যতটুকু এগুলো পদ্মাসেতু প্রকল্প
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:৩২
ঢাকা: পদ্মার সর্বনাশা ভয়ংকর রুপ কে না জানে। সেই নদীকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে জেগে উঠেছে সেতু। পদ্মা নদীর ওপর এই সেতুর কাজ শেষ হতে এখনো বাকি দেড় বছরের বেশি সময়। সেতুর মোট ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ২৪টি বসানো শেষ হয়েছে। বাকি আছে ১৭টি। জাজিরা প্রান্তে ৩টি স্প্যানের ওপর বসানো শুরু হয়েছে স্ল্যাব। এরইমধ্যে ৩শটি স্ল্যাব বসানোও শেষ হয়েছে।
সরকার সেতুর কাজ শেষের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে আগামী বছরের জুনে। তবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের তথ্য সেতুর কাজ শেষ হতে আরো একটু দেরি হতে পারে। তবে এটি ২০২২ সাল পার হবে না।
সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সেতু বিভাগ জানিয়েছে, ২০২১ সালের জুনে সেতুর কাজ শেষ হবে। তাদের দেওয়া তথ্যে এখন পর্যন্ত অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। তার থেকে ১০ শতাংশ পিছিয়ে পরামর্শকদের অগ্রগতির তথ্য।
পদ্মাসেতুতে গাড়ি চলাচলের দিন থেকে রেল লাইন চালু করার কথা থাকলেও সেতুতে রেল প্রকল্প অনেক পিছিয়ে আছে। সরেজমিনে রেললাইনের জমি অধিগ্রহণ শেষে তা প্রস্তুত এবং পাইলিং কাজ চলতে দেখা গেছে।
সবশেষ পদ্মাসেতুতে মোট ৪২টি খুঁটির মধ্যে ৩৭টির কাজ পুরোপুরি শেষ। বাকি আছে ৫টি খুঁটির কাজ। যা শেষ হবে আগামী এপ্রিলে। আর ৪১টি স্প্যানের মধ্যে ২৩টি বসানো শেষ হয়েছে। বাকি আছে ১৮টি। বাকিগুলো আগামী জুলাইয়ের মধ্যে বসে যাবে।
এদিকে, জাজিরা প্রান্ত থেকে সেতুর স্প্যানের উপর সড়কপথে নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গেছে। দিনে ৮টি করে রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হচ্ছে। প্রায় তিন হাজার রোড ওয়ে স্ল্যাব বসাতে হবে। এরমধ্যে প্রায় ৩০০টি রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হয়েছে। রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর পর পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরু হবে। যা চলতি বছরের শেষের দিকে শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে সেতু সূত্র।
সেতু নির্মাণকারী চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির একজন একজন প্রকৌশলী জানান, সেতুর ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ৩৭ টি পিয়ারের কাজ শেষ। বাকী রয়েছে ৮, ১০, ১১, ২৬ এবং ২৭। পিয়ার ৮ এবং ১১ এর কাজ এ মাসেই শেষ হবে। পিয়ার-১২ এবং ১৩ এর উপর স্থাপিত স্প্যানটি অস্থায়ী। এটি বাদেই ২৩ টি স্প্যান স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি অস্থায়ী স্প্যানটি পিয়ার-৩০ এবং ৩১ এর উপর বসানো হতে পারে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। মাঝখানে সেতুর খুঁটি জটিলতায় প্রায় এক বছর পিছিয়ে যায় কাজ। এরপর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সেতু চালু করার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ২০২১ সাল করা হয়। সেতু চালু হলে ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের ২৫ জেলার সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। সেতু সংযোগ ঘটাবে দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে ঢাকা-খুলনা-মহাসড়ককে।
মূল সেতু কাজের চুক্তি ১২,১৩৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা এবং এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে- ৯,৭৫১ দশমিক ১৯ কোটি টাকা।
পদ্মাসেতুর নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৬৬ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি- ৫২ দশমিক ৪৭ ভাগ। নদী শাসন কাজের চুক্তি ৮,৭০৭ দশমিক ৮১ কোটি টাকা এবং এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে- ৪,৫৬৯ দশমিক ৪ কোটি টাকা।
সংযোগসড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার বাস্তব কাজের অগ্রগতি শতভাগ শেষ। সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এরিয়ার ব্যয়- ১,৪৯৯ দশমিক ৫১ কোটি টাকা।
ভূমি অধিগ্রহণ এবং পুনর্বাসনে মোট খরচ ৪,৩৪২.২৬ কোটি টাকা।
এছাড়া প্যানেল অব এক্সপার্ট, পরামর্শক, সেনা নিরাপত্তা, ভ্যাট ও আয়কর, যানবাহন, বেতন ও ভাতাদি এবং অন্যান্য খরচ ধরা হয়েছে ৩,৫১০ দশমিক ৪২ কোটি টাকা। প্রকল্পের সর্বমোট বাজেট ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত সর্বমোট ব্যয়- ২১ হাজার ৩৩৪ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা (৭০.৬৬%)। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি, ৭৬ দশমিক ৫০ ভাগ।