‘জয় বাংলা, সারাবাংলায় ছিল জয় বাংলা’
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:৩০
ঢাকা: ‘জয় বাংলা’ ছিলো আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলমন্ত্র। যে শ্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছেন, জীবন দিয়েছেন, শহীদ হয়েছেন। বাঙালির চেতনা, স্বাধীনতা, বাঙালির অহংকার, বিশ্বজয়, বাঙালির সুখে-দুঃখে আনন্দে, ভ্রাতৃত্বে জাগিয়ে তোলার স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা, সারাবাংলায় ছিল জয় বাংলা। জয় বাংলার ইতিহাস উৎপত্তি এমনভাবেই তুলে ধরলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা সংক্রান্ত মামলার শুনানিকালে বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এমনটি তুলে ধরেন তিনি।
ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, এরপর ভাষা আন্দোলন, ৬ দফার আন্দোলন অতপর স্বাধীকার আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জয় বাংলা শব্দটি বাঙালী জাতির অস্তিত্ব থেকে আলাদাভাবে চিন্তা করা যায় না। এটি বাঙালীর যুদ্ধ জয়ের মূলমন্ত্র। এসব বিবেচনাতেই ‘জয় বাংলা’ যাতে উচ্চারিত হয় সেই মর্মে নির্দেশ হওয়া প্রয়োজন।
পরে তিনি জয় বাংলা নিয়ে ৫২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন।
প্রতিবেদনের এক জায়গায় ১৯৭২ সালের ৫ এপ্রিল ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণের অংশ পাঠ করেন। যেখানে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ইনশাল্লাহ সোনার বাংলা আবার জাগবে, যদি শোষণহীন সমাজ গড়তে পারি। তবে আপনাদের সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন। আপনাদের কাছে আমার আরেকটা অনুরোধ হলো যে, দুর্নীতি ও ঘুষের বিরুদ্ধে আপনারা আন্দোলন করতে রাজি আছেন কিনা? খোদা হাফেজ-জয় বাংলা।
এ সময় আদালত বলেন, ‘ব্যাংক খালি হয়ে গেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা দেশের বাইরে চলে গেছে। এখন যদি বেসরকারি ব্যাংকের মত সরকারি ব্যাংক থেকেও টাকা চলে যায় তাহলে এই খাতে ধ্স নামবে।’
অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্যে করে হাইকোর্ট বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ এখন বেশি করে জনগণকে জানানো দরকার। সে জন্য ভাষণটি সকল স্থানে বেশি বেশি করে বাজানো দরকার। আদালত বলেন, আমানত সুরক্ষা আইন করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলে আমানতকারী ১০ কোটি টাকা রাখলে পাবেন মাত্র এক লাখ টাকা। এটি কি দুর্নীতিবাজদেরকে উৎসাহিত করতে করা হয়েছে?’
আদালত বলেন, ‘২০/২২জন ব্যক্তি যাদের কাছে সম্পদ রয়েছে তারা যদি দেউলিয়া হয়ে যায় তাহলে আর্থিক খাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।’
আদালত আরও বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংরক্ষণ করার নিয়ে ২০১০ সালে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। দশ বছর হয়ে গেলেও ওই রায় বাস্তবায়ন করা হয়নি। এখন স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকার পরেও যদি রায় বাস্তবায়ন না হয় তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় যদি ঐতিহাসিক এ রায় বাস্তবায়ন করা না হয়, তাহলে কে করবে।’
আদালত বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের কতভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু সরকারের নীতি বাস্তবায়নে উনাদের খুব একটা আগ্রহ দেখা যায় না। এটাই হলো আমাদের দেশের আমলাতন্ত্র।’
আদালতে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান করার বিষয়ে অভিমত দেন। এ সময় রিটকারী ড. বশির আহমেদও উপস্থিত ছিলেন। পরে আদালত অসমাপ্ত অবস্থায় মুলতবি করেন।
জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা চেয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. বশির আহমেদ হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। ওই রুলের শুনানি চলছে।