চসিকে নগরপিতা হতে নৌকা প্রত্যাশী ২০ জন
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:৪১
ঢাকা: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে নগরপিতা হিসাবে দায়িত্ব পেতে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। কে পাচ্ছেন দলের মনোনয়ন, বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নাকি অন্য কেউ—তা নির্ধারিত হবে (১৫ ফেব্রুয়ারি) শনিবার। এদিন সন্ধ্যায় গণভবনে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চসিকের মেয়র পদে মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমাদানের শেষ দিন ছিল। এদিন পর্যন্ত মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় ২০ জন আগ্রহী প্রার্থী ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন বলে দলের দফতরসূত্র নিশ্চিত করেছেন।
চসিক মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী, সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ সালাম, মহানগর-৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবর রহমান, মেজর ইমদাদুল ইসলাম (আব.), মো. ইনসান আলী, মোহাম্মাদ ইউনুস, বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ ও প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্য জহুর আহমদ চৌধুরীর সন্তান ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তুফান, প্রাথমিক সদস্য সেলিনা খান, প্রাথমিক সদস্য মোহাম্মদ মনজুর আলম (সাবেক মেয়র), মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেখা আলম চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য এ কে এম বেলায়েত হোসেন, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. মাহাবুবুল আলম, এরশাদুল আমিন, মো. মনোয়ার হোসন ও দীপক কুমার পালিত।
এদিকে চট্টগ্রামের রাজনীতির বাতাসে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের কোনো সদস্য মেয়র পদে আগ্রহী হয়ে ফরম বিতরণ ও জমা দানের শেষ দিন পর্যন্ত ফরম সংগ্রহ করেননি। মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও সাবেক মেয়র ছিলেন।
চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে কী ধরনের চমক উপহার দিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ, তা এখন টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। বর্তমান মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের পাশাপাশি মনোনয়নের দৌড়ে এবার আলোচনায় এগিয়ে আছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম ও নগর কমিটির সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন।
এছাড়া বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক মেয়র মনজুর আলম ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পরিচয়ে ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর আগে ফরম সংগ্রহ করতে এসে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সাংবাদিকদের সামনে বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা করেন তাই চূড়ান্ত, আমাদের প্রিয় নেত্রীর সিদ্ধান্ত শিরোধার্য।
গত নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী এম মনজুর আলমের বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের ভোটে জয়ী হন আ জ ম নাছির। কিন্তু মেয়র নির্বাচিত হয়ার পর থেকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। যার প্রভাব পড়ে মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। মেয়র নাছির বলয় ও মহিউদ্দিন বলয়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতি। এর প্রভাব পড়তে শুরু করে দলের সহযোগীসহ অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতিতে।
মনোনয়ন প্রত্যাশায় সক্রিয় আছেন চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নগরের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালামও। তিনি ২০০৯ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পান। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনেরর নামও। একসময় মহিউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত থাকলেও মহানগর রাজনীতিতে পরবর্তীতে নাছিরেরও ঘনিষ্ঠ হন। এদিকে শেষ সময়ে এসে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন এম মনজুর আলমও, যিনি বিএনপির সমর্থন নিয়ে আওয়ামী লীগের এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারিয়ে একবার মেয়র হয়েছিলেন।
কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন পেতে মোট ৪০৫ জন ফরম সংগ্রহ করেছেন। আগামীকাল শনিবার গণভবনে বিকেল ৫টার দিকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ৪টা থেকে মনোনয়ন ফরম জমাদানকারীদের গণভবনে প্রবেশের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আগামীকাল ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আমাদের দলের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হবে।’
