১৯০ কোটি টাকা পাচার, আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র তৈরি
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১১:২৬
ঢাকা: অর্থপাচার আইনে আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে করা পাঁচ মামলার অভিযোগপত্র দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আড়াই বছর পর চিঠি দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। সংস্থাটি গত ১২ ফেব্রুয়ারি এ চিঠি দেয়।
শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে আপন জুয়েলার্স বিভিন্ন সময় সাড়ে ১৩ মণ সোনা ও পৌঁনে ৮ হাজার পিছ ডায়মন্ড কিনতে গিয়ে ১৯০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা পাচার করেছে। এতে কর ফাঁকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা। সোজা কথায় বলতে গেলে মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে এবং অন্যান্য রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এসব অর্থ পাচার করা হয়েছে।
এদিকে, শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধানে জানা যায়, বনানীর রেইনট্রি হোটেলে শিক্ষার্থী ধর্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের মে মাসে আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শাখায় একযোগে অভিযান চালায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। অভিযানে আপন জুয়েলার্সের ৫টি শাখা থেকে জব্দ করা হয় ৫৩৭ কেজি ৫শ গ্রাম সোনা ও ৭ হাজার ৭৪৩ পিছ ডায়মন্ড অলংকার। আর সেই বছরের ১২ আগস্ট গুলশান থানায় ২টি, ধানমন্ডি থানায় একটি, রমনা থানায় ১টি ও উত্তরা পূর্ব থানায় ১টি মামলা করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
জানা গেছে, শুল্ক গোয়েন্দার তদন্তে আপন জুয়েলার্স সংস্থাটিকে অলংকারের বিপরীতে বৈধ কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। অর্থাৎ শুল্ক গোয়েন্দা বলছে, অর্থপাচার করে চোরাচালানের মাধ্যমে এসব অলংকার দেশে আনা হয়েছে। আর এনবিআরে দেওয়া আয়কর নথিতে তথ্য গোপন করে দেওয়া হয়েছে কর ফাঁকি। ফলে শুল্ক গোয়েন্দার তদন্তে আপন জুয়েলার্সের মালিক তিন ভাই আজাদ আহমেদ, গুলজার আহমেদ ও দিলদার আহমেদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, প্রতিবেদন সূত্রে আরও জানা গেছে, সুবাস্তু স্কয়ার শোরুমের মামলায় আসামি করা হয় গুলজার আহমেদ ও আজাদ আহমেদকে। শো-রুমটি থেকে জব্দ করা হয় ২০৩ কেজি সোনা ও ২৮৫৯ পিছ ডায়মন্ডের অলংকার। যেখানে জব্দকরা অলংকারের বিপরীতে পাচার হয়েছে ৭৩ কোটি ৬৩ লাখ আর কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ১১ কোটি ২৭ লাখ।
মৌচাক মার্কেট শো-রুমের রমনা মডেল থানার মামলায় আসামি করা হয় দিলদার আহমেদকে। যেখানে শো-রুমটি থেকে জব্দ করা হয় ৫৪ কেজি ২শ গ্রাম সোনা ও ১৫৮০ পিছ ডায়মন্ড অলংকার। যার বিপরীতে পাচার করা হয়েছে ১৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা আর কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি টাকা।
এনআর কমপ্লেক্স শো-রুমের উত্তরা পূর্ব থানার মামলায় আসামি করা হয় দিলদার আহমেদকে। শো-রুমটি থেকে জব্দ করা হয় ৮৯ কেজি সোনা ও ১৪১০ পিচ ডায়মন্ডের অলংকার। যার বিপরীতে পাচার করা হয়েছে ৩০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আর কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ২২ লাখ টাকা।
ডিএনসিসি মার্কেট শো-রুমের গুলশান থানার মামলায় আসামি করা হয় আজাদ আহমেদকে। শো-রুমটি থেকে জব্দ করা হয় ৯০ কেজি ৩শ গ্রাম সোনা ও ৩৩৮ পিছ ডায়মন্ডের অলংকার। যার বিপরীতে বিদেশে পাচার করা হয়েছে ৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা। আর কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ৬ লাখ টাকা।
অন্যদিকে, সীমান্ত স্কয়ার শো-রুমের ধানমন্ডি থানার মামলায় আসামি করা হয় দিলদার আহমেদকে। শো-রুমটি থেকে জব্দ করা হয় ১০১ কেজি সোনা ও ১৫৫৭ পিচ ডায়মন্ডের অলংকার। যার বিপরীতে পাচার করা হয়েছে ৩৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আর কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
অর্থাৎ ১৯০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা পাচার করা হয়েছে আর কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
এদিকে আমদানি নীতিমালা হওয়ার পর গত বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে অবৈধ সোনা বৈধ করার সুযোগ দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আর এ সুযোগটি লুফে নেয় আপন জুয়েলার্স। সোনা মেলায় আটক ও মজুদ থাকা অলংকার বৈধ করতে প্রায় ১৪ কোটি টাকা কর দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য খন্দকার মুহাম্মদ আমিনুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, শুল্ক গোয়েন্দার প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। বিষয়টি এখন ফাইনাল পর্যায়ে আছে। এর বেশি এখন কিছু বলা ঠিক হবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম সারাবাংলাকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট শাখা কাজ করছে। অর্থাৎ বাকিটা পরে বলা যাবে বলে জানান তিনি।
অর্থ পাচার আপন জুয়েলার্স আপন জুয়েলার্সের বিরুদ্ধে মামলা শুল্ক গোয়েন্দা হোটেল রেইনট্রি