৫ কারণে সালমান শাহ’র আত্মহত্যা, পিবিআইয়ের তদন্ত
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৩:২৪
ঢাকা: দীর্ঘ ২৪ বছর পর নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হত্যা না আত্মহত্যা— তার মৃত্যু নিয়ে প্রায় আড়াই দশক ধরে এমন জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বলছে, আত্মহত্যাই করেছিলেন সালমান শাহ। প্রতিবেদনে তার আত্মহত্যার পেছনে পাঁচটি কারণও তুলে ধরেছে সংস্থাটি।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পিবিআই সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার সালমান শাহ’র মৃত্যুর ঘটনায় তাদের প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন- সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছিলেন: পিবিআই
ওই সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনুরের সঙ্গে জুটি বেঁধে বেশকিছু ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছিলেন সালমান শাহ। এই জুটির রসায়নও ছিল আলোচিত। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, শাবনুরের সঙ্গে তার অতিরিক্ত অন্তরঙ্গ সম্পর্ক সালমান শাহ’র আত্মহত্যার অন্যতম কারণ।
পিবিআই আরও বলছে, শাবনুরের সঙ্গে এই অন্তরঙ্গ সম্পর্কের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ ছিল সালমান শাহ’র। এছাড়া মায়ের প্রতি তার অসীম ভালোবাসা এবং জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পুঞ্জিভূত আবেগ অভিমানে রূপ নিয়েছিলে সালমানের। সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতাও ছিল তার।
পিবিআই আরও বলছে, সালমান শাহ ছিলেন অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ। যে কারণে একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন তিনি। এসবকিছু মিলিয়েই শেষ পর্যন্ত সালমান শাহ আত্মহত্যাকে নিজের জীবন শেষ করার পথ হিসেবে বেছে নেন।
এদিকে, সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরা ও সহঅভিনেতা শাবনুরের সঙ্গে কথোপকথনে বিপরীতধর্মী বক্তব্য পেয়েছে পিবিআই।
সামিরার বরাত দিয়ে পিবিআই প্রধান বলেন, শাবনূরকে বিয়ে করে সালমান শাহ দুই স্ত্রী নিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সামিরা রাজি ছিলেন না। এখান থেকেই পারিবারিক দম্পত্যের কলহ শুরু হয়। তা ছাড়া আগে থেকেই সামিরার সঙ্গে সালমানের মায়ের ঝগড়া-বিবাদের ফলে সালমান শাহ ১৯৯১ সালে দুই বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। সেসময় সালমান শাহ একবার ৯০টি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছিলেন এবং একবার স্যাভলন খেয়েছিলেন।
তবে সালমান শাহ’র সঙ্গে অতিরিক্ত অন্তরঙ্গ সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শাবনুর। এই চিত্রনায়িকার বরাত দিয়ে পিবিআই প্রধান বলেন, একজন অভিনয় শিল্পী হিসেবে সহযোগী শিল্পীর সঙ্গে যেমন সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন, সালমান শাহ’র সঙ্গে তার তেমন সম্পর্কই ছিল। এর বাইরে কোনো সম্পর্ক ছিল না।
বনজ কুমার বলেন, ১০ সাক্ষীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি পর্যালোচনা করে এবং ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকসহ সবার মতামত বিশ্লেষণ করে প্রমাণ পাওয়া যায়, সালমান শাহ খুন হননি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
বনজ কুমার জানান, পিবিআই তাদের তদন্তের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনা করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— প্রথম ও দ্বিতীয় সুরতহাল প্রতিবেদন, প্রথম ও দ্বিতীয় ভিসেরা প্রতিবেদন, কেমিক্যাল প্রতিবেদন, প্রথম ও দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন, বিশেষ মেডিকেল বোর্ডের মতামত, হস্তলিপি বিশারদের মতামত, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ভবনে প্রবেশ ও বের হওয়া সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞের মতামত।
এছাড়া রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ ও জরিনা বেগমের অডিও রেকর্ড, সাক্ষীদের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি, ঘটনা সংশ্লিষ্ট সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রেকর্ড করা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি, জব্দ করা আলামত পর্যালোচনা, আগের তদন্ত প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন দালিলিক সাক্ষ্য, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য, কাগজপত্র ও অন্যান্য সাক্ষ্য পর্যালোচনার বিষয়গুলোও পিবিআইয়ের তদন্তে বিবেচনা করা হয়েছে।
আত্মহত্যা তদন্ত প্রতিবেদন পিবিআই সালমান শাহ সালমান শাহ’র মৃত্যু