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়তে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রভাবশালী সদস্যদের নিয়ে এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। কারণ পশ্চিমা গণমাধ্যম, সুশীল সমাজের একটি অংশ এবং কিছু ট্রেড ইউনিয়ন সবসময়ই বাংলাদেশের পোশাক খাতকে বিশ্বের কাছে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে। বিশ্বে দুর্নাম রটাতে অনেক সময়ই বাংলাদেশকে নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভিয়েতনামের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে। অথচ ভিয়েতনামে শ্রম মূল্য খুবই কম এবং দেশটি এখনও আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার (আইএলও) একাধিক মৌলিক আইন বাস্তবায়ন করেনি। এই দিক দিয়ে ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশে শ্রমমূল্য এবং পরিবেশ অনেক ভালো হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি নির্ধারকরা তৈরি পোশাক ইস্যুতে সবসময়ই বাংলাদেশকে চাপে রাখছে। শুধু তাই নয় ইউরোপের মিডিয়া ও সামাজিক সংগঠনগুলো সবসময়ই ‘ক্লিন ক্লথ’ প্রচারণার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভুলভাবে তুলে ধরছে।
তৈরি পোশাক খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ এরই মধ্যে শ্রম আইন পরিবর্তনসহ কারখানায় নিরাপদ কাজের পরিবেশ নিশ্চিতে একাধিক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে; যা বিশ্বের অন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য একটি উদারহরণ। বাংলাদেশ এরই মধ্যে পোশাক খাতের উন্নয়নের জন্য যেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে, সেগুলো বিশ্বের অন্যান্য দেশ গ্রহণ করলে এই খাতের আরও উন্নয়ন হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রাসেলসের একজন কূটনীতিক বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতকে বিশ্বের কাছে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে চাই। এবং সত্য ঘটনা তুলে ধরতে চাই।’
বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সেমিনারে উপস্থিত থাকবেন বলে জানান। তবে সেমিনারের উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, গত ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে ১৯ দধমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিবাচক ধারণা নেতিবাচক পোশাক খাত বিজিএমইএ মধ্যপ্রাচ্য মনোভাব সেমিনার