সাগর-রুনি হত্যায় ২ অপরিচিত পুরুষ জড়িত: অগ্রগতি প্রতিবেদনে র্যাব
২ মার্চ ২০২০ ১৯:০৮
ঢাকা: সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন নাহার রুনি হত্যায় দুই অপরিচিত পুরুষ ব্যক্তি জড়িত ছিল বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। সাগর ও রুনির পোশাকে তাদের ডিএনএ পাওয়া গেছে। তবে ডিএনএ প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি।
আলোচিত এই হত্যা মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদনে র্যাব এসব তথ্য জানিয়েছে। র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সোমবার (২ মার্চ) বিকেলে প্রতিবেদনটি অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের কোনো কর্মকর্তা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মামলার অন্যতম আসামি তানভির রহমানের আচরণ রহস্যজনক বলে উল্লেখ করা হয়েছে অগ্রগতি প্রতিবেদনে। এই মামলায় তাকে বিচারিক আদালতে ব্যাক্তিগত হাজিরা থেকে রেহাই দেওয়া যুক্তিযুক্ত হয়নি।
আরও পড়ুন- সাগর-রুনি হত্যার ৮ বছর, ৭১ বারেও ফিরে গেল তদন্ত প্রতিবেদন
এর আগে, গত ১৪ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে ৪ মার্চ বা তার আগে এ মামলার তদন্তের সর্বশেষ অবস্থা জানাতে এবং সাগর-রুনি হত্যা মামলায় আটক আসামি তানভিরের জড়িত থাকার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন হলফনামাসহ দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ এ প্রতিবেদন দাখিল করেছে র্যাব।
আদালতে ওই দিন তানভিরের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।
এ মামলায় সন্দেহভাজন আসামি মো. তানভির রহমানের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেন এবং গত ৬ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন। পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাবের অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার শফিকুল আলম হাইকোর্টে হাজির হলে মামলার তদন্ত প্রতিবেদনের অগ্রগতি সম্পর্কে জানান।
আরও পড়ুন- ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। পরের দিন ভোরে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।
ওই ঘটনায় রুনির ভাই বাদী হয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরেবাংলা নগর থানার একজন উপপরিদর্শক (এসআই)। পরে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তের ভার দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু হত্যার আট বছর পেরিয়ে গেলেও প্রতিবেদন জমা পড়েনি আদালতে।
আরও পড়ুন- সাগর-রুনি হত্যা মামলা কি চাঞ্চল্যকর থেকে যাবে, প্রশ্ন হাইকোর্টের
এই মামলায় ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি, ওই বছরের ৭ জুন, ২০১৬ সালের ২ অক্টোবর ও সর্বশেষ ২০১৭ বছরের ২১ মার্চ তদন্তে অগ্রগতি হচ্ছে বলে আদালতের কাছে সময় চান তদন্ত কর্মকর্তা। যদিও এসব অগ্রগতি সংক্রান্ত প্রতিটি প্রতিবেদনে প্রায় একই ধরনের তথ্য ছিল।
এ মামলায় রুনির বন্ধু তানভির রহমানসহ মোট আসামি আট জন। অন্য আসামিরা হলেন— বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল ও আবু সাঈদ। আসামিদের প্রত্যেককেই একাধিকবার রিমান্ডে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে তাদের কেউই আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেননি। এ পর্যন্ত এ মামলার তদন্তে ১৫৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে র্যাব।