নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো এখন ১০ গ্রামের মানুষের মরণফাঁদ
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৯:০২
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের চৌহালি উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের রেহাইপুখুরিয়া-বিনানই সড়কের চর নাকালিয়া পূর্বপাড়া খালের ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকোটি সংস্কারের অভাবে অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। সাঁকোর অনেক বাঁশ-খুঁটিই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক স্থানের পচা বাঁশ খসে পড়েছে। সাঁকোতে উঠলে রীতিমতো সেটি কাঁপতে থাকে। ফলে যানবহন তো দূরের কথা, মানুষই চলাচল করতে পারে না এই সাঁকো দিয়ে।
এলাকাবাসী বলছেন, আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম এই সাঁকোটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ফলে বর্ষায় সেতুটির নিচ দিয়ে নৌকায় পার হতে হয়। আর শুকনো মৌসুমে পূর্বপাড়া খালের পানি শুকিয়ে গেলে পায়ে হেঁটে পার হতে হয়।
চর নাকালিয়া গ্রামের নূর আলম, রওশন আলী মাস্টার, আনোয়ার হোসেন ও জুলহাস মোল্লা জানান, পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কটির ওপরের সাঁকোটি প্রায় অচল হয়ে পড়ায় তারা মালামাল পরিবহন করতে পারেন না। জমি থেকে ফসল আনতে হয় মাথায় করে। এছাড়া নির্মাণ ও স্যানিটারি সামগ্রী পরিবহন কষ্টসাধ্য হওয়ায় অনেকের সামর্থ্য থাকলেও বাড়িতে ভালো ঘর তো দূরের কথা, ভালো স্যানিটারি ল্যাট্রিন পর্যন্ত তৈরি করতে পারেন না। ফলে আশপাশের গ্রামগুলোর বেশিরভাগ পায়খানাই কাঁচা। এতে করে এলাকার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে রয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, যাতায়াতের জন্য বিকল্প কোনো উপযুক্ত পথ না থাকায় চর নাকালিয়াসহ আশপাশের অন্তত ১০টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষকে চরম কষ্ট পোহাতে হয়। এ অবস্থায় এই সাঁকোর জায়গায় একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণ জরুরি হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে দাবি জানিয়ে এলেও তাদের সে দাবি আলোর মুখ দেখেনি।
জানতে চাইলে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আব্দুস সাত্তার সারাবাংলাকে বলেন, এ খালের ওপর বাঁশের সাঁকোটি ২০১৮ সালের বর্ষায় নির্মাণ করা হয়। এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সংস্কার করা হয়নি। ফলে সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে গেছে। এখন আর এ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করা যায় না। এখানে একটি কংক্রিটের সেতু না থাকায় এলাকাবাসীকে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই এই সাঁকোর জায়গায় জরুরিভিত্তিতে একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার বলেও কোনো কাজ হয়নি।
বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কাহ্হার সিদ্দিকীও বলেন, এখানে একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। কিন্তু খালটির প্রস্থ বেশি হওয়ায় সেতু নির্মাণের অনুমোদন পেতে দেরি হচ্ছে। তবে আশা করছি এ বছরের মধ্যেই সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে।
এ বিষয়ে চৌহালি উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই জায়গায় সেতু নির্মাণের বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রয়েছে। কিন্তু সেতু বাবদ বরাদ্দ না থাকায় সেতুটি নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তারপরও একটি প্রস্তাব পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা। প্রস্তাবটি পাস হলেই ওই সাঁকোর জায়গায় সেতু নির্মাণ করা হবে।
একই রকম আশ্বাস দিলেন চৌহালির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান মওদুদ আহাম্মেদও। তিনি বলেন, ওখানে অচিরেই একটি কংক্রিট সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চলছে।