Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভোটের ময়নাতদন্তে নিজ ঘরেই সদিচ্ছার অভাব দেখছে আ. লীগ


৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:৩৪

ঢাকা: ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিজয় হলেও ভোট কাস্টিং কম হওয়ায় আত্মবিশ্লেষণ ও ময়নাতদন্তে নেমেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ময়নাতদন্তে উঠে এসেছে, ভোট কম পড়ার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের গা-ছাড়া ভাব-ই দায়ী। আর দুই সিটির নবনির্বাচিত মেয়রদের দাবি, নেতাকর্মীরা ভোটাদের কেন্দ্রে টানতে মনোযোগী হলে আরও ১০ শতাংশ বেশি ভোট টার্নআউট হতে পারতো।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির কার্যালয়ে ঢাকা মহানগরের অন্তর্গত দলীয় সংসদ সদস্য এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিজয়ী মেয়রদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের এক মতবিনিময় সভায় এমনটাই দাবি করছেন নেতারা। সভায় উপস্থিত সূত্র সারাবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিজ্ঞাপন

সভায় উপস্থিত সূত্র জানান, মতবিনিময় সভায় নবনির্বাচিত মেয়ররা তাদের অভিমত প্রকাশ করেন। এসব অভিমত প্রতিবেদন আকারে আগামী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় উপস্থাপন করা হবে। চলতি মাসে জাতীয় সংসদের চলমান অধিবেশন শেষ হওয়ার পরপরই কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভা অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় জাতীয় সংসদের তিন আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীরর মনোনয়নের লক্ষ্যে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেও এ বিষয়গুলো আলোচনা হতে পারে।

সূত্র আরও জানান, মতবিনিময় সভায় নবনির্বাচিত মেয়ররা ভোটার খরা নিয়ে নিজদের পর্যবেক্ষণসহ নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ তুলে ধরেন। তারা অভিযোগ করেন, ভোটের দিন পরিবহন সংকট ছিল। এ কারণে দূর-দুরান্তের ভোটাররা অনেকেই ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হননি। এমনকি ভোট গ্রহণের আগে-পরে তিন দিনের ছুটির কারণে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি এবং অবসর কাটাতে ঢাকার বাইরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সভায় মেয়ররা অভিযোগের তীর তোলেন দলীয় নেতাকর্মীদের দিকে। তারা মনে করেন, নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে দলীয় নেতাকর্মীরা জোরালো ভূমিকা পালন করেননি। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের সদিচ্ছার অভাব কিংবা গা-ছাড়া ভাব ছিল।

বিজ্ঞাপন

মেয়ররা বলেন, ‘আসলে আমাদের কর্মীরা হয়তো ভাবছিল, ভোটাররা তো এমনিতেই ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসবে। কিন্তু তাদের যে ভোট কেন্দ্রে আনতে হবে, এ বিষয়টি আমরা মাথা রাখিনি। আমরা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনতে অতোটা তৎপর ছিলাম না। ভোটারদের কেন্দ্রমুখী করতে পারলে আরও ১০ শতাংশ ভোট কাস্টিং বেশি হতে পারতো।’

এছাড়াও হিন্দু ধর্মালম্বীদের সরস্বতী পূজোর ছুটির কারণে অনেকেই এলাকায় চলে গিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তারা। এ কারণে মাইনরিটি কমিউনিটির লোকজন ভোট কেন্দ্রে কম উপস্থিত ছিল বলেও অভিমত দেন দুই সিটি মেয়র।

অন্যদিকে ভোটের পরে এস এস সি পরীক্ষার কারণে অনেক অভিভাবক সন্তানের পরীক্ষার কথা চিন্তা করে ভোট দিতে অনাগ্রহী ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তারা। একারণে ভোট কেন্দ্রগুলোতে মহিলা ভোটারদের উপস্থিতি কম হয়েছে দাবি করে নিজেদের ভোট পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেন নৌকা প্রতীকে বিজয়ী মেয়ররা। এছাড়াও ভোটের মাঠের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির ইলেকট্রনিক ভোট মেশিনে (ইভিএম) নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণাও ভোটারদের মাঝে ভোট প্রদানে অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল বলেও অভিমত দেন তারা।

ভোটের দিন সদিচ্ছার অভাব দেখলেও ভোটের আগে দুই সিটির ভোটযুদ্ধে মহানগরের দলীয় নেতাকর্মীসহ দলীয় সংসদ সদস্যরা ছাড়াও জোটের শরিক এমপিদের ভূমিকা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন নবনির্বাচিত মেয়ররা। মতবিনিময় সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের সভার আলোচ্যসূচি তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা বৈঠকে যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে এই নির্বাচন কেমনভাবে দেখেছে, ভুলক্রুটি আছে কী না? সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে কী না? ইভিএম নিয়ে কোনো সমস্যা হয়েছে কী না? বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়ে আলোচনা করেছি। আগামী ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংয়ে এই বিষয়গুলো উত্থাপন করা হবে।’

ভোট কাস্টিংয়ের হার কম হওয়া নিয়ে মেয়রদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষার জন্য অনেকেই গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। পরীক্ষা না হলে অনেকেই হয়ত বাড়ি যেত না। পরিবহনের একটা সমস্যা ছিল, সেটা তারা বলেছেন। আমাদের সংগঠনেও কাঠামোগতভাবে কিছু দুর্বলতা আছে। ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে আমাদের গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল। সবাই ভেবে নিয়েছেন, ভোটাররা তো ভোট দিতে আসবেন। ভোটারদেরও যে নিয়ে আসতে হবে, এই বিষয়টায় কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইভিএম পদ্ধতিতে এ ইলেকশনটা এত বড় এলাকায় এই প্রথম। এই অভিজ্ঞতাটা ভবিষ্যতে আমাদের কাজে লাগবে। প্রথমবার হওয়ার কারণে ভোটাটদেরও কিছু সমস্যা হয়েছে। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট জালিয়াতি বা কারচুপির কোন সুযোগ ছিল না। এবং ভোট ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হয়েছে। সুষ্ঠু নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন হয়েছে। কিছু ভুল ত্রুটি বাদ দিলে নির্বাচনটি ভালো হয়েছে। যারা পর্যবেক্ষক ছিলেন তারাও কিন্তু বিরূপ মন্তব্য করেনি; একমাত্র বিএনপি ছাড়া। বিএনপি বিষোদগার করছে, কারণ তারা হেরে গেছে। এ জন্য তারা আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। তাদের আন্দোলনের হুমকি শুনে আমরা অভ্যস্ত।’

এছাড়া মতবিনিময় সভায় ঢাকার দুই সিটির বিজয় নিয়ে আত্মসন্তুষ্ট না হয়ে আত্মবিশ্লেষণ করা হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য মুকুল বোস, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, উপ-দফতর সম্পাদক সায়েম খান, সদস্য আমিরুল আলম মিলন, শাহাবুদ্দিন ফরাজী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম ও দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসসহ দলীয় সংসদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।

আওয়ামী লীগ ঢাকা সিটি নির্বাচন ভোট ময়নাতদন্ত মেয়র

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর