‘এক ভবনে তিনটা বিশ্ববিদ্যালয় কী শিক্ষা দেয়!’
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৫:৩৬
ঢাকা: এক ভবনে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় কী শিক্ষা দেয়, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে কৃতি শিক্ষার্থীদের স্বর্ণপদক-২০১৮ প্রদান অনুষ্ঠানে ব্ক্তব্য দিয়ে গিয়ে এই বিস্ময়ের কথা জানান তিনি। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭২ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার গুণগত মান ঠিক রাখতে আইন করা হচ্ছে। এতে মানোন্নয়নের কার্যক্রমে জবাবদিহিতা, সুশাসন ও গতিশীলতা নিশ্চিত করা হয়েছে, যেটা একসময় ছিল না। যে যার মতো একটা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে। এক বিল্ডিংয়ে দেখা যায়, তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়। এক বিল্ডিংয়ে তিনটা বিশ্ববিদ্যালয় কী শিক্ষা দেয়, আমি ঠিক জানি না। আমার কাছে অবাক লাগত শুনে! যাই হোক, এখন একটা ডিসিপ্লিনে আনার চেষ্টা করছি।
আরও পড়ুন- ‘শিক্ষার মান উন্নয়নে যা যা প্রয়োজন তাই করব’
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর নজরদারি বাড়াতে ইউজিসির জনবল বাড়ানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এসএসসি পর্যন্ত সব বিষয়ে পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা বিজ্ঞান পড়ার দিকে কোনো আগ্রহই ছিল না। নবম শ্রেণি থেকে কে কোন সাবজেক্টে যাবে, সেটা ভাগ করে দেওয়া হয়। আমার মনে হয়, এই ভাগটা থাকার দরকার নেই।’
স্বর্ণপদক প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সোনার ছেলেমেয়ে সম্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা সোনার বাংলা গড়ার সোনার ছেলে দরকারের কথা বলেছিলেন। এখানে ছেলে মানে ছেলেমেয়ে উভয়কেই বলেছিলেন। এখানে কোনো তফাৎ তিনি রাখেননি। কারণ আমি মেয়ে আমাকে তিনি সবসময় বাবা বলেও ডাকতেন এবং আমাদের ভাইবোনদেরও সবাইকে।
গবেষণার কোনো বিকল্প নাই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই ছোট ভূখন্ডে বিশাল জনগোষ্ঠীর বসবাস। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়া, ফসল উৎপাদন করার কাজগুলো কিন্তু গবেষণার মাধ্যমেই হয়েছে। আমি যখনই বাইরে যাই, বিদেশে যাই, বিদেশ থেকে আসলেও আমাকে এই কথাটাই আগে জিজ্ঞেস করে, এটা আপনারা কি করে করলেন? আসলে এটা আমরা গবেষণার মাধ্যমেই করতে পেরেছি। এটা হল বাস্তব। কারণ গবেষণা ছাড়া কখনো উৎকর্ষতা লাভ করা যায় না।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। একটা সময় ছিল আমি দেখেছি, আমাদের ছেলেমেয়েরা বিজ্ঞান পড়ার দিকে কোনো আগ্রহই ছিল না। কারণ আমাদের ক্লাশ নাইন থেকে কে কোন সাবজেক্টে যাবে সেটা ভাগ করে দেওয়া হয়। আমার মনে হয়, এই ভাগটা থাকার কোনো দরকারই নেই। কারণ এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত তারা সব সাবজেক্টেই পড়তে পারে। এসএসসি’র পরে গিয়ে বিভক্তি হওয়াটাই ভাল। তাহলে অন্তত তারা মেধা বিকাশের একটা সুযোগ পায়।
নবম শ্রেণি থেকেই সাবজেক্ট ভাগ করে দেওয়ার বিষয়টা এদেশে বোধহয় প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সময় ১৯৬৩ সাল থেকে শুরু হয়েছিল। কাজেই এটা না থাকাই ভাল। সবাই পড়ুক। তারপর তার যে সাবজেক্টে মেধা বিকাশের জন্য সুযোগ পাবে, সেটাতেই সে নিজেকে গড়ে নেবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞান শিক্ষার গুরুত্বের কথা তুলে ধরে বলেন, এখন সব সাবজেক্টই বিজ্ঞান ভিত্তিক এবং সেটা ধীরে ধীরে চলেই আসছে। বিজ্ঞানের বাইরে কিছু না। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা আমরা বলছি। এরসঙ্গে তাল মেলাতে ছেলেমেয়েদের দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। কারণ প্রযুক্তিভিত্তিক শিল্প গড়ে ওঠা শুরু হয়েছে এবং সেটা আরও বিকশিত হবে।
তিনি বলেন, শ্রমঘন শিল্প না থাকলে কর্মসংস্থান থাকবে না। কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েদের শিক্ষা-দীক্ষায় দক্ষ করে কারিগরি শিক্ষা থেকে শুরু করে বিজ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষাগুলি যদি দিতে পারি, তাহলে আমাদের সমস্যা তো হবেই না। বরং আমরা অন্যকে সাহায্য করতে পারব। এ কারণে মাদ্রাসা শিক্ষাতেও অনার্স কোর্স চালু, প্রযুক্তি শিক্ষা ও কওমী মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারায় শিক্ষার মানের সঙ্গে একীভূত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন।