বাংলাদেশকে আগামী দুই বছরে নতুনভাবে চিনবে বিশ্ব: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
৪ মার্চ ২০২০ ২১:৪৭
ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী (চলতি বছরের ১৭ মার্চ থেকে পরবর্তী বছরের ১৬ মার্চ) এবং আগামী বছরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি, এই দুই বছরে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে নতুনভাবে তুলে ধরা হবে। যেখানে বাংলাদেশ একটি দৃঢ় অর্থনীতির শান্তির দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী কূটনীতি: গত একদশকে বৈশ্বিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সরব উপস্থিতি’ শীর্ষক সেমিনারে বুধবার (৪ মার্চ) প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন। ঢাকার কর্মরত কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ‘ডিকাব’ এর আয়োজনে সেমিনারটি জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারটিতে প্রধান বক্তা ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব মো. মাসুদ বিন মোমেন। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন, সাবেক রাষ্ট্রদূত মো ওয়ালিউ রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখতে হবে, চীন আমাদের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় সহায়ক, ভারত আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু রাষ্ট্র, অন্য মুসলমান দেশগুলো থেকেও বিভিন্ন সময়ে একাধিক সহায়তা পেয়ে থাকি, এই সবকিছু মিলিয়েই পররাষ্ট্র নীতিতে ভারসাম্য বজায় রেখে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নত বিশ্বের পথে এগিয়ে চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পররাষ্ট্রে বিনিয়োগ, রফতানি, রফতানি পরিধি বাড়ানো, দক্ষ জনশক্তি এবং জনকূটনীতিতে জোর দিচ্ছি, যাতে সোনার বাংলা গড়ার পথ মসৃণ হয়। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ এলডিসি (স্বল্পোন্নদেশ) রাষ্ট্রের কাঠামো থেকে বেরিয়ে যাবে, তখন যাতে বাংলাদেশ এখনকার মত বিদ্যমান বৈশ্বিক সুযোগ সুবিধা পায়, সেজন্য আমরা এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আমরা গণতান্ত্রিক কাঠামোতে নির্বাচিত একটি সরকার। সে জন্য আমাদেরকে জনগণের কাছে জবাবদিহী করতে হয়। তাই আমরা প্রতিবেশি দেশগুলোর কাছে আহবান জানাই যে আমাদের জনগণের বিপক্ষে যায়, এমন কিছু করবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামনের দুই বছর (চলমান বছরসহ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য স্বর্ণ যুগ। চলতি বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং আগামী বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি। এই দুই বছরে আমরা বাংলাদেশকে নতুনভাবে ব্রান্ডিং করতে চাই। যাতে দরিদ্র-ক্লিষ্ট বাংলাদেশের বিপরীতে বিশ্বে কর্মঠ, চৌকশ এবং অর্থনীতির একটি ভালো রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পায়। এ জন্য আমরা প্রচুর কাজ করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে বেসরকারিভাবে বিশ্বের ৩৩টি দেশে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যারা বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের মানুষে মানুষে সংযোগ ঘটাতে সহায়তা করবে এবং বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক পরিচিতি সৃষ্টি হবে।’
প্রধান বক্তার বক্তব্যে পররাষ্ট্র সচিব মো. মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘সুষম ভারসাম্য বজায় রেখে দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উভয়ক্ষেত্রেই আমাদের কূটনীতি সমানভাবে এগিয়ে চলেছে। প্রয়োজন অনুসারে কোথাও দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির মাধ্যমে কখনো বহুপাক্ষিক কূটনীতির প্রয়োগে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষন করে বিশ্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা হচ্ছে।’
‘প্রতিবেশীদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক এবং উপআঞ্চলিক সম্পর্কোন্নয়নে বাংলাদেশ বরাবরই সচেষ্ট’, উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘প্রতিবেশীদের সঙ্গে অমিমাংসীত বিষয়গুলো আন্তরিক পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি হচ্ছে। সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে প্রয়োজন হলে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বহুপাক্ষিক বিচার ব্যবস্থারও দ্বারস্থ হচ্ছি। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সবসময় একটা আদর্শ প্রতিবেশীর ভূমিকা পালনে দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করছে। বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উচ্চতর মাত্রায় পৌঁছেছে।’
তিনি আরও বলেন, “উন্নয়নের পথে প্রতিকুলতা যেমন জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়নের অর্থায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম বৈশ্বিক ধরনের এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের যোগাড় সকলে মিলে বিশেষ করে উন্নত ধনী রাষ্ট্রগুলোর করা উচিত। কিন্তু সবসময় এটি হয় না এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার নিজস্ব তহবিল তৈরি করেই এসব কাজ সম্পন্ন করে থাকে। আমাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের আত্মসম্মান বোধের বিষয়টি যথেষ্ট নাড়া দিয়েছে। এলডিসি গ্রুপ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের যে আপ্রাণ চেষ্টা তা তারই প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রীর ‘আমরা পারি’ এই মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ এবং তার সুস্পষ্ট প্রনোদনায় আজ বাংলাদেশ অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র এর প্রকৃষ্ট উদাহরন। আমরা দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা হিসেবে ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ হাতে নিয়েছি। আমাদের একই অবস্থানে থেকে বিশ্বের অনেক দেশ এইসব বিষয়ে এখনো চিন্তাও করেনি। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের এই অগ্রগামিতা আমাদেরকে কূটনৈতিকজগতে আরও শক্ত ও সুদৃঢ় হতে সহায়তা করেছে।”
জন্মশতবার্ষিকী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন