১০ বছরে ব্যাংকের কাছে সরকারের ঋণ ২ লাখ কোটি টাকা
৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:৫৫
সংসদ ভবন থেকে: গত ১০ বছরে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংক থেকে মোট ১৩ লাখ ২৭ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। একই সময়ে সরকার ব্যাংকগুলোকে ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধও করেছে। ফলে এই ১০ বছরে ব্যাংকগুলোতে সরকারের নিট ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য মমতা হেনা লাভলীর এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদকে এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।
জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গার প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ৭২টি দেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (এফআইইউ) সঙ্গে সমঝোতা সই করেছে। এসব দেশের সঙ্গে নিয়মিতভাবে এ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় চলছে।
বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদের প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাজেটে বৈদেশিক ঋণ/আর্থিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা ৮ হাজার ৪৪৭ মিলিয়ন ডলার বা ৭১ হাজার আটশ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট বৈদেশিক ঋণ/আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ২৩ হাজার ২৩ কোটি টাকা।
গণফোরামের মোকাব্বির খানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমানে শেয়ারবাজারে কিছু তারল্য সংকট থাকলেও ব্যাংকিং খাতে কোনো তারল্য সংকট নেই। বর্তমান বিরাজমান তারল্য সংকট কাটিয়ে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে গত জানুয়ারিতে তার কার্যালয়ে একটি সভা করেন। সরকার মনে করে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে একটি গতিশীল ও শক্তিশালী পুঁজিবাজারের উপস্থিতি অপরিহার্য। তাই পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য যে ধরনের সাহায্য প্রয়োজন, সরকার ধারাবাহিকভাবে তা করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও করবে।
একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও জানান, ওই সভায় পুঁজিবাজারকে বিকশিত করা এবং বাজারে আস্থা বাড়ানোর লক্ষ্যে কিছু স্বল্প মেয়াদি কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা করা হয়। মার্চেন্ট ব্যাংকার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধার বিষয়টি পর্যালোচনা করা, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের বিনিয়োগ সক্ষমতা বাড়ানো, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়গুলোও আলোচনা হয়। এছাড়াও পর্যায়ক্রমে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলো শনাক্ত করে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকার দলীয় সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, শুধু ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে সিংগেল ডিজিট সুদহার কার্যকর করা হলে ব্যাংকগুলো ওই খাতে ঋণ/বিনিয়োগ ইচ্ছাকৃতভাবে কমিয়ে দিতে পারে, যা দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে। তাই সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব খাতে ঋণ বা বিনিয়োগের সুদের হার শতকরা ৯ ভাগ নির্ধারণ করে আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।