Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা আক্রান্তের বেশি ঝুঁকিতে বয়স্ক, অসুস্থরা: গবেষণা


১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:৫২

বয়স্ক ও অসুস্থরা কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। পাশাপাশি এই ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীরাও রয়েছেন উচ্চ ঝুঁকিতে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৪৪ হাজারেরও বেশি ব্যক্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে চীনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) এক জার্নালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এসব ব্যক্তির তথ্য বিস্তারিত প্রকাশ করেছে চাইনিজ সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিসিডিসি)। বিবিসি জানিয়েছে, এ ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এটাই সবথেকে বেশি গবেষণাতথ্য প্রকাশ হলো।

বিজ্ঞাপন

সিসিডিসি’র গবেষণাতথ্য বলছে, করোনাভাইরাসের ৮০ শতাংশেরও বেশি সংক্রমণের ঘটনা মারাত্মক নয় (মাইল্ড)। দেশটিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে হুবেই প্রদেশে। এই প্রদেশেরই উহান শহরে প্রথম ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়। সিসিডিসি’র তথ্যমতে, প্রদেশটিতে মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৯ শতাংশ। এর বাইরে চীনের বাকি প্রদেশগুলোতে এ হার শূন্য দশমিক ৪ শতাশ। গবেষণায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে গোটা চীনে মৃত্যুর গড় হার দেখানো হয়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

মঙ্গলবার উহান শহরে একটি হাসপাতালের পরিচালক লিউ জিমিং (৫১) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। এই ভাইরাস সংক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু উহানের অন্যতম শীর্ষ হাসপাতাল উচাংয়ের পরিচালক ছিলেন তিনি। এ পর্যন্ত মারা যাওয়া স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে বয়স্ক।

মঙ্গলবার প্রকাশ হওয়া আনুষ্ঠানিক তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারানো ব্যক্তির সংখ্যা ১৮৬৮। আর সংক্রমণের শিকার হয়েছেন ৭২ হাজার ৪৩৬। কর্মকর্তারা এদিন আরও ৯৮ জনের মৃত্যুর ঘটনা এবং ১ হাজার ৮৮৬ জনের সংক্রমিত হওয়ার তথ্য জানিয়েছেন। পাশাপাশি চিকিৎসা নিয়ে করোনা সংক্রমণের শিকার ১২ হাজার মানুষ নিরাময় লাভ করেছেন বলেও জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সিসিডিসি’র গবেষণাটি চাইনিজ জার্নাল অব এপিডেমিওলোজি’তে প্রকাশ হয়েছে। এতে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৪ হাজারেরও বেশি সংক্রমণের ঘটনার বিস্তারিত বিশ্লেষণ ও চিকিৎসদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।

ভাইরাসটি সম্পর্কে এরই মধ্যে যে ধারণা রয়েছে, গবেষণার ফলাফলে সেটাই বহুলাংশে উঠে এসেছে। দেখা গেছে, ৮০ দশমিক ৯ শতাংশ সংক্রমণই মৃদু, ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ মারাত্মক এবং কেবল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ সংকটাপন্ন। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার কম থাকলেও ৮০ বছরের বেশি বয়সী রোগীদের মধ্যে তা বেশি। আর আক্রান্তদের মধ্যে মেয়েদের তুলনায় (১ দশমিক ৭ শতাংশ) ছেলেদের মৃত্যুর হার (২ দশমিক ৮ শতাংশ) বেশি দেখা গেছে।

কোন কোন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা করোনায় কাবু হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন, সেটিও উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণায়। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে হৃদরোগ, এরপর রয়েছে ডায়াবেটিস, দীর্ঘদিনের শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত রোগ এবং উচ্চ রক্তচাপ। স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ঝুঁকি প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ১৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৭১৬টি সংক্রমণের ঘটনা নিশ্চিত। ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মারা গেছেন পাঁচ জন স্বাস্থ্যকর্মী।

করোনার গতিপথ কোন দিকে?

সংক্রমণের হার ২৩ থেকে ২৬ জানুয়ারি ছিল সর্বোচ্চ। এরপর থেকে তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সংক্রমণের মাত্রা স্লথ হওয়ার পেছনে পুরো শহর বিচ্ছিন্ন করে ফেলা, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রচার এবং সংক্রমণ রোধে নানা খাতের র‌্যাপিড রেসপন্স টিমের সমন্বিত প্রচেষ্টা উল্লেখযোগ্য কারণ বলে মনে করছেন গবেষকরা। তবে তারা সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, বহু মানুষ লম্বা অবকাশ কাটিয়ে ফিরছেন। এরকম মারাত্মক সংক্রমণ ফের হতে পারে— এমন প্রস্তুতি রাখা প্রয়োজন বলে সুপারিশ করেছেন তারা।

প্রমোদ তরীগুলোর পরিস্থিতি কী?

করোনাভাইরাস চীনের ভূখণ্ড থেকে বিশ্বের অন্যান্য নানা দেশে ছড়িয়ে গেছে। এমন অন্তত দু’টো প্রমোদ তরী আক্রান্ত বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ১ ফেব্রুয়ারি জাপানের ইয়োকোহামা পোর্টে ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজে হংকংয়ের এক ব্যক্তি আক্রান্ত বলে শনাক্ত হওয়ার পর জাহাজটিকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়। ৩৭০০ আরোহীর মধ্যে ৪৫০ জনেরও বেশি মানুষ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ওই প্রমোদতরীতে।

ভাইরাস আছে শঙ্কায় দ্বিতীয় প্রমোদতরী এম এস ওয়েস্টারডামকে নোঙর করতে দিতে রাজি হয়নি এশিয়ার কয়েকটি বন্দর। সংক্রমণের কোনো নজির শনাক্ত না হওয়ার পর শেষমেষ কম্বোডিয়ার সিহানৌকভিলে ভিড়তে পারে তরীটি। দেশটির প্রেসিডেন্ট হুন সেন যাত্রীদের স্বাগত জানান। কাউকেই কোয়ারেন্টাইন করা হয়নি। তবে বেশ কয়েকদিন পর ওই জাহাজে থাকা এক নারী মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর স্বাস্থ্য পরীক্ষায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে ধরা পড়ে। তার বর্তমান অবস্থান শনাক্ত করার জন্য জোর প্রচেষ্টা চলছে। জানা গেছে, তিনি এরই মধ্যে মালয়েশিয়া ছাড়াও থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা পর্যন্ত ভ্রমণ করেছেন। বহু দেশ বলে দিয়েছে, তারা ওই জাহাজে অবস্থানকারী ভিনদেশি পর্যটকদের ঢুকতে দেবে না। এম এম ওয়েস্টারডামে ২৫৫ জন অতিথি ও ৭৪৭ জন ক্রু রয়েছেন। অর চারশ’র বেশি যাত্রীকে রাজধানী নমপেনের একটি হোটেলে পাঠানো হয়েছে। তারা পরীক্ষার ফলের অপেক্ষায় আছেন।

‘কোয়ারান্টিনেডেট’ করোনা করোনাভাইরাস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর