আব্দুল কাদের কি নতুন জাহালম?
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:৩৮
ঢাকা: একটি প্রাইভেট ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সাজা পেয়েছিলেন জুয়েল রানা। তবে ওই মামলায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে যিনি সাজা খাটছেন তার নাম আব্দুল কাদের।
এখন জুয়েল রানা ও আব্দুল কাদের একই ব্যক্তি কিনা তা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আসামি জুয়েল রানার নামে কারাগারে থাকা আব্দুল কাদেরের জামিন চেয়ে করা আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো.নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
দুদকের লিগ্যাল অ্যান্ড প্রসিকিউশন শাখার পরিচালক এবং বরিশাল পুলিশ সুপার ও ঢাকা এসবিকে তদন্ত করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুনানির জন্য আগামী ৫ মার্চ পরবর্তী তারিখ ঠিক করেছেন আদালত।
জামিন আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট মোতাহার হোসেন সাজু। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না, মাহজাবিন রাব্বানী দীপা, কাজী শামসুন নাহার কনা ও ঈশিতা পারভীন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এস এম আবদুর রউফ।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিনউদ্দিন মানিক মামলার বিস্তারিত জানিয়ে বলেন, ভুয়া ও জাল ব্যাংক গ্যারান্টি দাখিল করে ইউসিবিএল ব্যাংকের বংশাল শাখা থেকে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৭৪ হাজার ২৭৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাতজনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ১১ আগস্ট শাহবাগ থানায় মামলা করে দুদক।
মামলার তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের পহেলা এপ্রিল জুয়েল রানাসহ সকল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এ মামলায় ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর জুয়েল রানাসহ ৫ আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ৪০ লক্ষ টাকা করে জরিমানা করে রায় দেন বিচারিক আদালত। এ রায়ের পর ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জুয়েল রানাকে গ্রেফতার করা হয়। এই জুয়েল রানার জামিনের আবেদন করা হয়েছে।
তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজু সারাবাংলাকে বলেন, কারাগারে যিনি আসামি হিসেবে আছেন তিনি জুয়েল রানা নন। এমনকি তার পরিবারে জুয়েল নামে কেউ নেই। তার নাম আব্দুল কাদের খান। জামিন আবেদনে আব্দুল কাদেরে পিতার নাম ও যে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে সেটিই আসামি হিসেবে জুয়েল রানার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। আবেদনের সঙ্গে আব্দুল কাদেরের জন্ম সনদ, ওয়ারিশ সনদপত্র,এসএসসি ও এইচএসসি পাশের সনদ, ষ্টাম্প ভেন্ডারের সনদ ও গার্মেন্টসে চাকরির প্রত্যায়নপত্র দাখিল করা হয়েছে।
সে কারণেই আদালত বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির মামলার আসামি আবু সালেকের বদলে নিরীহ পাটকল শ্রমিক জাহালমকে চিহ্নিত করে ২৬টি মামলায় আসামি করা হয়। দুদকের মামলায় জাহালম গ্রেফতার হন ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি।
তিন বছর ‘ভুল আসামি’ হয়ে কারাভোগের পর গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি ২৬ মামলায় ‘ভুল’ আসামি জেলে: ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে পরের দিন ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে রুল জারি করেন। আদালতের ওই নির্দেশের কয়েক ঘণ্টা পরই কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম।